ভোর-বিহানে বেরোই মাঠে, ওরা মজুর দল,
হাতে নিয়ে হাতিয়ার, বুকেতে জোর প্রবল।
ওরা মানে না তড়িৎ গর্জন কিংবা ঝড়-বাদল!


ওরা মজুর, লাঙল চষে, জিরাতে দেয় মই,
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটির ঝুড়ি বয়।
মাটি বওয়া ভারি কষ্ট, ব্যথায় গা টল্ মল্ ।


কখনও ওরা কোদাল চালায়, কখনও ধান কাটি,
ডাঙার দিকে বিছালী আর লাবোই বাঁধে আটি।
কখনও রোদ্রে শুকায় তনু, কখনও ভিজে ছল্ ছল্ ।


কখনও ওরা পাট ছোলে পানিতে জাবোড় দিয়ে,
হেথা-হোথা মাটি কেটে বেড়ায়, ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে।
যেখানে যায় গুঞ্জরণে মাঠ করে কল্ বল্ ।


একমুঠো মুড়ির আশায় প্রখর রোদ ভোগ করি,
দুষ্টু দলেরা ধান খুটে ওদের পশ্চাতে  ঘুরি ঘুরি।
তাদের কভু রোষে বলে "দূরে যা এই পাল!"


কখনও ওরা ভুই রোয়, নিড়ানী দেয় দু'হাতে,
যে জমিটা ধরে না কেন, হয়ে যায় সাথে সাথে।
প্রকৃতির ডানায় ওড়ে, ওরা নবতরঙ্গীর দল।


কখনও ওরা ভুই নিড়ায়, বসে সারি সারি,
কাজ ফেলে কভু ওরা করে না মারামারি ৷
নিড়ানোর পর জমি তখন হয়ে ওঠে উজ্জ্বল।


পাই তুলে যার ঘাস সে-ই টপাটপ্ তুলে নেয় 
গরু-ছাগল না থাকলে অন্যের দিয়ে দেয়। 
সবারে সবাই ভালবাসে কারো মনে নেই খল। 


বিলের জলে অগোচরে জোঁক লাগে গায়ে,
অনর্গল রক্ত পড়তে থাকে শরীর বেয়ে। 
সাপ-জোঁকের ভয়েও ওদের পায়ে বাঁধা শীকল। 


কখনও মাঠে বিছায়ে গুন মেশিনে ধান ঝাড়ে, 
কেউ বান্ধে, কেউ তোলে কেউ কেউ ধান পাড়ে। 
কেউ বস্তা বইতে থাকে, কেউ বাছে পল। 


গাঁয়ের লোকেরা এসে বলে "গুড়াদি বিছালি হবে? 
অকারণ বসে না থেকে বাঁধতে লাগি তবে" 
কেউ কেউ কেটে-বেন্ধে করে রাখে দখল।


রোদে মনে হয় মরে গেলাম, প্রাণ করে ধড়ফড় 
মেশিন ছেড়ে কারো বলে এবার তুই একটু ধর। 
পিপাসার চোটে বুক ফাটে, দেখে কোথা কল। 


সব কাজ ওরা করতে পারে খারাপ কোনটা না লাগে,
যে একটু টাকা বেশি দেয় তার কাজ করে আগে। 
ওরা তরুন নয়কো জড়, ওদের যৌবনোচ্ছল।


ভাতের থালে উড়ে এসে লাফালাফি করে ফড়িং 
নানা রকমের পোকা-মাকড় করে তিড়িং-বিড়িং। 
থাল কাত হয়ে ওঠে তাতে বিলের ময়লা জল ৷


পৌষ মাসে কনকনে শীতের মাঝে বিলে,
কোমর, গলা পানিতে ধান কাটে সবে মিলে। 
ওখানে আহার, প্রস্রাব, ওখানেই ত্যাগ করে মল।