সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, মনে পড়ছে?
সেই যে আমি উসস্কো-খুস্কো আউল বাউল একমাথা চুল,
সেই যে আমি রক্তচুক্ষ, দুই চোখে দুই রক্তজবা
                                               মনে পড়ছে?
সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, তোমার স্মৃতিবন্ধের উপর
দাঁড়িয়েছিলাম, মনে পড়ছে? সকাল, তোমার মনে পড়ছে?


সেই যে আমি মিছিল জুড়ে মত্ত আওয়াজ
মারমুখো এক রক্ত যুবক, রক্তপাতের স্বপ্ন মাথায়
সেই যে আমি মিছিল-ক্লান্ত একলা মানুষ
সেই যে আমি স্বপ্নে ভীষন রক্ত দেখি, টকটকে লাল রক্ত দেখি
সেই যে আমি রাত্রে চোখে ঘুম আসে না
চোখ চুজলেই মিছিল দেখি, বুলেটবিদ্ধ মানুষ দেখি
সেই যে আমি একটুখানি স্নেহের কাঙাল, মনে পড়ছে?


সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়েছিলাম
মনে পড়ছে? সকাল, তোমার মনে পড়ছে?


তখন আমার মুঠোয় তাজা আগ্নেয়াস্ত্র
সমতার এক মন্ত্র আমার বুকের ভেতর
কিন্তু আমি দাঁড়িয়ছিলাম, দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়েছিলাম ।
কারন আমি পথ চিনি না, হত্যাযোগ্য লোক চিনি না,
কেন আমি ভুল মানুষের খুনে আামার হাত রাঙাবো!


মনে পড়ছে সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম
একটি ভাঙা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়েছিলাম দ্বিধাগ্রস্ত...


সেই যে আমি একটি শাদা ফুলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম
সেই যে আমি একটা নোতুন বাড়ির খোঁজে বেরিয়েছিলাম
সেই যে আমি
পরান- জোড়া ভালোবাসার স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়েছিলাম
মনে পড়ছে, সকাল তোমার মনে পড়ছে?


আমার সহযাত্রীরা কেউ শিকারে খুব না করেছে
কেউবা অন্ধকারের থাতায় লিখেছে তার মূল ঠিকানা।
সেই যে আমি আলোর খোঁজে বেরিয়েছিলাম,
আমার চতুর্পাশ্বে আলো আমি ভীষন অন্ধকারে।


আামার চর্তুপাশ্বে আলো, ভিন্ন আলো--
আলো জ্বলছে, অন্ধকারে ফুল ফুটছে। আলো জ্বলছে,
ব্যক্তিগত বাড়ি উঠছে। আলো জ্বলছে, ভিন্ন আলো।
কিন্তু আমি দাঁড়িয়েছিলাম, দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়েছিলাম
                                            দাঁড়িয়ে আছি।


আমার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র-
                 হত্যাযোগ্য লোক চিনি না।
আমার বুকে অগ্নিমন্ত্র-
                 শিকারে এই হাত ওঠে না।
সেই যে ভাঙা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়েছিলাম দ্বিধাগ্রস্ত
দাঁড়িয়ে আছি
              দাঁড়িয়ে আছি
                             দাঁড়িয়ে আছি...


২০/০৫/১৯৮১
মিঠেখালি, মোংলা।