শীতের ভোরে দূরের আবছা গ্রাম হয়ে
তুমি হাতছানী দাও, প্রিয় নাম ধরে ডাকো
যেখানে মায়াভরা রূপালী থালা হাতে
তুমি দুধমাখা ভাত নিয়ে, নীল পেড়ে শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে;
ফুল তোলা শাল গায়ে,  মিটিমিটি হাসি মুখে
তুমি মা তুমি, আর আমি মুখ নত তোমার দিকে তাকিয়ে
কেবল তোমার দিকেই  তাকিয়ে, যেন অন্ধকারে
তোমার সহজিয়া চোখ আমার দিক নির্দেশনার প্রতিক।
কত জনম দেখিনি ঐ শব্দহীন আবেগ মাখা মুখ
শান্ত নদীর মত বয়ে চলা শীতল জল
আমি খড়কুটো হয়ে ভাসি তোমার ছত্রছায়ায়।


প্রিয় জায়নামাজে পবিত্র নকশায়
তোমার মুখচ্ছবি আমায় একপশরা
বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়, দীপ জ্বালানো ঝড়ো হাওয়ায়
বুকে আগলে রাখা এক অদৃশ্য মানবী হয়ে দাঁড়ায় পাশে
আমি জড়সড় হয়ে স্বর্ণলতার মত জড়াই তোমার আঁচল
মাগো আজ শিরোনামে তুমি
তোমাতেই ছিল আমার শুরু, আমার তৃষ্ণার্থ আলোর রেখা
আমার জ্ঞাত, অজ্ঞাত অনুভূতি তোমার দিকেই ধাবিত।
এখন তুমি কেমন আছ মা ?
জানি, আজ তুমি খুব অভিমানী হয়ে উঠেছ
তোমার ডালপালা এতই বড় হয়েছে যে
এদের আগলাতে আগলাতে তুমি এখন খুব ক্লান্ত
তোমার ঘুম পাড়ানো গান, বখতিয়ারের ঘোড়ার গল্প
রাত জাগানিয়া পাখি হয়ে হাত  পাখার শব্দ
খুব যতনে ঘুমন্ত এখন।


চারদিকে এত কোলাহল, জলের শব্দ, নদীতে
ষ্টীমারের কল্লোল, রেলগাড়ি, ট্রেন , রিকশার এত শব্দ, তবুও
তুমি অকস্মাৎ  বাতিহীন ঘরে নিজেকে আটকে নিলে
মা, আজ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত জাহাজ হাঙ্গরের মুখে ধাবিত,
একবার তাকাও,দেখ এ সব ই তোমার অস্তিত্বের শেকড়।
সত্য আর মিথ্যের লড়াইয়ে এখন তোমাকে বড় বেশী প্রয়োজন।
একবার সাহস দাও, যে কিনা তাম্রজালে ঢাকা পড়ে
এখনো জানেনা  সঠিক পথের ঠিকানা।