শারদের অস্ফুটে সুধাকরের দীপ্তি যবে পল মোর বাতায়নে
নয়ন মেলি দেখি প্রকৃতির বান ডেকেছে জমিন ও আসমানে!
কি মনােমুগ্ধ করে সৃজিয়েছেন প্রভু আমাদের এ বসুমতী
প্রতিটি প্রহর আনে জীবনে নবোথ্থান আর নব সম্প্রীতি।


কোথা  থেকে এসেছে নিমন্ত্রণ তাই জিমুতেরা সবে
আহ্বানে নয়া দরিয়ায় পাল তুলে যাইতেছে উৎসবে।
নদীর পানি কল কল র'বে চলিতেছে কােন্ আনমনে
কি আনন্দ কেবা জানে এই নিশিতে প্রকৃতির প্রাণে!


কলমি ফুলে কােন্ আবেশে ঝিমায় টলে টলে।
দূর গগণের পূর্ণ শশি  ছিড়ে পড়েছে সলিলে!
হিমেল হাওয়া হৃদয়ে লেগে উঠে শিরশির ঢেউ
থেকে থেকে কাশবনে ডেকে ওঠে ফেউ।


দূর নীলিমায় কে যেন চেয়ে আছে চুল খুলি
টুপটাপ করে ঝরে পড়ে বকুলের ফুল গুলি।
বক কনেরা খালের ধারে কি খুঁজিতেজে জানি?
মৃদু হাওয়ায় পতপত উড়ে কলাপাতার কচিছানি।


কনক ধানের শীষে দুলিতেছে শিশিরের বিন্দু
দূর্বাঘাসে ঢল নেমেছে এযেন চিতলাল সিন্ধু।
চাঁদের আলো গায়ে মেখে ঘুম-ঘুময়ে গাছের ছায়
টিপ টিপ করে জোনাক জ্বলে উদাসী বনের কায়।


দূরে বেতস-কেঁয়ার বনে পানকৌড়ি আসর মাতায়
পাটের পঁচা গন্ধ পানি আনছে লুটে দখিণ হাওয়ায়।
প্রজাপতি  ফুলের 'পরে বসে আছে  আপন  মনে
আকাশ পথে বিমান চড়ে যাচ্ছে কারা দূর ভুবনে।


লাউ-কুমড়ার মাচার নীচে দোয়েল ফিঙে বসে
নিভৃতে গান গাচ্ছে তারা পাখা মেলে আবেসে।
কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি প্রহরে প্রহরে জাগিয়া
প্রভুর অর্চনায় মগ্ন অজান ফুলের সুবাস নিয়া।


চারদিক ঘুম ঘুম পাইনা কােন মানবের সাড়া
প্রকৃতি  একা আমার সাথে করিতেছে মহড়া।
সবাই ঘুমাচ্ছে শো শো শব্দে অঘোর নয়নে
গেহে বসে চলেছি আমি নব জীবনের সন্ধানে।


রচনা : ১৫.০৯.১৯৯৫ খ্রিঃ
কাব্যগ্রন্থ : "প্রথম বসন্তে ফোটা ফুল"
প্রকাশ : ডিসেম্বর-২০০৭ খ্রিঃ