পল্লী মায়ের এই ছেলেরা সোনার মত মুখ
গুনলে পাবে হাড় ক'খানা, পেটটা ধনুক।
খামছা দিলে গায়ে, ময়লা উঠবে মুঠো মুঠো
পেটটি ভরে তিনটি বেলা ভাত পায় না দুটো।


জীবনে ওরা ছুঁইনি বই, যায়নি পাঠশালায়
পরের ক্ষেতে শ্রম দিয়ে কোন রকম দিন চালায়।
কষ্টে ওদের কান্না আসে, নেই জানাবার ভাষা
কবে খোদা পূরণ হবে ওদের মনের আশা?


জীবনে কভু জ্বলবে না ওদের চোখে জ‌্যোতি
ওদের সমুখে সবই আঁধার এইত দুঃখ অতি।
জীবনের বিনিময়ে ওরা কিনিছে এই কষ্ট
ওদের পূর্বের নসিব হইতো হয়েছিল পথভ্রষ্ট।


ধনীরা থাকে মহাসুখে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে
এদের ঘরে বাতাস লাগলে পাতার মত নড়ে।
মাটির দেওয়ালের ঘর এদের গমের খড়ে ঢাকা
দিবা-রাতে এরই মাঝে যেন স্বর্গ আঁকা।


শত বর্ষাতেও ভয় নেই ওই ধনী লোকের
এদের চালে মেঘ নামলে বন্যা আসে শোকের।
দুঃখিনী মা বলেন "তোদের জন্য করি আমি কি যে
তোরা থাক্ মাচার নীচে আমি মরি ভিজে"!


ঘরের এক কোণে আছে জ্বালানী রাখা মাচা
তার নীচে হামাগুড়ি দিয়ে থাকে তিনটি বাচা।
বৃষ্টি মাঝে ঘরের সারা জায়গায় থাকে পাত্র পাতা
কত কষ্ট করে, রোদ-বৃষ্টিতে নেই একখানা ছাতা।


ওগো ধনী তোমাদের মোটেও লজ্জা করে নাকো
এদের থুয়ে অট্টালিকায় কেমন করে থাকো?
তোমরা থাকো লেপ-তোষকে আরামে বার মাস
ছেড়া কাঁথায় শুয়ে এরা মেটায় মনের আশ।


তোমার সন্তানের রোজ জামা দাও, চাক বা না চাক
এদের পাছা ছেড়া দেখলে ঢাকো কেন নাক?
এদেরও তো মন আছে, সাধ আছে মনে
স্বপ্ন এদের দাফন হয় দারিদ্রতার কাফনে।


ঈদের দিনে নতুন সাজে বেড়ায় সকল লোক
দেখে দেখে অশ্রুজলে ভরে এদের চোখ।
জোটেনা কিছু এমন দিনেও অভাব এদের বাড়ি
খাদ্যবিহীন, শিকায় ঝুলানো এদের ভাঙ্গা হাড়ি।


গরীব বলে এদের দিকে দেয় না কেহ সুদৃষ্টি
বুঝিনা খোদা এ কেমন তোমার সৃষ্টি!
তোমার নাম লয়না যারা তাদের দিয়েছ কত
যারা তোমার বন্দনা করে তারাই বঞ্চিত!


রচনা : ২৩.০২.১৯৯৭ খ্রিঃ
কাব্যগ্রন্থ : "প্রথম বসন্তে ফোটা ফুল"
প্রকাশ : ডিসেম্বর-২০০৭ খ্রিঃ