১মপর্বঃ অবস্থান ও প্রকৃতি।


গাছগাছালির ছায়া ঘেরা
পাখপাখালির গানে ভরা
চম্পাবতীর মত,রূপসী একগ্রাম
নামটি তাহার জামালপুর প্রকাশ করিলাম!


যুগ থেকে যুগ যুগান্তরে
কাল থেকে কাল কালান্তরে
মধ্যিখানে বইছে তাহার ইটাখোলা নদী
ভাঙ্গাগড়া নেই তেমন শান্ত নিরবধি!
সবুজ শ্যামল চিত্রপটে ছবির মত আঁকা
সুখে দুঃখে মিলেমিশে গ্রামবাসীদের থাকা।


সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায়,
জন্ম নিয়েছিলেন মরমি এক কবি
রাধারমন দত্ত,
সেই থানাতে ৮নং আশারকান্দি ইউনিয়ন আছে অন্তর্গত,
সেই ইউনিয়নে জামালপুর গ্রামটি অবস্তিত।


২য়পর্বঃ জামালপুর খাঁনবাড়ি।


যেই আমলে পড়ালেখার ছিলনা বালাই
ঘাটুগানে যাইতো লোকে ঘরবাড়ি পালাই!
সেই আমলে খাঁনবাড়ির আব্দুল হাশিম খাঁন,
কলিকাতা ভার্সিটির বিএ,বিটি পান।
শিক্ষাক্ষেত্রে ছিল তাঁহার বিশেষ অবদান,
ষড়পল্লী হাইস্কুল তাঁর হাতেগড়া
শিক্ষা প্রতিষ্টান।


তাঁহার সহোদর ছিলেন ইসরাইল খাঁন
ষড়পঞ্চ ছিলেন তিনি লোকে দিত মান,
তাঁহার একপুত্র ছিলেন আব্দুশ শহিদ খাঁন
শান্তশিষ্ট ছিলেন কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান!
বাপের সকল সহায় সম্পদ একাই তিনি পান।


বিশেষ সুদর্শন ছিলেন আছদ্দর খাঁন
বড়শি বাইতে জবরদস্ত নেশা ছিল তাঁন,
পাউণ্ড কামাইতে তিনি বিলেতবাসে যান।
তাঁহার বড় পুত্রের নাম আশরাফ খাঁন হীরা,
তাঁহার মুখে সদাই জারী রসের ফল্গুধারা!
ভীষন রসিক লোক করেন সদায় জোক,
কথা শুনলে তার মরে পেটের ভুখ,
কথাবার্তা তাঁর হীরার মত ধার।
হীরা খাঁনের সহোদর আহবাব খাঁন হারুন,
বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করেছেন দারুন!
রাজনীতিতে তাঁন বিশেষ সন্মান,
ছাতক ডিগ্রী কলেজে পড়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
মরহুমঃপররাষ্ট্রমন্ত্রী সামাদ আজাদের,
ছিলেন বিশেষ প্রিয়,
নিজ কর্মক্ষেত্রে ছিলেন ভীষন সক্রিয়!
অসুস্থতা করেছে এখন তাঁহাকে স্থবির,
ঘরে বসে থাকেন এখন এই কর্মবীর!
আছদ্দর খাঁনের তৃতীয় পুত্র মোসাররফ খাঁন দৌলত,
সুডৌল সুমার্জিত চেহারা খুবসুরত।
এঁদের সর্বকনিষ্ঠ ভাই মোঃ রূপা খাঁন,
অতিশয় বিনয়ীভদ্র সচ্চরিত্রবান।
দৌলত ও রূপা খাঁনের বিলেতে বসবাস,
মাঝে মধ্যে দেশে আসলে থাকেন একআধ মাস।


শান্ত সরল মানুষ ছিলেন মেহেরাব খাঁন
তাঁহার একমাত্র পুত্র দরাজুল ইসলাম খাঁন,
যৌবনকালে ছিলেন তিনি মস্ত খেলোয়ার,
মাঝ বয়সে হলেন তিনি ইউনিয়ন মেম্বার।
আশেপাশে দশ গ্রামে সুনাম আছে তাঁর!


আরো কয়েক ব্যাক্তি আছেন উল্যেখিব নাম,
যাদের পদভারে ধন্য এই গ্রাম!
শামসূল ইসলাম খাঁন ছিলেন ধী'শক্তিমান,
তাঁহার ছোটভাই ছিলেন নুরুল ইসলাম খাঁন।
মাটির মত মানুষ ছিলেন,ছিলনা শানমান।


সহজ সরল পুরুষ ছিলেন আব্দুল হামিদ খাঁন,
অল্প বয়সকালে তিনি লণ্ডনেতে যান!
তাঁর মায়ের পেটের ভাই আব্দুল ওদুদ আছকির খাঁন,
রেগে গেলে গ্রামের মানুষ ভয়ে কম্পমান!
ইনি কিন্তু ছিলেন বড় জাঁদরেল মেম্বার,
সহিতে পারিতেন না অন্যায় অত্যাচার,
ন্যায়বিচার আর জনসেবায় তাঁর,
সকল যুগে সকল কালে জুড়ি মেলা ভার।
এদের আরেক ভাই ছিলেন আব্দুস সামাদ খাঁন,
শান্ত স্বভাব বিদ্বান,সাহস বিশেষ চাঙ্গা,
এজন্য হয়েছিলেন তিনি পুলিশের দারোগা।


আরেক কৃতি পুরুষ ছিলেন আব্দুল কাদির খাঁন,
জমিজমার কাগজপত্রে ছিল কিছু জ্ঞান।
তাঁহারই অনুজ ছিলেন আব্দুল আজিজ খাঁন,
কম বয়সে হয় তাঁর অকাল প্রয়াণ।


আলাভোলা মানুষ ছিলেন
আব্দুল ওয়াছিদ খাঁন,
তাঁহার একমাত্র পুত্র,শাহাবুদ্দিন কবির খাঁন,
পেট্রো ডলার কামাইতে কুয়েত তিনি যান।
এ পর্যন্ত ক্ষান্ত দিলাম খাঁনবাড়ির বয়ান।


৩য়পর্বঃগোত্র গাঁথা।


গ্রামের বড় গোত্র প্রধান ছিলেন ইসমত উল্যাহ
গোষ্ঠির সবে নিত তাঁন যুক্তিবুদ্ধি শল্লা!


এই গোত্রেরই আরেক ব্যাক্তি'র নাম আলকাছ মিয়া সুবল,
সৎসাহসী মানুষ আর ছিল মনোবল,
কথাবার্তায় ছিল তাঁন বেশ যুক্তিধার,
তিনিও ছিলেন একজন ইউনিয়ন মেম্বার।


আরেক কীর্তিমান আছেন নাম তাইদ উল্যাহ,
ছোটবড় সকলে মানেন পরামর্শ শল্লা।
গ্রামের আশয় বিষয়ে তাঁন সদায় সজাগ কান,
কথাবার্তা সুন্দর বেশ বুলন্দ জবান।


পূর্ববাড়ীর প্রধান পুরুষ আব্দুর রাজ্জাক,
বাড়ীর সবে দিত তাঁন কথায় সাতপাঁক!
তাঁহার বুদ্ধি ছিলপুরা
আর একটি শখছিল
পালিতা তাইন ঘোড়া!


এইবাড়ির আরেক ব্যক্তি নাম কলছু মিয়া,
সকল সময় ব্যস্ত থাকতেন পিরাকী ভাব নিয়া,
মানুষ ছিলেন সৎ-
ছোটবড় সবাইকে বেশ করতা মহব্বত।
তাঁন সহোদর ভাইর নাম,আব্দুর রূপ,
রাগের সময় সামলানো দায়,নইলে  থাকইন চুপ।
তাঁরার সকল ছোট ভাই,নাম আব্দুল গণী,
সাধাসিধে জীবনাচার নম্রতায় বেশ গুণী।


আমার বাবার ছিলো,গ্রামের হাটে
নামকরা কারবার,
বহুলোকে বইত তাঁহার জিনিস পত্রের ভার!
গ্রামের সকল লোকে,তাঁরে বলতো দোকানদার।
তাঁহার আসল নাম আব্দুর রাশিদ ছিল,
দোকানদার,না বললে কেউ চিনতনা একতিলও!
মজার ব্যাপার!
দোকানদারি চাঁপা দিল
আসল নামটি তাঁর‌।

নয়াবাড়ির মদরিছ উল্যাহ লণ্ডনিসাব
আমার বাবার সহিত ছিল গলায় গলায় ভাব!
মাঝে মাঝে লণ্ডন থেকে দেশে আসলে চলি,
বাবার সাথে চলতেন তিনি করে গলাগলি!
আমার বাবার এই,বন্ধু সুজন,
পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই এখন।
আমার বাবাও পরলোকে করেছেন গমন,
তবুও ছিঁড়েনি তাঁদের প্রীতির বাঁধন!
পাশাপাশি গোরস্থানে দুজনেরই অন্তিম শয়ন।


গ্রামের আরেক প্রবীণ পুরুষ নাম আছরুদ্দি,
বিলাত প্রবাসে থাকতেন সিধা সরলবুদ্ধি।


নদীর পূর্বপাড়ের লালমিয়া হাজী,
দায় দরবারে ছিলেন না কখনো তিনি রাজী।
ভীষন সচেতন-
দুইহাতে সমঝে রাখেন জমিজমা ধন।


আর একজন লোক ছিলেন নাম আরাজ উল্যা,
দানা মুরুব্বির পিছুপিছু দিতেন তিনি পাল্লা!
ছিলেন সহজ লোক,
বিচার নালিশ সভায়
যাওয়ার ছিল বিশেষ জোক।


কাব্যভাষায় যাদের কথা করিলাম লিখন
তারা সবাই আমার কাছে মান্য গুরুজন।
দুষগুন মিলিয়ে তারা ছিলেন মহাজন।