আব্বা, বাজার আনবে তো আজি?
কতদিন হলো খাইনা ভালো তরকারি।
করিম মিয়া দীর্ঘ-নিঃশ্বাস লুকানোর জায়গা খুঁজে না পায়;
দিন যে অনেক হলো, ভালো কিছু চড়েনি চুলায়।
আল্লায় চাইলে আজকেই হয়ে যাবে কিছু, দেখিস—
সান্তনা শুনে ছেলে বাবার যাওয়ায় চেয়ে রয়,
চোখ তার হলদে আকাশের দিকে চলে যায়।


প্যাডেল চাপিয়ে, আরো জোরে, খুব তাড়া আছে;
করিম পৌঁছবে, রাস্তার মোড়ে, সবার চেয়ে আগে।
রাস্তা আজও যে বড্ড ফাঁকা!
রহমত শরবত নিয়ে এখনও একা!
গরম বাতাসে, রিকশায় বসে ঝিমায় করিম খুব,
মনে পড়ে আগের কথা, যখন ছিল বাপজান—
এমনই ছিল দিন তাদের, নাই কোন আহার;
বদলায় নাই জীবন তাদের, আছে ঠিক তেমন—
কোনোমতে টেনেটুনে চলে তাদের জীবন।


হাসি নাই কারো মুখে, সুখ নাই কারো মনে;
বস্তি আজ ঝিমিয়ে গেছে, শুনি নাই চেঁচামেচি,
ছেলেরা আর খেলে না বল, ক্ষুধার ক্লান্তি।
হাবিব ভাইয়ের হয়না বেচা– কোনও ‘চা-বিস্কিট’,
বুবুর ‘গার্মেন্স’ চলে না, গিয়েছে টিসিবি-র লাইনে দাঁড়াতে,
মায়ের ‘ফ্ল্যাড-বাড়ির’ কাজ চলে গেছে বুঝি;
আজকে দেখি, খুকির সাথে বানায় মালা– পুতির।


করিমের ছেলে রহিম নিচে দাঁড়িয়ে
এইসব দেখে আর ভাবে—
শহরের হলো যে কী!
হাসপাতলে জায়গা দিলো না বুড়ির,
বন্ধ হয়ে গেছে স্কুলগুলি;
মনে হচ্ছে, থেমে গেছে জীবন বুঝি।


(২৬/০৩/২০২০ তারিখ; তখন আমার দেখা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম অমানবিক সময়— করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্দশা আরো বেড়ে গেছে। তাদের কাজ নেই, আয় নেই, খাবার কেনার টাকা নেই। এদের প্রতিও সকলের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। বিশেষ করে, সরকার এবং ধনীদের এদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। —এখনও পরিস্থিতির ঠিক কতটা পরিবর্তন হয়েছে? মহান আল্লাহ, আপনি আমাদের সাহায্য করুন। —লেখক, ২৮/০৭/২০২১)