কোনো এক ভোরের বাতাসে খবর এলো–
নদীতে মানুষের লাশ ভেসে যাচ্ছে
ভেসে যাচ্ছে মানুষের সংসার সুখ,
ছুটে আসলাম দ্রুত
বলা যায় স্রোতের গতিতে
আমার আসায় কাপুরুষ টাইপের মরা দেহগুলো
নড়ে-চড়ে উঠলো!
যেন জেগে উঠলো লজ্জিত চোখের ভাষা।


আমি প্রস্তুত হলাম কিছু বলবো বলে
তারা শুয়া থেকে দাঁড়িয়ে গেল
তবুও প্রস্তুতি নিলাম বলবো-ই কথা
তবুও তারা দাঁড়িয়ে থাকলো,
তাদের চোখে মুখে লজ্জার লেশ
তাদের মুখে কুলুপ এঁটেছে কেউ।
তারপর?
তারপর কঠিন একটা চিৎকার এলো
অদৃশ্য কন্ঠ থেকে-
বাবা, বাবা, বাবা!
আমি সইতে পারলাম না আর
দ্বিধা সঙ্কোচ উপেক্ষা করে
ঝাঁপিয়ে পড়লাম নদীর ভরা বুকে।


জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার হলো গুটি কয়েক লাশ
পানিতে লাশের গন্ধ
নদী চরে গুমোট বাধা বায়ু
হাহাকার করে উঠে দুপুরের রোদ।


একটা শিশু কত শত সহস্র রাত কেঁদেছে
মায়ের শূন্যতায়
সে খোঁজে পেল মায়ের ভাষাহীন দেহ,
এক যুবতী
বাবার অদৃশ্যতায় দিগ্বিদিক ছুটেছে
তারও পাওয়া হলো বাবাকে,
এক মা
বুড়ো বয়সে সন্তানের সন্ধানে ঘুরেছে পথে পথে
তারও পাওয়া হলো পুত্র,
একজন আইবুড়ো রমণীর
হবু স্বামীর অপেক্ষা ফুরালো
আর স্বামী নিখোঁজের যন্ত্রণায়
জীবন্ত লাশ হয়ে যাওয়া নারীরা বিধবার পোশাক পরে
হতবিহ্বল চোখে নীলিমার দিকে মুখ করে
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলো
কোটি সেকেন্ড ধরে সবার জীবন ছিল
অনিশ্চিত গন্তব্য।


এভাবেই আরও খোঁজ মিললো
কারও ভাই, কারও বোন, কারও সম্পর্কিত স্বজন;
আমি ক্লান্ত হৃদয়ে ওষ্ঠাগত চাহনিতে
এক কিনারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
গুনতে থাকি আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসের সংখ্যা
আমি জলছাপে নদী ডাঙার দৃশ্যটা আঁকি।


কিছু সময়ের অবসানে
আমাকে মানুষ খুঁজতে শুরু করল;
খুঁজতে শুরু করল লাশের মা, বাবা, ভাই এবং বোন
আমি এগিয়ে আসলাম
আমি দ্রুত এগিয়ে এলাম কপটতার পর্দা খুলে
তারা করুণ সুরে বলতে লাগলো–
আপনি মানুষ, সত্যিকারের মানুষ নাকি!
আপনার পরিচয় কি?
নাকি মর্তের ফেরেস্তা!
আমি নিঃসংকোচে বললাম- ‘আমার কবিতা আমার পরিচয়’।


তারা খুঁজতে শুরু করল আমার কবিতা
তারা পাঠ করতে লাগলো আমার কবিতা
তারা জানতে শুরু করল আমার কবিতার অস্থিমজ্জা।


আমি লিখতে শুরু করলাম কালজয়ী কিছু কবিতা
আমার লেখা হলো শোষকের বিরুদ্ধে
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে
আমার লেখা হলো মুখোশপরা মানুষের বিরুদ্ধে
আমার লেখা হলো বৈষম্যের খড়গহস্তের বিরুদ্ধে
আমার লেখা হলো স্বাধীনতার নামে
পরাধীনতার মাল্যদানের স্বরূপ উন্মোচন।


আমার কবিতা এখন মানুষের অধিকারের কথা বলে না
আমার কবিতা এখন নারী এবং নদীর কথা বলে না
আমার কবিতা এখন সমাজ এবং রাষ্ট্রের কথা বলে না
আমার কবিতা এখন সকল সুন্দরের বিরুদ্ধে
আমার কবিতা সব ধ্বংসের পক্ষে,
আমার কবিতা এখন পুনঃস্বাধীনতার সরল রাস্তা খোঁজে,
আমার কবিতা এখন ৭১ সালের অসঙ্কোচ প্রকাশের
দুরন্ত সাহস হাতড়ে বেড়ায়।


হিংসুকের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক
তারপরও বলি- আমার কবিতা সেই ব্যক্তিত্ব খোঁজে
সেই বঙ্গবন্ধু, সেই বঙ্গপিতা
যার অব্যর্থ হুংকার বজ্রদৃষ্টি
কাঁপিয়ে তুলবে অত্যাচারীর রক্ত নিশান
নষ্ট বিষবৃক্ষ উপড়ে দেবে
মাতৃভূমির নিগড় থেকে।


ইদানীং আমার কবিতা ফুল ও পাখিদের স্বপ্ন দেখে
ইদানীং আমার কবিতা পাহাড় ও আকাশের গল্প বলে
ইদানীং আমার কবিতা সাগর ও ঝর্ণার চিত্র আঁকে।


তারপর?
তারপর আমার কবিতা
লাল-সবুজের প্রেমের সমাধি বুনে
কল্পিত রাজ্যে প্রসব করে একটি ফুটফুটে সন্তান
সেই শিশুপুত্র শেখ মুজিবের উত্তরপুরুষ।