এই কবিতাটি আমি কুড়িয়ে পেয়েছি
একজন কৃষকের থেকে।
ম্লান মুখে তিনি ফিরছিলেন হাঁট থেকে,
ধানের দর দেখে আশাহত হয়ে।


মাটি খুড়ে স্বপ্ন বুনন, মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের
দোল খাওয়া দেখে প্রান জুড়িয়েছিল তাঁর।


কিন্ত ধানের দামে খরচাও ওঠেনি,
ছেলের সেমিস্টারের টাকা দেবেন কি করে?
নতমুখে বাড়ি ফিরতে ভাবছিলেন কৃষক।


সত্যি বলছি, কবিতাটি লিখিনি
কুড়িয়ে পেয়েছিলাম এক প্রসূতির
বিছানার পাশ থেকে
যিনি প্রসব বেদনায় কাতর,
অথচ টাকা নেই বলে ডাক্তারদের কেউ ফিরেও তাঁকায়নি।
দিনমজুর স্বামীর চোখেমুখে ভয়, দুশ্চিন্তার ছাপ।
টাকার অভাবে তবে কি হারাতে হবে সব!
হাসপাতালের মেঝে পাতা বিছানায় দেয়ালে ভর দিয়ে
মাথায় হাত দিয়ে চুপসে আছেন তিনি।


বলবেন, অধিকারের দাবি তুলছি? নাহ
মোটেও তা নয়, এ আমার কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা।


একদিন খালি পকেটে হাঁটছি, তখন
এই কবিতাটি হঠাত বাতাসের ঝাঁপটায়
আমার পায়ের কাছে আসে।
তুলে দেখি, ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে
চিরকুট লিখে নিজেও মরেছন এক বাবা।


সত্যি এটি আমি লিখিনি, এ আমার কুড়িয়ে পাওয়া
অজস্ত্র পঙক্তির গাঁথা মালা।
যেখানে শুধু হাহাকার, আর্ত চিৎকার আর না পাওয়ার কাব্যগাঁথা।


এ সমস্ত কবিতারা একদিন একত্রিত হবে।
মিছিলি মিছিলে একের পর এক ভাঙবে
সভ্যতার নামের এই বিভেদ দেয়াল।


একদা সম্মিলিত সব কবিতা হামলে পড়বে,
শহর নগর বন্দর গাঁয়ে।
উঁচু নিচু সব দালান কোঠা স্থাপনায় হানবে কুঠারাঘাত।
যেমন আকষ্মিক সুনামিতে ধসে পড়ে
একের পর এক সভ্যতা।


তারপর একদিন লাঠি ভর করে
উঠে দাড়াবে বৃদ্ধা করিমন্নেসা, ধর্ষিতা নাতনীর বিচার চাইতে না,
উল্লাসে ফেঁটে পড়তে ধংসলীলা দেখে।


বৃদ্ধ কৃষক মাথাল আর গামছা গায়ে
ছড়িয়ে দেবে সেখানে বীজধান।
নতুন এক ভেদহীন সভ্যতার স্বপ্নে।