সবচেয়ে অবহেলার মানুষটির নাম বাবা,,
সবচেয়ে আলোচিত অন্তরালের মানুষটির নাম বাবা,,
সবচেয়ে বেশি তীরের উপর শুয়ে থাকতে পারা
প্রাণটির নামও বাবা,,
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মেনে নেওয়ার
উর্বর জীবনটার নাম বাবা।
তাইতো নিজ ঠোটে গড়া নীড়ের
পাশের ডালে বসে বসে
সময়ের পর সময় পার করা
বাবা পাখিটা দেখে মনে হয়,,,
যারা বাবা হয়,,,তাদের আর কিছু না হোক
অন্তত পায়ের নিচের মাটির মত,, সহন শীল হতে হয়।
রাতে,দিনে,,,সমতলে,,সুন্দরবনে,,যেকোন সময়ে
মানানশীল হতে হয়।।
মেনে নিতে হয় সকল দুঃখ কষ্ট,, যাতনা,গ্লানি, অপমান।
নিজের ক্ষুধাকে ছোট করে
বড় করে দেখতে হয় অপরের ক্ষুধা।
নিজের আবেগকে জলে ভাসিয়ে,,
অন্যের আবেগকে টেনে তুলতে হয় পাড়ে,,


বাবা হতে হলে,,নিজের গোপন আকাশের
গোপন তারাকে,,খসিয়ে ফেলতে হয় পাতালে,,
তারপর সেই খসে যাওয়া তারা হতে
জল বের করে করে সেচ দিতে হয়
নবীন নবীন কচি তারার মূলে।
তা না হলে বাবা হওয়া কেবলি যে মুখের কথা,,
কেবলি এক প্রলাপ,,না হয় ভন্ডামি
না হয় প্রতারণা,, না হয় অসভ্য শয়তানি।।


কিন্তু যাদের আত্মা হতে হৃদয়
বাবা হয়ে আছে,,,প্রকৃতির নিয়ম বার্তায়,,
বাবা হয়ে আছে পুকুরের জলে ভাসা
ওই রাজহংসের মত রাজহংসী আর শাবকের পাশে।
তাদের বাড়ির লতা পাতার আড়ালে
ইচ্ছে করেই লুকিয়ে থাকে বড় কোন গাছ,,।
লুকানো কোন দৈব ইশারায়,, উঠানের আয়তনে
গবাদি পশুর বাচ্চাটাও থাকে চঞ্চল,, থাকে নিরাপদ,,,
থাকে নানান ক্ষুধায়,,নানান ভাবে কাতর।


কিন্তু বাবাদের,,ক্ষুধা লাগে না কোনকালেই
ঘুমও যে আসে,, তাও কিন্তু নয়।
ক্লান্তিটাও কবেইযে বিদায় নিয়ে নেয়
তা বাবাই জানে না আপন গুনের আপন জ্ঞানে।।
জানে শুধু কীভাবে কালোকে বানাতে হবে আলো
বিপথকে বানাতে হবে ঐরাবত পথ,,
মরুভূমিকে বানাতে হবে সবুজের উল্লাসী বন!!
কীভাবে হাড়িকেনের চঞ্চল আলোকে,,বন্দী করে
রাখতে হবে ঝকঝকে সৌম্য রুপালী।,,
কীভাবে ঘুড়ির পেছনে লেজ হয়ে
রাখতে হবে ঘুড়ির ভারসাম্য,,
কীভাবে চন্দ্রধরের ডিঙ্গার কান্ডারী হয়ে
বাঁচিয়ে দিতে হবে প্রায় ডুবু ডুবু ডিঙ্গা।
বাবারা জানে,, হ্যা হ্যা ভালো করেই জানে
কতটুকু জ্বলতে হবে,, হাড়ির নিচে কয়লার সাথে।
বাবারা জানে কীভাবে পুঁড়তে হবে রোদে
ছাদের সাথে মিলে মিশে,
বাবারা জানে কীভাবে কাদা পথে শুয়ে
থাকতে হবে পাথর হয়ে,,স্বর্গ স্পর্শের জন্য।
বাবারা জানে কীভাবে ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা দেয়ালে,,
আলোর ঠিকানা হয়ে ঝুলতে হবে,,দিবসের জন্য।।


আর তাই বাবাদের শরীর হতে ঘাম ঝরে,,আনন্দ নামে
বাবাদের চোখ হতে অশ্রু যায় শুকিয়ে,,কর্তব্য গুনে
বাবাদের রক্ত কনায় কনায় প্রতিজ্ঞা খেলে,,
প্রতিপালন নামে।
বাবাদের অন্তর অন্তরে মন্দির সাজে,,,
সন্তানের আশ্রয় নামে।
বাবাদের চোখে চোখে প্রহরী বসে,,রক্ষার নামে
বাবাদের বুকে বুকে,,হাসপাতাল দাঁড়ায়,,মমতার নামে
বাবাদের চিন্তায় চিন্তায় বিশ্বকর্মা বসে,,ভবিষ্যৎ  নামে।।
কিন্তু ভবিষ্যতের নেশায় নেশায়
কবেই যে নিজের বর্তমান হারিয়ে ফেলে বাবা,,
নানান অবজ্ঞা আর,নানান অবহেলায়।
হারিয়ে ফেলে অন্ত অনুভুতি,হারিয়ে ফেলে চাওয়া
হারিয়ে ফেলে আপন জগতে আপনারে
আপনার মত করে পাওয়া!!


হারাতে হারাতে হারানোর অভ্যাসে হরিশ্চন্দ্র হাতে
তবু বাবাদের ঘুরে বেড়াতে হয়,শনি হতে মঙ্গল গ্রহে,,
ঘুরে বেড়াতে হয়,,শ্মশানে,নালায়,ভয়ংকর জঙ্গলে
ঘুরে বেড়াতে হয় স্বপ্ন,আশা,ভরসার নানান ভাজে ভাজে।
বেড়াতে বেড়াতে কবেই যে হারিয়ে যায় বাবা
হারিয়ে যায়,,সম্মুখের চিত্র হতে।
যতটা ছায়ার মত লেগে থাকে পিছে,,
ঠিক ততটা থাকে না চোখের  সম্মুখে,,।
যতনা ফল হয়ে ঝুলে ফলের রংয়ে রংয়ে
তার চেয়ে বেশি লুকিয়ে থাকে মাটির রসে রসে।
গোপনে থেকে ঈশ্বরের মত
কেবল দিয়ে যায় বাস্তব আশীর্বাদ।
কেবল আশীর্বাদ।।
আর তাইতো,অদম্য সাহসে ভালবাসায় বলি
বাবা,একটা জামা কিনব,, টাকা দাও,,
বাবা কাল বেড়াতে যাব পশ্চিমে, পূর্বে,,পয়সা দাও
বাবা একটা সাইকেল কিনব,,
তোমার পকেটের সর্বস্ব দাও।
বাবা স্কুলের বেতন,,বাবা শিক্ষকের টাকা
বাবা রেস্টুরেন্ট যাব,,বাবা একটা দামী ঘড়ি কিনব
বাবা,,পার্লারে যাব,,।বাব মায়ের শাড়ি কিনব।
বাবা টিভিটা নষ্ট হয়ে গেছে,,ঠিক করে আনো,,
বাবা রান্নার সবজি নেই,,বাজারে যাও,,
বাবা বিদেশে পড়তে যাব,,ম্যানেজ করে দাও।
বাবা বাবুকে নিয়ে স্কুলে যাও,,
বাবা মন্টিকে কলেজ থেকে নিয়ে আসো,,,
তুমি এত খারাপ কেন বাবা,,?
বাবা তুমি খুব পাষাণ কেন?
মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মুক্তি পেয়ে যাও বুঝি?
মাসে একবার এসে দেখে যেতে পার না?
নাকি এখনো তুমি বাইর মুখী,,ঘরেই থাক না,,
ঘর তোমার পছন্দই হয় না,,
ঘরের সারা দায়িত্ব রেখে দাও,মায়ের উপরে?


বাবারা ঘরে থাকে না,,থাকতে পারে না,,
বাবাদেরকে পাহাড় ভাঙ্গতে হয়,ঘর সমতল রাখার জন্য
বাবাদেরকে সাগর পাড়ি দিতে হয়,,
ঘরের কলসীতে জল রাখার জন্য,,
বাবাদেরকে লোহা খেতে হয়,,
ঘরের হাড়িতে অন্নের যোগানের জন্য,,
বাবাদের গুহায় গুহায় কাটাতে হয় দিবস
ঘরের বাতিতে আলো জ্বালানোর জন্য,,।
সকাল হতে বিকাল,,বিকাল হতে রাত,,
বাবাদের বাস, ট্রাকের মত চলতে হয়
ঘরের ম্যারাথন চলন,,ঠিক রাখার জন্য
বাবাদের রাতের তারা গুনতে হয়
অনাগত দিবসের তারা  নিরাপদ রাখার জন্য।


বাবাদের এমন রূপের এমন স্রোতে সিক্ত হয়ে
তাই বলছি,,,জগতের সকল সন্তানের সুরে সুরে।
বাবা আরে ও বাবা,,বাবা,,,ও বাবা,,
সন্তানের হাত ধরে,,দেখছি আজ তোমায়
তোমারই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে,,।
দেখছি বাবা,তুমি কাঁদছ , বুক ভাসিয়ে।
তুমি অনাহারে আছ,,বহুদিন ধরে,,
তুমি অসহায় হয়ে আছে,,অন্তরালে
তুমি একা হয়ে আছ,,,আমাদের ভীরে
তুমি বোবা হয়ে আছ,,নিজের দরবারে,,
তুমি দুঃখী হয়ে আছ,,আমাদের সুখের ঝংকারে
তুমি আহত হয়ে আছ,,আমাদের নানান তীরে।।


আসো বাবা আসো,,,এই সন্তানের কাছে,,,
মুখের উপরের চাদর সরায়ে, উন্মুক্ত আননে
অপরাধীর হাতে তোমার চরণ ধরে বাবা
শিখে নেই,,বাবা হওয়ার সনাতনী শিক্ষা,,
তোমারই লুকানো জগৎ হতে!!
শিখতে কী পারব বাবা,,,
শিখাতে কী পারবে আমায়
সময়ের এই ভয়াল,,
একলা থাকার,,একলা চলার স্রোতে?


###############
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৩/০৬/২১