কর্ম
--------রুবেল চন্দ্র দাস


কর্ম কবে,, কবে তুমি মালিকের ওই
লৌহ ফুলের লৌহ অভিসার ছেড়ে
চলে আসবে শ্রমিকের ছোট্ট কুড়ে ঘরে,,?
প্রেমতো তুমি শ্রমিকের ঘামেই কর নিরন্তর
চুমুও তো তুমি শ্রমিকের ঠোটেই খাও
অগ্নিঝরা দিনে কিবা রাত্রির বাদলে।
তবু কোথায় যেন তুমি বড় অচেনা হয়ে
বিরাজ কর শ্রমিকের হস্ত সীমানার বাইরে,,।
কোথাও যেন তুমি বড় বেসামাল
লুকোচুরি খেলা খেলে যাও
মজুরের সম্মুখে,,কেন কর্ম,,কেন?
তুমি কি সোফায় বসে টিভি দেখে দেখে
কফি খাওয়া লোকের অঙ্গুলিতেই বাসর করতে চাও?  
তুমি কি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েই
সুগন্ধি ঘ্রান উড়াতে চাও হাওয়াতে,,,
তুমি কি পোশাক পরা বাবুর
পোশাকি আলিঙ্গনেই হয়ে যেতে চাও দিশেহারা?
তুমি নিদ্রায় কাতর মহাজনের পালঙ্ক সুখেই
থেকে যেতে চাও,,কাল হতে মহাকাল।
তুমি কি অঙ্গুলিওয়ালাদের অঙ্গুলি উপরেই
করতে চাও আজন্ম বসবাস,,,


কর্ম সত্যি করে বল,,,আজঅবধি
কয়জন শ্রমিকের হয়েছে আপন
কয়জন শ্রমিক নিয়েই করেছে ঘর সংসার!
কয়জন শ্রমিকের ঘরের চুলায় করেছ রন্ধন,,
কয়জন শ্রমিকের পাশে বসে বুঝেছ ক্রন্দন,,
কভু কি দেখেছ রক্ত কেমনে বের হয় কামারের হাত হতে?
একবারও কি জানতে চেয়েছ,,,
ঘামের কেমন ওজন হয় কৃষকের গায়ে,,,
জানতে কি চেয়েছ ওই গার্মেন্টসে পড়ে থাকা
তোমার প্রেমের প্রেয়সী কিবা প্রিয়র কাছে,,,
বিনিদ্র রাত কেমন হয়,,, যন্ত্রপাতির শহরে?
কোনদিন কি জিজ্ঞেস করেছ,,,
ওই ছোট্ট বালক কিবা বালিকাকে,,
যারা গৃহকর্ত্রী খন্তি কুড়ালের গরম গরম ছ্যাকা খেয়ে
মৃত্যুরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে তোমারেই ভালবেসে।
কেমন আছে তারা,,কেমনে মরছে তারা
জীবন নামের জেলখানার বন্দরে,,,?
জিজ্ঞাসা কর নিতো,,কেনই বা করবে?
কি দরকারইবা জানার
সুখ,দুঃখ আর কষ্টের পাঁচালি
ওই চা শ্রমিকে চোখের জলে,,,চোখ মিশিয়ে?
কত চা পাতা পাহাড়ের গর্তেই যায় হারিয়ে
কত চা পাতা চাপা পড়ে যায়,, চায়েরই গাছের নিচে
সেখানে আবার চা শ্রমিক!!
তার আবার চোখ,,তার আবার জল!!
তাই কি দরকার,,চায়ের দোকানের ওই পিচ্ছিটারও
বুকের ভেতরের আর্তনাদ বুকে বুকে অনুভব করার?
অফিসের অসহায় কর্মচারীরা পকেটের ভেতর
শুকনা শুকনা জীবনে মরে যাক
অফিসের নির্জন গুহায়,,!
তাতে তোমার কি এসে যায়?
সুন্দরী মেয়েটার শ্রমের চেয়ে দেহের লোভে
বসে যাক শকুন সভা,,
তাতে তোমার কেন হবে মাথা ব্যথা?
কত নারী বেশ্যা হয় টাকার জন্য,,,
সে না হল কর্মের জন্য,,তাতে দোষ কিসের,,!!! তাই না?
কর্ম এই দুনিয়ায় সবাই সুখী হতে চায়
সবাই সুখী হতে চায় সুখের সংস্পর্শে।
দুঃখের স্পর্শে  সুখী হওয়ার গল্প
কে বা লিখতে চায় জীবনের খাতায়!
দুঃখীর বন্ধু হওয়ার চেয়ে
সুখীর গোলাম হওয়া যে অনেকের কাছে
অনেক অনেক পুণ্যের
অনেক অনেক গৌরবের,,,।


আর তাই তুমি হয়ে আছ,,শুধু কর্ম,
শুধু কাজ,শুধু জব,শুধু নকরি,শুধু কাম,শুধু মজদুরি,,
তোমার এমন পরিচয়ের ঈশ্বরের ইচ্ছেতে
কেবল মুখোশ পরে আছ,,,নানান ঢঙে,,নানান ভঙে।
তোমার গায়ে মুকুট পড়িয়ে,,সুগন্ধি আতর মাখিয়ে
লাগাম পরিয়ে রেখে দিয়েছে যে ব্রাহ্মণ সমাজ,,,
তাদের সাথেই তোমার চলছে,স্বার্থে স্বার্থে পিরিত,,।  
তাদের সাথেই তোমার গর্ভ গর্ভ খেলা,,,
তাদের সাথেই তোমার সুখ সুখ মেলা,,
তাদের কাছেই তুমি গোলাম,,
তুমি কুকুরের চেয়েও কুকুর,,,ভবের কোনে কোনে।
তাই তাদের কাছেই অবলীলায় বিক্রি করে দাও
তোমাকে চুমু খাওয়া সেই প্রেমিকের চুমু
তাদের বিছানায় বিছানা করে দাও
তোমার সেই প্রেমিকার পবিত্র বিছানাকে,,,
যে এখনো রোজ তোমাকে পূজন করে
দেবতার আসনে,,শ্রমে আর ঘামে,,।


কেন কর্ম,,কেন?কেন তুমি করে যাচ্ছ এমন?
তুমি কি পাহাড়ের চুড়া ভেঙ্গে নেমে যেতে পার না
ঝর্ণা ধরে নদীর পথে পথে,,,?
তুমি কি সওদাগরের সিন্দুকের তালা ভেঙ্গে
মিশে যেতে পার না,,,মাঝি মাল্লার হাতে হাতে।
তুমি কি ব্যবসায়ীর গোপন রঙ্গখানা হতে
উন্মাদের মত বের হয়ে,
বুকে বুক রাখত পারো না,,কর্মচারীর গুপ্ত রোদনে?
তুমি কি চাবি হয়ে তালার বুকে ঢুকেই
চিনতে পার না,,, তোমাকেই?
কে তুমি? কি পরিচয় তোমার,, এই সংসারে?
কে বাঁচায়ে রাখে,, তোমারে আদরে আদরে?
ও কর্ম শুন,,,,,শুননা,,মন দিয়ে শুন
যে হাতে জন্ম তোমার,, যে হাতে বাঁচন তোমার
যে হাতে বর্ধন তোমার,যে হাতে স্বর্গ প্রাপ্তি তোমার
যে হাতে জীবন তোমারে করে নিয়েছে জীবনের
সে হাতরে দিয়ে অবহেলার ঘের
হয়ে যেও না দাসী কর্ম,, হয়ে যেন না দাসী
স্বর্গের ঐ সকল প্রভুমন্য ইন্দ্রদেবের।


শ্রমের দরে স্বর্গ গড়ে কর্ম
স্বর্গেই না হয় থাকিও,,হয়ে শ্রমিকের।
স্বর্গেই থাকিও,, সখা হয়ে
সকল শ্রমিকের
থাকবেত কর্ম,,,সখা হয়ে
সকল শ্রমিকের?