আমাকে দেখতে কী খুবই অস্বাভাবিক লাগছে?
চিনতে অনেক কষ্ট হচ্ছে? মানুষ মনে হচ্ছে না?
কেউ কেউ বাজারে যাচ্ছে, রাস্তায় সিগারেট ফুঁকছে
কেউ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে, কেউবা সমুদ্র, নারী
আমার শিরদাঁড়া বেদনার সুতীব্র চুম্বনে ভেঙে ছিটকে
বোতলের মতো পথে পড়ে আছে বলে চিনতে কষ্ট হচ্ছে-
চোখের নিচে ক্রিসেন্ট লেকের মতো ডার্ক সার্কল দেখে
তুমি আমাকে একটি জন্তু ভেবে ঢুকে গেলে মধ্যরাতে?
এক তরুণী সিনেমা দেখে কেঁদে ওঠলো রাত দশটায়
ছানার মুখ দেখে পরম তৃপ্তিতে ডানা ঝাপটাচ্ছে মুরগি
বহুদিন পর এক রূপসীকে দেখে স্বমেহনে ফিরলো বৃদ্ধ
আমিও একদিন তোমাকে দেখতে দেখতে মেঘের স্তন
থেকে ঝলসে পড়া সুন্দরে দগ্ধ অব্যর্থ রেটিনা নিয়ে
শুয়ে আছি তের মাইল দীর্ঘ এক অজ্ঞাত কষ্টের মতো-
তাই এত কষ্ট হচ্ছে আমাকে চিনতে? এত অভিনয়?
মানুষের স্বাভাবিক আকৃতি হারিয়ে পৃথিবীর স্তব্ধ
কুঁজ পিঠে নিয়ে ঘুরেছি বলে আমাকে ভুলে গেলে?
দুহাতে স্বপ্ন ছিটিয়ে ছিটিয়ে তুমি চলে যাচ্ছো সবুজ হ্রদে
দামি পোশাক পড়ে একদল তরুণ যাচ্ছে মৌখিক বোর্ডে
বুকে সাহস নিয়ে কৃষক তবুও বুনে যায় সভ্যতার আহার
তোমার উপেক্ষায় আর অবেহেলায় আর তাচ্ছিল্যে আমার ২০৬টি হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গজিয়েছে ১১৫৩টি-
তাই এই নতুন কাঠামোতে আমাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে?
চিরদিন চেয়েছি দুহাত ভরে পান করবো তোমার হাসি
চুল থেকে ঝরে পড়া ঘ্রাণ মুঠোয় ভরে রাখবো হৃদয়ে
তোমার দেহের বাঁকে বাঁকে আপেল কমলা লিচুর স্বাদে
আর সৌরভে পুষ্ট হবে আমার শীর্ণ শরীর আর মন-
এক ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখেছিল রোগ সাড়াতে
হলে তিনবেলা নিয়মিত সুন্দর ও স্নিগ্ধতা খেতে হবে?
অথচ এক অলৌকিক রসায়নে তুমি আমাকে বানালে
মানুষ থেকে অমানুষ
বোধ থেকে পাথর
স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক
প্রেমিক থেকে অপ্রেমিক
পূর্ণ থেকে শূন্য
অনন্ত নরক ওষ্ঠে পিঠে পাঁজরে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে
পেরিয়ে চলছি কষ্টের কষ্টভরা প্রান্তর।