এই আমি
----------
একলা আমি একার মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াই
যাযাবর হয়েই আমি কবিতার সাথে সাথেই
চোখ থাকে পাতায় পাতায় আড়ালে নিন্দুকেরা হাসে
সহজ ভাবে ডাঙায় উঠি
ফের গভীর জলে
ওকে তাকে বলি, হাত ধরো একটু এসে
সবুজ ঘাসের আড়াল থেকে ডজন ডজন শত্রু এসে তুললো ভালোবেসে
অবশেষে দোষ দেয় ও ওকে তাকে
এসব নিয়ে আর ভাবি না
সব ছেড়ে যাবো চলে
দূর দ্বীপান্তরের দেশে।
প্রবাহমানতা
-----------
কতগুলো পাখি শব্দ করে উড়ে গেল
তাতে কত বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া পদের ঘুরেফিরে
আসলে আমরা মানুষ বলে হয়তো বুঝতে পারি না কিংবা না বোঝার ভান করি
দিনগুলো বেশ নিজের মতো চলে যায়
তাকে যেমন আটকানো যায় না তেমনই ধরা যায় না
শুধু আমাদের বড়ো সময়ের অভাব
কতগুলো দিন মেলে বছরে
সব হারিয়ে নতুন দিনের সূচনায় আবার আগের ভাবনা ভাবতে থাকি।
পাখিরা তাদের মতো করে আনন্দে গান ধরে
আসলে এই প্রবাহমানতা যুগযুগ ধরে ফিরে ফিরে আসে
প্রতিটি মানুষের ।
শেষ চিঠি
----------
আজ তোমায় লিখছি বসে
বছর শেষের চিঠি
সময়ের অভিজ্ঞান কষে
লিখেছি একটা কি দুটি
বসন্তের শেষ কিছু যাপন
হৃদয়ে শাব্দিক অনুনাদ
প্রেম দিয়ে করেছে আপন
কোকিলের সুরের অনুবাদ
তোমাকে জানালাম শেষে
কিছু চাওয়া পাওয়ার পরে
অব্যক্ত হৃদয়ের কাছে এসে
উচ্চকিত অভিলাষ নিয়ে ঘরে
সুখে দুঃখে প্রহর কেটেছে
প্রতি ঋতুতে পেয়েছি নতুন স্বাদ
কিছু কথা হয়তো বাকি আছে
বছরের শুরুতে দিচ্ছি আস্বাদ।
আমি ও তুমি
-----------
আমি গ্রামের সূর্য ডোবা দেখেছি আর তুমি ডুবন্ত
সূর্যের গায়ে পা লাগিয়ে বসে আছো
আসলে আমার চোখে তোমার ভালোবাসা
আমি ও তুমি আগুনঘেরা মায়াজালে চুবিয়ে রেখেছি সারারাত
আমার শরীর ক্ষুধা নিদ্রায় এখনো এক যুবক
তোমার শরীর বয়স ভারাক্রান্ত
দিয়ো না আলো নিবিয়ে
আমি হারাচ্ছি শব্দ সম্মান
তোমার ডাকে জড়ো করছি শব্দের মালা
আমি এখন থাকি তোমার অপেক্ষায়
তুমি আমায় বুঝিয়ে দেবে
পোশাক ছাড়ার সহজ উপায়
আমি ও তুমি বাঁচতে চাই
সোহাগ ভালোবাসায়।
সাজসজ্জা
---------
মানুষের মনের ভেতর প্রতিদিন ময়লা জমে।মাথার ওপরে উড়োমেঘ আর কথাবার্তায় বিদ্যুতের ঝিলিক।
অসম্ভব রকম হিংসা , বিদ্বেষ-
সারা শরীরে ফুটো ফুটো হয়ে গেছে মানুষের
চাল চলন, কথা বার্তায় বেশ ঢং,আর আঁকা বাঁকা
আসলে মরিচে পড়া ছেঁদে আছে শরীরে
হঠাৎ বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে
সাজসজ্জার বিধিনিষেধ ও নেই
সবাই বলছে "বাঃ বেশ মানানসই '
ভেতরটা তো কেউ দেখতে পাচ্ছে না
শুধু দেখা যাচ্ছে বাইরেরটা
বেশ চমৎকার।
এতো সাজসজ্জা তবু্ও
ভালো মন আর ফিরে আসে না
আসলে ভেতরটা এতো অন্ধকার বলে।
দীর্ঘ পদধ্বনি
------------
মনটা এখন বিষাদে পূর্ণ
ফাঁকা ঘরে একার জীবন
ভালো লাগে না আর
সারাজীবন ধরে শূন্য বারান্দায় ডেকেছি কত করে
একবারও সাড়া আসে নি
তোমার থেকে
দূর থেকে দেখেছি তুমি পথ ভেঙে
অন্য পথে হেঁটে যাচ্ছো কত অভিমানে
আমি এক যুগ ধরে ডেকেছি
কত অনুরোধ নিয়ে
তুমি ঠেলে দিলে শূন্য ঘরে
চিরন্তন নির্বাসনে
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়িও
বাগানে বাগানে ভরে গেছে ঘাস আর ঘাস
তুলসী তলায় শ্যাওলা শুষে নেয়
কতকাল শুনে যাবো এই দীর্ঘ পদধ্বনি
এভাবে বেঁচে থাকি নির্জন ঘরে
শান্তির নিঃশ্বাস আসবে না ফিরে
একা পুড়ছি
পুড়তে পুড়তে বেঁচে আছি
এভাবেই বেঁচে থাকা যায়
প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকতে চায় তার মতো করে
আমিও মানুষ
আমিও বাঁচতে চাই
আমার মতো করে।
দেরি করে
----------
কতদূর তুমি এলে?
আরও কতদূরে ?
তবে বেশ দেরি হলো,
আমারও কিছুটা আর তোমারও কিছুটা
আসলে দুজনেরই মোটামুটি দেরি
তা হোক, সমস্যা নেই
তুমি তো জানো
রাস্তায় কত মানুষ বিপন্ন
কত মানুষ হাঁটছে এক সাথে
তাই তোমার আমার মতো
এই ভাবে কত মানুষ দেরি করে ফেরে
বাড়িতে কত অপেক্ষা
কত চিন্তার ঝড় তোলে
ভাবনা নিরন্তর
ভেবোনা তার চেয়ে বরং এসো
আর একটু দেরি করি দুজন
হাত-ধরাধরি করে সবুজের বাগানে বসি
এসো গান ধরি
আনন্দের গান
যা তুমি দিয়েছিলে
একযুগ আগে।
এসো, তুমি তোমার মতো করে
দেরি হোক আর না হোক
আমি তোমার কাছে যাবো ।
তোমার প্রেম
------------
অজুহাত নয় সত্যিই
উচ্ছ্বসিত আমি তোমার প্রেমে
আমি দুচোখ ভরে
আমি হৃদয় ভরে
দুঃসহ আনন্দে মুখরিত তোমার প্রেমে
তোমার থেকে হিরন্ময় জ্যোতি রয়েছে আমায় ঘিরে
অন্তর কুঁড়ি বিকাশে তুমি ব্যস্ত
তুমি দিনের সূর্যালোকে
প্রেমলিপির নতুন বাণী
আমাকে যে শোনাও
আমি শুনি আর উদ্বেলিত হই
সহসা বয়ে আসে প্রেম স্নিগ্ধ সলিল বাতাস
সারা নদী প্রতিধ্বনি করে
আনন্দ ভরে
হৃদয় মুখর করে
আমাকে তুমি প্রেমে বুঝিয়ে দিলে
নতুন বাণী ।
একফোঁটা অশ্রু
----------------
বইয়ের দিকে তাকাতে পারি না আর
গম্ভীরমুখে বসে আছে অশ্রুহীন চোখে
পাতাগুলো অমর্যাদায় ধূসর হয়েছে
মলাটের উঁচু নীচু চিবানো দাঁত দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত
তবুও আমার প্রেমের শক্তি হয়ে কাছে থাকে
শরীরে সমস্ত শব্দ গুলো আমার জন্য
অজানা রাস্তায় মুখোশ আর মুখের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই
সমস্ত শক্তি হারিয়ে যায়
মন ভেঙে গেলে
শুধু গায়ের গন্ধে
বই পাড়ায় পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় খুঁজে ফেরে কত স্বপ্ন
ফোনে ফোনে ঘুরে ফেরে আনন্দ
ধূসর বইগুলো
ভীড়ে হারিয়ে যায়
শুধু একফোঁটা অশ্রু
ঝরে বইয়ের শরীরে।
প্রেমিকা
-------
আমার জীবন পড়ে আছে
প্রতিদিন পাঠকের কাছে
তোমার শরীর ঘিরে আমার লালন পালন
তোমার জন্মের ইতিহাস নেই
তোমাকে নিয়ে ভালোলাগা আর ভালোবাসার শব্দ বানাই
তোমাকে নিয়ে রাত্রি যাপন
তুমি কখনো সমুদ্র হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরো
আমি তোমার স্পর্শে
সারা গাঁয়ে আর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ি
তোমার মতো আমাকে ভালো বাসেনি কেউ
তুমি আজন্ম আমার
প্রেমিকা হয়ে শরীরে ঘেঁষে রাখো
শুধুই প্রেমিকা হয়ে।
ঘর
------
আমার সংসারে শূন্যতা আসে
জানি না কী পেয়েছি আমি?
কোনো এক ভবিষ্যতে
সৌখিন উর্বরতা আনে অতীতকে
এই গাঁ,এই নদী, এই বাতাস
এঁকে দেয় রামধেনু রং
আঁকা বাঁকা পথ
এলোমেলো ধারণা
নিরবধি ক্লান্তি আনে
আমার এই ঘর
যেখানে নির্জনতা নক্ষত্রের নীচে
বেশ ভালো লাগে
মন থেকে মন কথা আনে
মুহূর্তের ইতিহাস হয়তো ইতিহাস হয় না
তবুও তাকে নিয়ে সময়ের সাথে
ঘরে বসে পাই আমি
নৈসর্গিকতার ঢেউ।
ভালোবাসা তুমি ফিরে যাও
------------------------
ভালোবাসা তুমি ফিরে যাও
এখন সন্ধ্যে, রাত্রি হবে একটু পরে
সারাটি দিন তুমি তোমার মতো খেলেছো
ভালোবাসা তুমি ফিরে যাও
ঘর দালান, পুকুর পাড়ে নিমগাছ
কতনা পরিচিত দৃশ্যের দরবারে
সন্ধ্যাকাশে নক্ষত্রের মৌন মিছিল
চলো চলো ভালোবাসা
তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসি
ভালোবাসা তুমি ফিরে যাও
আমি তোমার আসার প্রতিক্ষায়
উঠানের পাশে বসে
শেষ ভোরের আলোয় তখন
বসবো মুখোমুখি
তুমি আর আমি স্নিগ্ধ ছায়ায়
চুম্বনের আবেশে।