আমাদের দেশে তিনটি সন প্রচলিত আছে বর্তমান,
সংস্কৃতি ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান,
ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্টভাবে ধরে-
জাতির আত্মপরিচয়কে বিশ্বের দরবারে সমুন্নত করে।


খ্রিস্ট, সৌর ও চন্দ্র সন নানা আঙিকে করা হয় বরণ,
বেহায়াপনা নয়, শুদ্ধ সংস্কৃতিই একটি জাতির দর্পন।
সংস্কৃতির বহুবিধ উপকরণের মধ্যে নববর্ষ অন্যতম,
তিনটি নববর্ষ উদযাপনের রয়েছে ভিন্নরকম মাধ্যম।


পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন সড়ক প্রাসাদ ভবন,
রংতুলির ছোঁয়ায় আলপনা করা হয় অলঙ্কিতকরণ।
উদযাপনে ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয় উদ্যোগ গ্রহণ,
পান্তা ইলিশ খেয়ে বিপুল উৎসাহে করা হয় উদযাপন।


বাংলা নববর্ষকে সূর্যোদয়ের মাধ্যমে জানায় স্বাগতম।
মহররম নিয়ে আসে বেদনার্ত মর্সিয়া-ক্রন্দন ও মাতম!
বাংলা নববর্ষে পরিধান করে রঙ-বেরঙের পোশাক,
রঙিন মুখোশ পরে, সং সেজে পিটিয়ে ঢোল-ঢাক।


প্রভাত আলো নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা সম্ভাবনাকে রাঙায়,
অপ্রাপ্তি, বেদনা ভুলে নবানন্দে গোটা জাতিকে জাগায়।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বশ্রেণীর মানুষ দেশীয় প্রথায়
সর্বজনীন নববর্ষ উৎসব পালন করে প্রবল উদ্দীপনায়।


খ্রিস্ট নববর্ষ নানা ভবনে আলোকসজ্জিতকরণ,
ও আতশবাজি পোড়ানো হয় মধ্যম রাত যখন।
বিনোদিতরা মেতে ওঠে পার্টিতে। নেচে-গেয়ে তারা
আনন্দ প্রকাশ করে হয়ে যায় একেবার দিশেহারা।


হিজরী নববর্ষের সম্পর্ক নতুন চন্দ্রোদয়ের সাথে,
বাংলা নববর্ষ উদযাপিত দিনে, হিজরী সন্ধ্যারাতে।
অন্য নববর্ষে একে অপরকে জানায় শুভেচ্ছা সম্ভাষণ,
হিজরী নববর্ষে করে গভীর শোক-সমবেদনা জ্ঞাপন!


নানা দেশে নানাভাবে উদযাপিত হয় নববর্ষ,
হিজরী নববর্ষ শোকাতুরের হৃদয় করে বিমর্ষ!
হিজরী নববর্ষ দেশীয় নয় পৃথিবী ব্যাপী হয় পালিত,
কপট নয়, শুধুমাত্র খাঁটি শোকাতুরের হৃদয়ে লালিত।


মহররম মাসে পৃথিবীর সূচনা থেকে বহু ঘটনা হয়েছে
সংঘটিত। সেগুলো মলিন কারবালার নির্মমতার কাছে।
হিজরী নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয় মর্মাহত অন্তরে,
দেহে কালো ব্যাজ ও কালো পোশাক পরিধান করে!


মানুষ পার্থিব ব্যস্ততায় আত্মনিয়োগ করে উৎসাহে,
শোকাতুরের কর্ম বিরতি সম্মান জানাতে মহররম মাহে।
হিজরী নববর্ষ আসে সুপ্ত ঈমানকে শাণিত করতে,
ইহকালীন কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে মাশুককে স্মরতে।


মহররম আসে অসীম ধৈর্য ত্যাগ সহনশীলতার বার্তা নিয়ে,
প্রলুদ্ধ করতে সবচেয়ে উত্তম মৃত্যু শাহাদাতের পথে গিয়ে।
জালিমের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে জানাতে ঘৃণা ও ধীক্কার,
অণ্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবার নয়, এই শিক্ষার।


হিজরী সন আসে অন্ধত্ব গোড়ামীর মূলোৎপাটনের জন্য
সাহসিকতা নৈতিকতা ও ভালোবাসার নিদর্শন অনন্য।
এই দিনের মহত্ব ও গুরুত্বকে অস্বীকার করে যারা,
জালিমের দলভুক্ত, অন্ধকারে নিপতিত হবে তারা।


অন্যান্য নববর্ষ আসে বিগত দিনের ব্যর্থতা পুশিয়ে,
অনাগত দিনে সফলতা পূরণের আশা প্রতিজ্ঞা নিয়ে।
অন্য সকল নববর্ষ লক্ষ্য অর্জন সম্ভাবনা নিয়ে আসে,
হিজরী নববর্ষের বার্তা শোকের, প্রতি দিন প্রতি মাসে।