শীতের ভোরে গিয়েছিলাম মালসাকুড়ার বিলে,
সেথা কৃষাণ ধানের চারা লাগিয়েছে তার কূলে ৷
কিছু জমিতে ধান রোয়া, কিছু জমি ফাঁকা,
হিমেল হাওয়া বইছে, কুয়াশার চাদরে ঢাকা ৷
আমরা গরীব পরের ক্ষেতে বিহান-সন্ধ্যা খাটি,
তুচ্ছ মোদের শ্রমের দামে অঙ্গ করি মাটি!
সবার কাছে তুচ্ছ হলেও, মোদের কাছে দামী,
তারই তরে জিন্দেগীটা কাটাই দিবাযামী!


পরের ক্ষেতে শ্রম দেওয়া এইতো মোদের খেলা,
জাফর মিয়ার চারা মারতে গিয়েছি  বিহানবেলা ৷
বীজতলাতে নেই তো পানি, আমরা দেখি এসে,
পানিবিনা চারা উঠবে না তাই রয়েছি সবে বসে ৷
জীর্ণ বসন অঙ্গে জড়িয়ে, বসে জড়সড়!
বীজতলাকে ঘিরে ধরে কাঁপছি থরথর!
হঠাৎ সবার নজর গেল, অথৈ বিলের জলে,
ভোরের আকাশ মুখরিত, পাখির কোলাহলে ৷


হাজার পাখি মধুর স্বরে ডাকে বিলের মাঝে,
আকণ্ঠ জুড়িয়ে যায় আহ! জুড়ায় প্রাণটা যে!
পোষের হিমেল হাওয়ায় শিহরীয়ে ওঠে অঙ্গ,
বীজতলায় সূর্যালোকে উঠছে সবুজ তরঙ্গ ৷
দিগন্তজোড়া বিলে পাখিকূল ওড়ে ডানা মেলে,
পাখি শিকার করতে, ফাঁদ পেতেছে এক জেলে ৷
অকষ্মাৎ উড়ে এসে ফাঁদে  বিঁধলো একটি পাখি,
হিম ভোরে করুণ স্বরে সে করছে ডাকাডাকি!


আমাদের মাঝে এক জন 'ইদ্রিস আলী' নাম,
যত অসাধ্য সাধন করা তারই আসল কাম ৷
পাখির এহেন দশা দেখে ইদ্রিস আলীর মুখে,
হাসিটুকু দূর হল, দুঃখে জল এলো চোখে!
সহসা সে পোষাক খুলে গামছা করে পরিধান,
কাঁপতে কাঁপতে নামল ঠাণ্ডা জলের মাঝখান ৷
সেথা গিয়ে পাখিটারে নিজ হাতে ছাড়িয়ে,
প্রেমময় স্বাধীনাকাশে দিল তারে উড়িয়ে ৷