সেই কোন সকাল থেকে হাঁটছি,


ক্লান্ত আমি।


খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আবারো হাঁটা শুরু করলাম,


রাস্তার দুধারে পাইন গাছ গুলো কেমন যেন


সেনা প্রধানের মত পাহাড়া দিচ্ছে রাত-দিন।


আর রডড্রেনড্রনগুলো নগ্ন দেহে মুখ উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,


তারা প্রজা নয় সেনা বটে।


আমি এগিয়ে যাচ্ছি একলা,


কিন্তু অনুভব করছি, আমি একলা নই....!


আমার পেছনে যেন লক্ষ কোটি ছায়া;


সমতালে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছে।


পিছন ঘুরলাম কেউ নেই, কিচ্ছু নেই


শুধু ঘন কুয়াশা গুলো নেশাগ্রস্থ হয়ে দিক্ শুন্য ধেয়ে বেড়াচ্ছে...।


কৌতুহল বসতঃ আবার এগিয়ে চললাম,


এবার হাঁটার শব্দ নয়,


কাঁদার শব্দ,


মা শিশুকে হাঁরিয়ে,


পিতা পুত্রকে হাঁরিয়ে যেমন করে কাঁদে ঠিক তেমন কান্না..


লক্ষ কোটি কান্নার শব্দ যেন আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না...।


মাঝে মাঝে বোধ হচ্ছে, পৃথিবীটা হয়তো এই ফেঁটে যাবে,


পেছনে না ফিরে থাকতে পারলাম না,
এবারো ব্যার্থ....


প্রকৃতি কি আমার সঙ্গে রসিকতায় খেলায় মজে উঠেছে?


না সবটাই বাতাসের কারসাজি?


সামনে ফিরে দু পা ফেলতেই,


দেহের সামনে একটা বিশালাকার বট গাছকে দেখতে পেলাম!


মনে প্রশ্ন এলো, এই কি সেই বট?


যে বটের সামনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


সমস্ত গাছের কৃতঞ্জতা স্বীকার করতে চেয়েছিলেন?


একে দেখে বিশ্বের সমস্ত উদ্ভিদের প্রতিনিধি মনে হলো আমার।


এ কি মাশুল নিতে এসেছে?


প্রতিটি দেনার শোধ নিতে এসেছে সুধ সমেত?


তবে আমি তো নিঃস্ব আমি ওকে কি দেব?


ভাবালো খুব!


কল্পনার বেড়াজাল ভেঙ্গে প্রতিনিধি বট কথা বলছে,


এইযে সবুজ, এইযে পাহাড়, এই যে বিশালাকার মেঘ তুমি দেখতে পাচ্ছো,


তা একদিন আর থাকবে না!


একদিন এ সবুজ অরন্য মরুভূমি হয়ে যাবে।


এখানে একটা কুকুর ছানাও খেলা করবে না,


একটা পাখিও ডাকবে না,


একটা মাছ ও জলে সাঁতরাবে না,


একটা গোলাপ ও ফুঁটবে না।


অবাক হয়ে বললাম,


এই পাহাড় ,এই গাছ এসব কার জন্য?


তোমরা বেঁচে আছো কার জন্য? 


মানুষের জন্য, কুকুর ছানার জন্য,


কিংবা তোমার ডালে বসে ডাকা মিষ্টি পাখিটার জন্য।


প্রতিনিধি বট শান্ত গলায় উত্তর দিলো,


তুমি ভূল!


এই পৃথিবীতে আমরা প্রতিনিয়ত যৃদ্ধ করি,


নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ।


তোমরা এই সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে
আস্তানা গড়ো,


শীতে আমাদের দেহ পুড়িয়ে তৃপ্তি পাও


তোমরা মুর্খ,


তোমরা মোটা মাথার মানুষ,


তোমরা পথের তাগিদে আমাদের শিশুদের ছিনিয়ে নাও,


আমাদের পিতা-মাতা-ভাই-বোনদের ছিনিয়ে নাও


অক্সিজেনের বদলে ভরে দাও বিষাক্ত কালো ধোঁয়া।


পৃথিবীতে সুস্থ মতিস্কের মানুষের বড্ড অভাব,


এটা পাগলের কারখানা,


আমার নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই,


চিন্তা তো আমার সন্তানদের জন্য হয়!


সাদা মেঘগুলোর জন্য হয়!


মিষ্টি পাখিগুলোর জন্য হয়।