ইদানীং আমরা সবাই কেমন আছি কীরকম আছি
তা জানার মতো কারোরই আজ আর তেমন সময় নেই,
কোনোদিন তেমন সময় হবেও না এও জেনে গিয়েছি!
মানব নিয়তি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে টেনে দেয় যতি যার অনন্ত চক্রে আমরা হাঁটছি, দৌড়াচ্ছি
এবং বন্ধুরা, আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।
ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি ব্যক্তিগত অন্তর্লোকে, খুবই সন্তর্পণে
আমাদের ধ্রুবতম সংসারে এখন ব্যস্ত, কেউবা ক্লান্ত
কেউবা সুখের তরীতে চড়ে পৌঁছে যাবে অস্তরাগে (মূলত অনন্ত কুহেলিকায়)।
হঠাৎ একদিন দেখবো শরীরের চামড়া গিয়েছে কুঁচকে, চুলগুলো
প্রায় সব গিয়েছে পেকে, দাঁত দিয়ে আর মাংস চিবোতে
পারছি না
সিঁড়ি ভাঙতে পারছি না, তেমন গতিতে হাঁটতে পারছি না
রাতে আর তেমন ঘুম হচ্ছে না, হৃৎপিণ্ডে জমবে অনেক মিউকাস।
ব্যক্তিগত বৃত্তে, সময়ের জালে জড়িয়ে পড়বো আমরা
অথচ এইতো বছর খানেক আগে আমাদের রোজ দেখা হতো
ক্যাফেটেরিয়ায়, ক্লাসে, হলে; কথা হতো রোজ মুঠোফোনে
কষ্ট পেলে কষ্ট ভাগাভাগি হতো, আনন্দ কিংবা হাসিও
অথচ কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন কারোর সাথেই কথা হয় না
দেখা হয় না, বলা হয় না কেমন আছিস কী করিস ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা, বন্ধুরা, আমাদের ছায়া থেকেও দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছি
দীর্ঘ শীতে আমাদের জীবনে নেমেছে অনন্ত বরফ-
মনে পড়ে এই তো সেদিন একসাথে বৈশাখ কাটাতেম
কখনও তারুণ্যে শীতের সারারাত হেঁটে বেড়াতেম
হল্লা করতেম রাজপথে, গান আর কবিতার মতো ছিলো আমাদের জীবন।
এখন আমাদের জীবনে নেমেছে সুদীর্ঘ ক্লান্তির শিশির
বড্ড হাঁপিয়ে ওঠি, পালাতে গিয়ে দেখি দ্বায়িত্বের শেকল
মোহের শেকল আমাদের চামড়ায়, আমাদের স্নায়ুতে।
আমাদের সন্তানদের মাঝে হয়তো দেখবো আমাদের ফেলে-আসা
হয়তো মনে পড়ে যাবে আমাদের কথা, গল্পের কথা
দীর্ঘ একটা দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠবে বক্ষ, স্মৃতির বৃক্ষ
নাড়িয়ে নাড়িয়ে পাতাগুলো ঝরে গেলে একদিন-
এরই মাঝে আমাদের কেউ কেউ চলে যাবে স্মৃতি হতে
মৃত্যু এসে ধীরে ধীরে সাজাবে পৃথিবীর চিরন্তন বাগান।