সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতাwww.bangla-kobita.com ওয়েবসাইটে সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়-এর প্রকাশিত কবিতাসমূহ।uuid:7d185313-565e-4d50-be79-02a6df9502c9;id=6992024-03-29T14:57:24Zhttps://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/jibanta-haito-danralo/জীবনটা হয়ত দাঁড়ালো2017-05-16T08:09:40-04:002023-06-26T02:41:54-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>থিতানো কাদার মতো ইচ্ছাগুলো,<br />চুঁয়ে পড়া, ছুঁয়ে দেখবার স্মৃতি;<br />আঙুরের গোছা, অনেক বিস্মৃতি—<br />বুদবুদের মতন উঠে এল।</p>
<br /><p>পড়া-লেখা-দেখা-শোনা-চাখা নিয়ে<br />চাওয়াগুলো তো মিটে যেতে চায়,<br />বাজারে-দোকানে-ঘরে বা রাস্তায়;<br />তবু বুঝে যাই, পরিতৃপ্তি নাই।</p>
<br /><p>গড়পড়তা ভোগটা প্রায় শেষ।<br />লোভীর মতো বেশি ক’রে খাওয়া,<br />বিলাসী সেজে পিঠ-রোদে শোওয়া—<br />স্বস্তির বদলে বাড়ালো যে ক্লেশ! </p>
<br /><p>আদা আর শ্বাস থেকে লব্ধ জ্ঞান<br />বা্স্তব দেখিয়ে ধাক্কায় সরালো,<br />বার দুই এপাশ-ওপাশ ক’রে<br />জীবনটা খাঁজে হয়ত দাঁড়ালো।<br /> <></p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/pona-palalo/পোনা পালাল2017-05-15T02:21:16-04:002023-06-26T02:41:54-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>দাদুর সত্তর আমার কুড়ি,<br />মদ্দে থেকে গেল আড়াই বুড়ি।<br />হুঁকোয় টান মারে দুজনে মিলে,<br />বড় দুখ্ পেঁয়েই দাদাই বলে।<br />ছুটু পারা ছেলেটো পড়া ছাড়ল,<br />বাসকোটো ভেঙ্গে পোনা পালাল।</p>
<br /><p>নাইনে পড়ে পোনা বয়েস ষোল,<br />এর ভেতরে ছোঁড়া বখেই গেল।<br />বদসঙ্গে মিশে বিড়ি ধরল,<br /> ক’দিনের মদ্দে গাঁজা ফুঁকল।<br />মাস্টার গোলাকে ব’ঙো দেখাল।<br />বাসকো ফাঁক ক’রে পোনা পালাল।</p>
<br /><p>উয়োকে ফিরোইতে লোক ছুটল,<br />মাসের ভেতরেই খপর এল;<br />সে অখন রইছে মেদিনীপুরে,<br />রস শুকলে পরে আসবে ঘুরে।<br />মা-মাসি-ঠাম্মারা দুঃখে কাঁদল,<br /> টাকা সোনা হাতিয়ে পোনা পালাল।</p>
<br /><p>রসকে তো উওর জেঠার বেটা,<br />ছোঁড়া বটে আবার স্বভাবে পাঁটা।<br />পোনার লাগে ডেলি তিন বাণ্ডিল,<br />রসকে দোপরেই তাড়িতে সামিল।<br />আমার নাতি দুটো বখাটে হল,<br />মায়ের বেশ গেল, পোনা পালাল। </p>
<br /><p>পোনার চ’লে যেত পকটটো ঝেড়ে,<br />রসকের জোগাড় ধান চাল মেরে। <br />পোনা টাটকা কাঁচা ও ভ্যাদভেদে,<br />খ’ দ’ ঘরেই বটে বাইরে লাদে।<br />গাঁয়ে থেকে রসকে মুখ পোড়াল,<br /> ভরি বিশেক নিয়ে পোনা পালাল।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20160125105346/স্বাধীনতা কই2016-01-25T22:54:33-05:002023-06-27T08:48:51-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>স্বাধীন হঁয়েছি স্বাধীনতা পেঁয়ে<br />খুশির কথাই বটে,<br />পরাধীন হঁয়ে কাজ ক’রে যেছি<br />স্বাধীনতা নাই মোটে।<br />স্বাধীনতা মানে কি বাঁশ-ডগায়<br />পতকাটো ধ’রে তোলা,<br />না হুল্লোর ক’রে গলাটো ফাটিয়ে<br />“জয় হিন্দ্”টোকে বলা।<br />প্যাট তো ভরেনা বাতাসটো গিলে<br />খেটে-খুটে খেতে হয়,<br />তা বলে বিবেকটোকে বাঁধা দিয়ে<br />দাস হ’ সম্ভব লয়।<br />আমাদের পারা বাবুরাও খাটে<br />ইস্কুলে আপিসেতে,<br />লাল কালি দিঁয়ে দাগ দিঁয়ে দেয়<br />দেরি হলে সেথা যেতে।<br />মেনে লিছি আমি ঠিক লয় এটো<br />ল্যাটটো ক’রে সেথা ‘য’,<br />তাই বলে কি গো স্বাধীনতা নাই<br />একটুকু জিরেন্ ‘খ’ ।<br />তুমিতো অন্ততঃ শুদোবে আমাকে<br />কেনে দেরি হল বল,<br />সিটোকে না ক’রে মিনি কারণেতে<br />দাগটো দিলেই হল।<br />পতিদিন দেখি আরো কত জনা<br />পিছে আসে আগে যায়,<br />তাদের তলায় একটোও দাগ<br />কখুনো পড়েনা হায়!<br />থালেই দেখোগো দলের লুকেরা<br />কতই সুযোগ লেয়,<br />দলের বাইরে তুমি আছ বলে<br />তুমাকে চাপটো দেয়।<br />আজকের দিনে সেই চাপ পায়<br />কাজ করে যেবা বেশি,<br />সারা দিন খাটে, খেটে খেটে মরে<br />থালেই তারা তো খুশি!<br />খুব খুশি তারা সারাদিন যদি<br />তুমি থাক পাশে পাশে,<br />যিটো চায় তারা, সিটো পাবে বলে<br />বসে থাকে তার আশে।<br />চাকরের কথা লয় এটো শুদু<br />সবার কথা বলছি,<br />সরকারি, বেসরকারি, যে হও<br />তাদের কথা তুলছি।<br />চাকর আমরা সকলেই ঠিক<br />চাকরি লিয়েছি যবে,<br />বড়বাবুদের বস্ নাকি বলে<br />তাকে তো মানতে হবে!<br />ঠিক কথা মেনে লিতে হবে যদি<br />মানার মতন বলে,<br />একচোখো ক’রে আমাকে খাটাবে<br />বল কীভাবে তা চলে?<br />কুলি-মজুর, চাষা-ভুষো আমরা<br />খেটেই তো খেতে চাই,<br />বড় পদে আছ তুমি বড়-বাবু<br />তোমার নিয়ম নাই?<br />গরীব আমরা মুনিবকে বুঝি<br />করি, মুনিব যা বলে,<br />আমাদেরও ভাই প্যাটটো আছে<br />কীভাবে আমার চলে?</p>
<br /><p>সারাদিন যেলে ষাট টাকা পাই<br />পাত পড়ে দুই গোণ্ডা,<br />শাগ্-ভাত খাই, মাছ ডিম নাই<br />চাইছি কি ছেনা-মণ্ডা?<br />বারো ঘণ্টায় মোটে ষাটটা টাকা<br />ঘণ্টার হিসেবে পাঁচ,<br />যেদিন পারি না কাজে যেতে থাকে<br />প্যাটেতে ছুঁচোর নাচ।<br />আমার খাটুনি, তোমার পয়সা<br />ব্যাঙ্কেতে জমিয়ে যেছ,<br />মেয়ে-মরদেতে কাজ করে যেছি<br />তার ফল তুমি পেছ।<br />এই স্বাধীনতা কি দিছে আমাকে<br />কই গতরের দাম,<br />সব যুগে কিগো দাসের মতন<br />ঝরাব গায়ের ঘাম?</p>
<br /><p>লিজের কথা তো অনেক বলেছি<br />তোমাদের দুটো বলি,<br />স্বাধীনতা মানে ঠিক ভাবনার<br />স্বাধীনতা নিয়ে চলি।<br />স্বাধীনতা মানে তো চুষে ‘খ’ লয়<br />স্বাধীনতা আনো কাজে,<br />লিজের ঢাকটো যেমনি বাজাবে<br />আমারও যেন বাজে!<br />স্বাধীনতা মানে সোজা পথে চলা<br />বাঁকা পথে যেতে মানা,<br />সোজা পথে তুমি দেখো সোবাইকে<br />তবেই তো হবে জানা!<br />এটো সার কথা, তুমি দেবে কিছু<br />আমি দোব কিছু আর,<br />তবেই তো হবে জানাজানি সবে<br />হবে স্বাধীনতা ধার।</p>
<br /><p>স্বাধীনতা হল ওপরে ওঠার<br />সভ্যতার এক সিঁড়ি,<br />আলগা বসলে বেথা লাগে গায়ে<br />তাইতো পাছায় পিঁড়ি!<br />স্বাধীনতা হল ভোজের মতন<br />এক সাথে ঘেঁসে বসা<br />একা খেলে মজা লাগে নাকি যদি<br />নাই থাকে ভালবাসা।<br />স্বাধীনতা কখুনো এটো বলে না<br />অপরকে পায়ে দলো,<br />স্বাধীনতা বলে আমি সাথে আছি<br />পাশে,পিছে তুমি চলো।</p>
<br /><p>সকলেই ভাবো কিসে ভাল হবে<br />কীভাবে এগুবে দ্যাশ,<br />দ্যাশের ভালটো করতে যেলেই<br />দেখতে হবে তো শ্যাষ!<br />তা তো হছে নাকো, হাতে লিয়ে শুদু<br />লিজের লিজের ঝাণ্ডা,<br />হাতের পতকাটো উল্টিয়ে লিয়ে<br />মারছে পাছায় ডাণ্ডা।<br />কেউ ভাবেনা আমরাও মানুষ<br />গরু তো আমরা লই,<br />তবু কেনে ভেদ, করছ পভেদ<br />মোর স্বাধীনতা কই?<br /><></p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20160122101742/সহনেও অপরাধ2016-01-22T22:18:42-05:002023-06-27T08:48:34-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>শ্বাসরোধকারী মাৎস্যন্যায়ে<br />অগত্যা কাঠবিড়ালি হয়ে<br />ক্ষুদ্র কণা বয়ে চলি।</p>
<br /><p>গুরুদের বাক্য ও আশিস<br />মাথায় রেখেই ক্ষীণ কণ্ঠে<br />সেই কথা গুলি বলি।<br />হালকা মিঠে জ্যোৎস্নায় নয়,<br />দৃপ্ত ভাস্করের আলোকেও<br />কেন এত অন্ধকার? <br /> <br />রাজদণ্ড হারিয়েছে কবে,<br />তবু নীতিগুলি আছে পড়ে,<br />তাই কি এত বিকার?</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20151231100039/ধ্বনি2015-12-31T22:01:16-05:002023-06-27T08:48:33-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>একটি দিনান্ত দেখছি;<br />কাকের, গরুর-পালের,<br />কুকুর, যানবাহনের—<br />বিচিত্র ধ্বনিও শুনেছি।</p>
<br /><p>ঈশ্বরকে ডাকবার<br />সাথে আর্তবেদনার<br />কণ্ঠ, ইনিয়ে-বিনিয়ে<br />তাও শুনেই চলেছি।<br />সকলেই ভড়ং করেনা,<br />একজনও পুরোপুরি না।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150703110408/প্রতিবাদ2015-07-03T23:04:48-04:002023-06-27T08:48:28-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>এ বাবু, এ বাবু, তুমি খানিক দাঁড়িন্ যাও কেনে,<br />না হলে আমার টুগদু পারা কিন্তু থাকবে মনে।<br />ঐই যে তুমি আসতে আসতে ফচাং করে ফেললি,<br />কারুর গায়ে লাগল কিনা তাকিন তু কি দেখলি? <br />পেন্টুল জামা ভালই পরেছ, দেখতে বাবু বাবু,<br />খানিক খুনিক বুঝে তো ফেল, নইলে হবে কাবু।<br />হাত পা মুখ সব আছে, আমরাও মানুষ বেটি;<br />যা যা করতে তুমি পারিস, আামরাও পারি সেটি।<br />থুতু কফ্ আসতেই পারে, ফেলবি সিটোও ঠিক,<br />পেছনে লুক আসছে দেখলে উটো ফেলা বেঠিক।<br />আমি যদি ফরাক করে তুর ছামুতে ফেলতম,<br />তা হলে কি ছেড়ে দিতিস? প্যাঁদানি খেঁয়ে মরতম।<br />ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর তুমি, ঠিক কথা কি লয়!<br />আজকের মত কেটে পড় তুমি, আর যেন না হয়।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150624111533/কর্ণাভিসন্তাপ2015-06-24T11:19:18-04:002023-06-27T08:48:26-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>শক্তিক্ষয়ে হতোদ্যম দুর্যোধন, আশা লভেছিল,<br />আমার সৈনাপত্যে ও শল্যের সারথ্যে। ভেবেছিল<br />পর্যুদস্ত পাণ্ডবের পর, সমগ্র ভারতভূমি<br />কাঙ্খিত পুষ্পের অঞ্জলির মতো, পদযুগে চুমি<br />বরিবে বিজয়ীরূপে দুর্যোধনে। এ জয় কামনা<br />ছিলনা মরীচিকা সম অবাস্তব মিথ্যা কল্পনা।<br />অশ্বত্থামা, কৃ্প, শকুনি, শল্যাদি দুর্যোধন সনে—<br />কর্ণ জিনিতে পারে, নর-নারায়ণ, কৃষ্ণ-অর্জুনে।<br />আমার সংগোপনে লালিত, সেই সুদীর্ঘ বাসনা,<br />স্তব্ধ হল, সায়ংকালে, জাহ্নবী তীরে। যে কামনা,<br />জ্ঞানোন্মেষের সাথে সুতীক্ষ্ণ শেল হয়ে আছে গাঁথা<br />যতবার শুনিয়াছি, অর্জুনের বীরত্বের কথা।<br />ধিকিধিকি তুষানলের অসহ্য হিংসিত প্রবৃত্তি,<br />প্রজ্জ্বলিত ঘৃতাহুতি রূপে; আজ ঘটাতে নিবৃত্তি—<br />দুর্যোধন বরিয়াছে কুরু সেনাপতি রূপে মোরে<br />জিনিতে পাণ্ডবে। কিন্তু বিধি পাঠালেন জননীরে,<br />শোনাতে এক নির্মম ইতিহাস। তাঁরই গর্ভজ<br />সে যে, কানীন কৌন্তেয়, ঐ পঞ্চ পাণ্ডবের অগ্রজ!<br />নিষ্ঠুর সত্য উদ্ঘাটিত হল, প্রায়-অন্তিম দিনে,<br />মোর গর্ভধারিণীর শ্রীমুখের মৃদু উচ্চারণে।</p>
<br /><p>এই পরিচয় লভি মানবেরা ধন্য হয়ে যায়,<br />আর পুণ্য এই সত্যটি নিথর করিল আমায়।<br />নিমেষেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল বিজয় প্রয়াস;<br />লভিলাম অন্তরেতে দিব্যজ্ঞান, করিছে নিরাশ<br />যা সেই শিশুকাল হতে বারংবার। রয়েছে জ্ঞাত,<br />ধরায় প্রথম আলোক স্নানের পর মোর মাতঃ,<br />ভাসায়েছে মোরে বেতস মান্দাসে, জাহ্নবী সলিলে,<br />অদৃষ্টের হাতে। সৌরি হয়ে সূত জননীর কোলে<br />স্থান লভি, ভাগ্য গুণে সেই ক্রোড়ে স্তন-দুগ্ধ মাখি<br />বলবীর্যে প্রদীপ্ত হয়েছি। তারপর ভূমে রাখি<br />পদদ্বয়ে কৈশোরে এসেছি। জানিনা কিসের ঘোরে<br />ছলনায় ব্রাহ্মণের বেশে অস্ত্র-বিদ্যা শিক্ষা তরে,<br />জামদগ্ন্য-পাদপদ্মে স্থান লভি, শিক্ষান্তে গুরুর<br />মর্মান্তিক অভিশাপ লভেছি, যা দিয়েছে মরুর<br />ঊষরতা, আমার বিড়ম্বিত জীবনে। আনয়ন<br />করিবে যা এই জীবনের পূর্ণচ্ছেদের কারণ।</p>
<br /><p>শিক্ষাচ্ছলে, অনিচ্ছাকৃত সামান্য এক ভ্রান্তিবশে,<br />বধেছি দরিদ্র ব্রাহ্মণের গো-বৎসেরে,যার রোষে,<br />পেয়েছি অন্তঃকালে রথচক্র মৃত্তিকায় গ্রাসের<br />অভশাপ। যে চিহ্ন ছিল পরম শত্রুর ত্রাসের<br />দেবরাজ ইন্দ্রের চাতুর্যপূর্ণ অন্যায় কৌশলে<br />হারিয়েছি মোর সেই সহজাত কবচ-কুণ্ডলে।<br />ব্যয় করেছি বিনিময়ে প্রাপ্ত একাঘ্নি দিব্যবাণে,<br />ভয়াল নিশিযুদ্ধের কালে ঘটোৎকচের হননে।<br />কুরু-পাণ্ডবের অস্ত্র-পরীক্ষার দিনে, অকারণে<br />কুবাক্য লভেছি, সূতপুত্র বলি। একই কারণে,<br />দৌপদীর স্বয়ংবর সভায় জ্যা-বদ্ধ শরক্ষেপে<br />বিরত হয়েছি। আর আ্জ, এই অন্তিম দিনান্তে,<br />ভাগীরথী তীরে হারালাম সব, জন্মের বৃত্তান্তে!</p>
<br /><p>জানি আমি, পৌরুষ দ্বারা দৈবও পরাভূত হয়,<br />কিন্তু কি জ্যেষ্ঠ হয়ে গাণ্ডিবী হনন, কখনও নয়।<br />জানুক না ভুবন, কর্ণাপেক্ষা অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব,<br />আমার মৃত্যুর পর অর্জুন তো জানিবে অন্ততঃ;<br />কেন চলিলন মোর দিব্যবাণ বজ্রসম তেজে,<br />অগ্রে জাত হয়ে কেমনে বধিব আপন অনুজে?<br />কৌরবেরা বুঝিবে, কর্ণ বিমুখ নহে রণাঙ্গনে,<br />অন্ততঃ শেষ চেষ্টা করিয়াছে, রক্ষিতে দুর্যোধনে।</p>
<br /><p>কেবল পাইনি উত্তর আমি একটি জিজ্ঞাসার—<br />সূর্যপুত্র হয়ে কেন পেলাম এই বিড়ম্বনার<br />জীবন? সমগ্র ভুবন যাঁর কৃপায় পুষ্ট হয়,<br />তাঁর পুত্র কর্ণ, কেন এত প্রতিকূলতাকে সয়!</p>
<br /><p>হে দেবার্চিত দুর্বাসা, এত ঘটনার আদিমূলে<br />একমাত্র তুমি। জানিনা কিজন্য ফলাফল ভুলে<br />দাতা সেজেছিলে গর্ভধারিণীর কাছে?পরিতুষ্ট<br />ছিলে যদি অন্য বর ছিলনা কি করিতে সন্তুষ্ট<br />তোমার ঝুলিতে? দাতার সম্মান লভি,তুমি খ্যাত<br />ত্রিভুবনেতে; আর পুত্রের বর লভি মোর মাতঃ,<br />কাটালেন তিতি অশ্রুজলে, তাঁর সারাটি জীবন;<br />বল, ত্রি-কালজ্ঞ ঋষি, এই বর কিসের নিদান?</p>
<br /><p>হে আমার পিতৃদেব, তুমিই বা কেমন জনক?<br />পুত্রকে তোমার ধরায় রক্ষিতে কেন অপারক?<br />তুমি তো এই সমগ্র সৌর-জগতের অধিপতি;<br />তোমার সন্তান তবে কেন হল এত মন্দমতি?<br />বেশ তো ছিলাম আমি রাধা জননীর কোলে;<br />কেন জন্ম নিল এত আশা জিনিতে অস্ত্র-কৌশলে!<br />কে কু-ইচ্ছা প্রজ্জ্বলিত করেছিল ছলিতে গুরুরে,<br />বিপ্রের মিথ্যা পরিচয়ে? কেন বধেছি গো-বৎসেরে<br />তুচ্ছ ভুলে, শস্ত্র-পারঙ্গমতা লভি? কোন্ আশায়,<br />দুর্যোধন সঙ্গে বার বার চাটুবাক্যের ধারায়,<br />উত্তেজনা বাড়িয়েছি? কখনও কেন ভাবি নাই,<br />এ অনুচিত, এ অন্যায়, এ পরমতম অন্যায়!<br />তাই ভাবি, অভিমন্যুর মতোই আজি নিশিকালে,<br />অমিও পরিবেষ্টিত হয়ে আছি সপ্ত-মহাকালে।<br />নির্মম মতিতে শিশুরে বধিতে তুলিয়াছি শরে,<br />যেগুলি সপ্ত-মহাকাল রূপেতে বেষ্টিয়াছে মোরে,<br />চারিদিকে একই কৌশলে। –অভিশাপ শ্রীগুরুর,<br />অভিশাপ ব্রাহ্মণের —দুই মহাকাল। জননীর<br />জন্মকালে পরিত্যাগ, দেবেন্দ্রের কবচ হরণ—<br />আরো দুই কাল। অস্ত্র পরীক্ষার দিন আস্ফালন—<br />পঞ্চম; যাজ্ঞসেনীর স্বয়ংবরে সূতপুত্র বলে<br />মোরে বর্জন—ষষ্ঠ মহাকাল; আর দিনান্তকালে<br />মোর মাতার পুত্র সম্বোধন—সপ্তম মহাকাল<br />রূপেতে আগমন।</p>
<br /><p> সপ্তরথীর থেকেও ভয়াল<br />আমার নিয়তি রূপে আসিতেছে দৃঢ় পদক্ষেপে<br />মিটাতে যুদ্ধ-বাসনা। কেউ জানিবেনা কী আক্ষেপে<br />কর্ণ নাম লুপ্ত হবে এই ধরা হতে,অনাদরে<br />অসংগীত থেকে! জননী আমার, যাঁর উদরেতে<br />কাটিয়েছি গর্ভকালীন আমার এই দেহখানি,<br />তিনিও বিমুখ সত্য কথনে! অয়ি,অভিমানিনী<br />থাকো তুমি পঞ্চ পুত্রেরই মাতারূপে, রাখো জ্ঞাতে,<br />কোন জনমেই আর নাহি চাহি জনম লভিতে<br />ঐ গর্ভেতে! শোনো, যে কথা দিয়েছি নহি হবে আন্<br />অর্জুন ব্যতীত কাহারেও হানিব না মৃত্যুবাণ।</p>
<br /><p>সদ্যগত সন্ধ্যাকালে, যবে কথা দিয়েছিনু আমি,<br />এক রূঢ় প্রশ্ন প্রাক্-উচ্চারণে গিয়েছিল থামি।<br />-পঞ্চ পাণ্ডবের জন্ম-ইতিহাস সকলের জ্ঞাত,<br />জ্যেষ্ঠ হয়ে মোর ইতিহাস কেন থকিবে অজ্ঞাত?<br />কেন সমক্ষে বলিতে পারোনা, ‘কর্ণ, পুত্র আমার,<br />সূর্য-বরেতে জন্ম নিয়েছিলি এই তুচ্ছ ধরায়’।<br />-পঞ্চ পাণ্ডবের জন্মের পর এই সত্য প্রকাশ,<br />রাখিত না কুন্তি মাতার লজ্জার কোন অবকাশ।<br />পিতামহী সত্যবতী তো গোপনে রাখেননি তাঁর<br />কন্যাকালে প্রসূত ব্যাসদেবের পরিচয়, যাঁর<br />বরে কৌরব-পাণ্ডব সম্মানিত সমগ্র ভারতে!<br />একই বংশের বধু হয়ে কেন পরোনা জানাতে<br />মোর জন্ম-ইতিহাস?</p>
<br /><p> যাক্ মাতা, যা ঘটেছে যাক্,<br />মোর বিড়ম্বিত কথা, মৃত্যুপূর্বে অনুক্তই থাক্।<br />এই অন্তিম সময়ে ঊর্ধ্বাকাশের উল্কাপতন<br />হেরি বুঝিতেছি দ্রুত আসিতেছে আমার শমন।<br />তাই, আরো কিছু হৃদয়ের উদ্বেলিত গুপ্তকথা,<br />বলে যাই, এই রণভূমে, মধ্যযামে, যা বারতা<br />হিসাবেতে ধরে নিতে পারো—হে ত্রি-জগতের প্রভু,<br />কৃষ্ণ-নারায়ণ। তুমি তো সকলই জানিতে! কভু<br />কি এক পরম আন্তরিকতায় আমারে চাইতে<br />ষষ্ঠ-পাণ্ডবের প্রথম পাণ্ডব হিসাবে বরিতে?</p>
<br /><p>হে ত্রি-জগতের নাথ, -আমি যে মূঢ়, কার্যকারন<br />তো বুঝিনা; তবুও প্রশ্ন, এই কর্ণেরে নিবারণ<br />করা ছিল কি তোমার পক্ষেও নিতান্তই দুঃসাধ্য,<br />বোঝালেও বুঝিবনা, আমি কি এমনই অবাধ্য?</p>
<br /><p>জানি, জীব জন্মে এ ধরায় কিছু কর্তব্য সাধনে,<br />মোর জন্ম কি শুধু পাণ্ডবের বৈরিতা সম্পাদনে?<br />তা না হলে শৈশাবধি, কেন অদৃশ্য শক্তির টানে,<br />পতঙ্গের মতো ছুটিয়া চলেছি পাণ্ডবের পানে,<br />দুর্বার গতিতে।</p>
<br /><p> তুমিই শুধু জানোনা নারায়ণ,<br />আমিও জানি, কখন কর্ণের সর্বশেষ শয়ন।<br />-অর্জুন বধিবে আমারে আগামী সূর্যস্তের আগে,<br />এক দূরন্ত রণে। অঞ্জলি পাতি তাই কর্ণ মাগে,<br />এক সম্মানীয় বীরগতি, প্রভু, করোনা নিরাশ,<br />অন্তে, তব শ্রী-পদে রাখি মিটিও অন্তিম পিয়াস।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150623022120/কৃষ্ণা-পাঞ্চালী2015-06-23T02:22:02-04:002023-06-27T08:48:19-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>পাঞ্চাল নরেশের বীতকাম মন্ত্রে সঞ্জাতা,<br />আমি দ্রৌপদী, কৃষ্ণা-পাঞ্চালী, দ্রুপদ-নন্দিনী;<br />যজ্ঞ-অগ্নির পবিত্রীকৃত শিখায় উত্থিতা,<br />নীলোৎপল সৌরভা, শ্যাম বরনা যাজ্ঞসেনী।<br />পাপাচারী সকৌরব ক্ষত্রিয় কুলনাশান্তে-<br />ধর্মরাজ্য স্থাপনে পাণ্ডবের সহকারিণী,<br />বাসুদেব-কৃষ্ণ সখী,পার্থ-অর্জুন বিজিতা,<br />এক অঙ্গে পঞ্চ-পাণ্ডবের প্রধানা ঘরণী।</p>
<br /><p>এই পরিচয়ে আমি খ্যাতা সমগ্র ভারতে;<br />কোথাও অসাধ্বী রূপে পঞ্চ পতির কারণে।<br />কেহ কি কভু চিন্তিয়াছে কেন এই রূপেতে<br />প্রকাশ; কি বা কারণ পঞ্চ পাণ্ডব বরণে?<br />অর্জুনের শৌর্যে বিজিতা, তাই অবশ্য তার<br />সমধিক অনুরাগিণী, তা পরম নিশ্চিত,<br />তথাপি ইন্দ্রতূল্য পঞ্চ পাণ্ডবেরে একটি<br />মালিকায় গ্রন্থিত রাখিতে, ইহাই বাঞ্ছিত!<br />-এই সুকর্ম সেদিন কয়জন ভেবেছিল<br />পূর্ণ ভারতে? অথচ কয়মনে একজনে<br />ভজে, এমন নারীর সংখ্যা এই ধরাতলে<br />গণনার সারণিতে আছে নিতান্ত নগণ্যে।</p>
<br /><p>জানি আমি যুগযুগান্তরে চলিতে থাকিবে<br />মোর দুঃসাহসিক কর্মের এই বিশ্লেষণ;<br />অথচ ঔচিত্য প্রশ্ন আসেনা কি পার্থ ছাড়া<br />অন্য পাণ্ডবের পত্নীগমনের আচরণ?<br />কোন দ্বিধা তো দেখি নাই অন্যান্য পাণ্ডবের<br />মোর সান্নিধ্যে, বরং দেখেছি আগ্রহ অত্যুগ্র<br />গর্ভ সঞ্চারণে! তাই বারবার হাসিমুখে<br />করেছি গর্ভধারণ, যেন কামনা উদগ্র!<br />কোন্ নারী চাহে বারবার সন্তান প্রসব<br />করি বিগত-যৌবনা হতে এ তিন ভুবনে?<br />আমার অন্তরের সেই অসহনীয় ক্লেশ,<br />হৃদয় উন্মুক্ত করি এবে প্রকাশি কেমনে?<br />নিরুপায় তাই আমি পঞ্চ পতিরে ভজেছি<br />দেহ-শতদল মেলি। গর্ভে নিয়ে দৃপ্ত বীর্য<br />উপহার দিয়েছি ক্রমে ক্ষুদ্র পঞ্চ পাণ্ডবে,<br />প্রকাশে সমর্থ যারা আপন আপন শৌর্য।<br />হে প্রিয় সখা কৃষ্ণ, কেবল জ্ঞাত ছিলে তুমি<br />মোর অন্তরের তীব্র বেদনার ভাষা, তাই<br />পঞ্চ পুত্রেরই সত্তা নষ্ট করে রাখিলেনা<br />দশ পাণ্ডবে একত্রে, কোন গুঢ় কামনায়।</p>
<br /><p>যজ্ঞ-বেদি হতে উত্থানের পর অদ্যাবধি<br />অসংখ্য যাতনা সহিয়াছি আমি, যে গুলির<br />কোনটাও ঘটে নাই অন্য কোন রমণীর<br />জীবনাচরণে। তাই মুক্ত-বেণী বন্ধনীর<br />এই স্মরণীয় লগনে, চালচিত্রের মতো<br />একে একে আসিতেছে সব, স্মৃতি রোমন্থনে।<br />-পার্থের লক্ষ্যভেদ, ভীমসেনের দুষ্ট বধ<br />ছাড়া কোন রমণীয় স্মৃতি আসেনা স্মরণে।</p>
<br /><p>যজ্ঞ-বেদি হতে আমার উত্থানও ছিলনা<br />কাঙ্খিত, দ্রোণ বধের নিমিত্ত ধৃষ্টদুম্নের<br />আবির্ভাবই ছিল একান্ত অভিষ্ট। দিলনা<br />কেহই মোরে ঈপ্সিত সম্মান; ভীমসেনের<br />দুষ্ট বধে—রক্ষণ ও বেণী বন্ধন ব্যতীত।<br />ত্রয়োদশ বর্ষব্যাপী যে ভয়াল দাবানল<br />প্রজ্জ্বলিত অন্তরে আমার, হয়ত বা আজ<br />তা কিঞ্চিত প্রশমিত, তথাপিও রয়ে গেল<br />চিরস্থায়ী ক্ষত রূপে পূর্ণ জীবনের মতো।<br />কোন রমণীয় মুহূর্তও আসেনা স্মরণে,<br />যা বিস্মরণ করাতে পারে কৌরব সভায়<br />যে অমানবিকতা ঘটেছিল বস্ত্রহরণে!<br />সুরাপান, মৃগয়া ও পর-দার গমনের<br />মতো রাজ-অক্ষক্রীড়া এক অধর্ম ব্যসন।<br />তদুপরি কেমনে কপটতায় সিদ্ধহস্ত<br />শকুণিরে দ্যূতমঞ্চে নির্বাচনে দুর্যোধন!<br />কেশব, এই জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা যাজ্ঞসেনীর<br />সর্ব সকাশে। কেমনে ধর্মধ্বজাধারীগণ<br />উপেক্ষা করেন কৌশলী কুচক্রী শকুণির<br />দুর্যোধনাদির কুকর্মে উদ্বুদ্ধের ইন্ধন?<br />কোন্ সে স্পর্ধায় বর্বরতার সীমানা মুছে<br />দুর্যোধন চেয়েছে আমার সান্নিধ্য, ভজনা?<br />আর ধর্মতত্ত্বের আড়ালে ধ্বজাধারীগণ<br />সহ আমার পঞ্চপতি করেন প্রতারণা?</p>
<br /><p>জন্মসূত্রে প্রতিটি মানব এ ধরায় পূর্ণ<br />স্বতন্ত্র, এমনকি মাতার কাছেও স্বাধীন।<br />কোথায় নিহিত আছে সেই ধর্ম যা স্বাতন্ত্র<br />বিলোপ করি তাকে করিতে পারে পরাধীন?<br />অন্ধ স্তাবকদল, সভাসদ একবারও<br />ভাবিলনা জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির রাজচক্রবর্তী<br />সম্রাটই শুধু নহেন, হস্তিনাপুরেরও<br />তিনি অধিকারী, এ পাঞ্চালী স্বাধিকারে কর্ত্রী!<br />-অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র শুধুমাত্র কার্য-নিয়ামক,<br />তথাপি কোন্ অধিকার বলে তিনি পারেন<br />বলিতে পঞ্চ পাণ্ডব হল দাস, এ পাঞ্চালী<br />দুর্যোধনে সেবদাসীরূপে করুক ভজন।<br />সভাগৃহ কি বিস্মৃত হয়েছিল সেই আর্ষ—<br />“পরদ্রব্যেষু লোষ্ঠ্রবৎ,পর-দারেষু মাতৃবৎ”?<br />অবশ্যই, তা না হলে এই ঘৃণ্য আচরণ<br />কীরূপে সম্ভব, যা কলুষিত করে জগৎ!</p>
<br /><p>শুধু বস্ত্রহরণ কেন; কীচক, জয়দ্র্থ,<br />উপকীচকদের দ্বারাও লাঞ্ছনার ব্যথা,<br />বার বার ফিরে এসে কৌরব সভার মতো<br />ক্লেশ দিয়ে যায়। দেখেছি কী গভীর মমতা<br />দিয়ে তুমি ভীমসেন, এ অসহণীয় ক্লেশ,<br />পাঞ্চালীর সেই সর্বলজ্জা তুমি মুছেছিলে;<br />পাণ্ডবের সর্বকরণীয় দুই ভুজে নিয়ে<br />একক সংগ্রামে তুমি মোরে জয় করেছিলে!</p>
<br /><p>যখন আনুপূর্বিক সব চিন্তে দেখি,ভেসে<br />ওঠে ধর্মভীরু জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের শুষ্ক মুখ,<br />তখনও সকষ্টে ভাবি ধর্মশৃঙ্খলে বাঁধা-<br />এই অসহায় রূপে তিনি পেলেন কী সুখ!<br />-আমার এ হেন লাঞ্ছনায় উদভ্রান্ত হয়ে<br />ক্ষোভে-দুঃখে যা কিছু বলেছি তাই নহে মোর<br />অন্তরের কথা, কারণ পাঞ্চালী যে দেখেছে<br />তাদের সর্বাঙ্গে উঠেছে ফুটে মোর লজ্জার<br />থেকেও বহুগুন বিষাদতর অভিব্যক্তি,<br />নিকট ভবিষ্যে যা ধ্বংসিবে সমস্ত কৌরবে।<br />মান্যতার সীমা শুধু রেখে স্বীয় অধিকার<br />প্রতিষ্ঠা করিবে ধর্মরাজ্য-স্থাপন গৌরবে।</p>
<br /><p>কৌরব ধ্বংসে, পাণ্ডবের বিজয়-রণবাদ্যে,<br />ধর্মরাজ্য স্থাপনের এই পূর্ণ সন্ধিক্ষণে<br />আরো এক আনমনা মুখ ভেসে উঠে চোখে<br />মিশে যায় জননী কুন্তির ক্রন্দনের সনে।<br />সে করুণ মুখ কাহার জানো কি কেশব?<br />-জ্যেষ্ঠ কৌন্তেয় দানবীর বসুসেন কর্ণের!<br />যাঁর অভিশপ্ত জীবনের কর্মাচরণের<br />ভিত্তিভূমিও ছিল অনন্য পরম ধর্মের।<br />জানিনা কী কারণেতে পূর্বেও অসংখ্যবার<br />পড়েছে স্মরণে, প্রতিবার অন্তরে যা দহে<br />গভীর সমবেদনায়, তা রেখেছি গোপনে;<br />ভেবেছি বাইরে যা প্রকাশিত, তা সত্য নহে।</p>
<br /><p>তুমি তো নিশ্চিত জানিতে কেশব,পাণ্ডবের<br />সাথে তার রক্তের সম্পর্ক, আপন শক্তিতে;<br />আমার অন্তরও বলেছিল একই কথা<br />মোরে ঐ শ্রীচরণের প্রতি অচলা ভক্তিতে।<br />এ পরম শক্তি হয়ত তোমারই প্রসাদে<br />বর্তেছিল এই তুচ্ছা কৃষ্ণা-পাঞ্চালীর মনে,<br />আর তারই তরে অভিনন্দিত করিতেছি<br />তোমায়, জননী কুন্তি ও তাঁর ছয় সন্তানে।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150519015859/নয়নরে তোর কলঙ্ক আছে2015-05-19T01:59:58-04:002023-06-27T16:18:01-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>আর সকলের মতো আমিও <br />তোমার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিই<br />মুগ্ধ কৌতুহলে;<br />নব রস চকিতে তরঙ্গ তোলে,<br />দশ মহাবিদ্যা ফুটে ওঠে<br />স্বকৃত কৌশলে।</p>
<br /><p>পুষ্পবাণ নিক্ষেপণ?<br />-ওতো ছেলেখেলা!<br />পরমেশ্বর প্রাপ্তির <br />ছলা-কলা প্রদর্শন,<br />লাজুক মনের তির্যক উপযোজন,<br />কিংবা লালসাবৃত গ্রাসের<br />অদ্ভুত বিবর্তন-<br />সবই অধিগত<br />তোমার কেন্দ্রীয় গোলকে।</p>
<br /><p>এত পারো তুমি!<br />-কে না মুগ্ধ হবে?<br />তবুও তোমায় অনেকেই চেনে বন্ধু,<br />তাই দুগ্ধে গোচনার মতো<br />তোমার নিন্দার কথা <br />চলে অন্তরালে;<br />তখন তুমিও শ্রেষ্ঠত্ব খুইয়ে<br />রও সাধারণের দলে।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150516032733/বোদের খাওয়া হলনা2015-05-16T03:30:45-04:002023-06-26T19:55:22-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>কেনেলে জল নাইকো ইবার বোরো হবে নাকো,<br />মুনিষের ডাক আসবেনা আর ঘরে বসে থাকো।<br />ধান নাইকো গোড়ার ভেতর চালও নাই হাঁড়ায়,<br />কেমন করে মরদ হঁয়ে বৌটোর ছামুতে দাঁড়ায়।<br />দাদনের কথা বলতে গেলাম, মোড়ল গেল রেগে,<br />লাগপেটেতে ছেলাম ওর কাছে, তবুয় এলাম ভেগে।</p>
<br /><p>হেঁটে চললাম বাড়ীর বাগে, মনে আমার দুখ,<br />দিনে রেতে চ্যাষ্টা করলাম, টুগদুও নাই সুখ।<br />পথের পাশে আদার পকুর বাঁশ গাছেতে ভরা,<br />জল নাইকো শুকিয়েঁ যেছে, এমনি পড়ল খরা।<br />তো, বসে পড়লাম ছ্যাঁ দেখে তেঁতুল গাছের তলে,<br />ট্যাবটো পেড়ে শুঁয়ে পড়লাম, ঐ চিন্তাটো এল চলে।<br />তলিয়েঁ গেলাম ঘুমের ভেতর স্বপুন দেখলাম কত,<br />মারাংবুরু আমাকে আদেশ দিছে নিয়ে যা চাল যত।<br />লোব কিনা ভাবলাম ইকবার, দ্যাবতাতেই তো দিছে,<br />ওপসে আছি, বেচার করার চিন্তা করাটো মিছে।<br />ট্যাবে লেলাম, কোঁচরে লেলাম, কলসেতে লেলাম কিছু, <br />ন্যাংটো হতে বাকি থাকলাম গেলাম হঁয়ে নিচু।<br />আনন্দের চোটে ডগমগ হলাম, নেশাখোরের মত যেছি,<br />দারুর নেশাও টানছে নাকো,দাকার গন্ধই পেছি।</p>
<br /><p>ঘরেতে ঢোকলাম, বৌটোকে ডাকলাম, দেখালাম কত্ত চাল,<br />গোড়াতে-হাঁড়াতে আমি রখছিগো, তু দিতে থাক জ্বাল।<br />বেটা-বিটিকে ডুব দিতে বল, গরম গরম খেঁয়ে লেবে;<br />ফ্যানটোকেও রাখিস মালসার ভেতর, বুলুং-শুলুং দিঁয়ে খাবে।<br />বৌ উঠে গেল, হাঁড়ি নিয়ে এল, আকাতে গুঁজল বা’ল,<br />খ’য়ে-বাসকোতে টানাকাঠি দিঁয়ে ধরিয়েঁ দেলাম জ্বাল।<br />আর হঁয়ে গ্যাল, মোটে দেরী নাই, বেরিয়েঁ আসবে ফেনা;<br />প্যাটে ভাত দিঁয়ে মেঝেতে গড়াব, গায়েতে জড়াব টেনা।<br />হঠাৎ শুনলাম, সরাৎ করে, কি যেন পড়ল পাশে,<br />দেখি শুখা-বেলের খ্যাংড়া একখানা, পড়ে আছে তেঁতা ঘাসে।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150510021036/অজানা প্রত্যাশা2015-05-10T02:11:54-04:002023-06-27T16:17:49-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>পানকৌড়ির মতো জলে ডুব দিই বারংবার।<br />মাছ, পোকা, উদ্ভিদ কিংবা গাত্রজ্বালা মেটাবার<br />জন্যই এবং আবার...। যাযাবরী বৃত্তিটা টেনে<br />নিয়ে আসে পড়ন্ত দুপুরে, বিকালে সেই নির্জনে<br />নিঃসঙ্গ পুকরে। হয়ত লজ্জাশীলা সন্ধ্যামণির<br />মতো দলোন্মীলন চায় সন্ধ্যায় মুখ ঢাকিবার<br />তরে, ছোঁয়াচে ঐ সূর্যের আলোয় যদি দেখা যায়<br />বুকের খাঁচায় শুষ্ক প্রদীপ, সলতে যার নাই।<br />কখনও অন্ধকারে সূর্যাস্তের পরে রত্নাকর<br />সেজে ইষ্টনাম উল্ টে যাই যবে না প্রভাকর<br />ক্ষীণ কণ্ঠে আমারে নাড়িয়ে দিয়ে সম্বিত ফেরায়।<br />ধ্যান ভাঙ্গি রত্নাকর অনুভবে শুষ্ক বালুকায়<br />আসন্ন রাত্রির শৈত্য-সঞ্চারণ শিরায় শিরায়।<br />আকশমণির পর্ণসম ইন্দু বিস্তারে মায়ায়।</p>
<br /><p>নতুন ঊষার আশে প্রতিটি দুপুর বা সন্ধ্যায়<br />পানকৌড়িটা আসে একবার অজানা প্রত্যাশায়।<br />কি রহস্য আছে পদ্ম-পানা ভর্তি নির্জন পুকুরে?<br />কি মায়ায় বাঁধা পড়ে প্রতিটি সন্ধ্যায় বা দুপুরে!</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150508114006/যোগ্য হও আগে2015-05-08T23:42:26-04:002023-06-26T19:55:17-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>মধু গন্ধ আকর্ষণে অবেলায় ধাই<br />অন্ধ বেগে তোমার সৃষ্ট উদ্যানে।হায়,<br />কোথা বসি; ফুল-ফল-পাতা-বোঁটা-শাখা,<br />সব ভর্তি মধুলোভীদের ভীড়ে।পাখা<br />শুধু উত্তুঙ্গ হয়ে,সানন্দে নড়ে ধীরে<br />মৃদু-মন্দ-পবনে।হতাশ তবু ভীড়ে<br />মিশে গেনু দলে,খুঁজি একটুকু স্থান,<br />যেখানে সম্ভব হবে কাম্য মধু পান।</p>
<br /><p>নাই কোনও স্থান এ বিশাল উদ্যানে<br />মোর তরে। বিফলতা এল এ ভ্রমণে<br />শুধুই।যবে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছি,<br />সহসা শূণ্য এক স্থানে মাত্র গিয়েছি,<br />ধ্বনি এল কানে,হেথা নয় অন্য স্থানে।<br />আপনারে যোগ্য কর আগে গুণে-মানে।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150506105323/গ্রন্থাগার2015-05-06T10:57:52-04:002023-06-27T08:47:10-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>মসী অক্ষর-বরে তুমি ভারতীর জ্যেষ্ঠ সন্তান,<br />হৃদয় চেতনার উন্মেষ-কথা মুক্তামালা করি, <br />ছন্দে ছন্দে অপূর্কৌশলে কত তিলোত্তমা গড়ি,<br />সানন্দে বক্ষে করেছো ধারণ, ঔজ্জ্বল্যে যা অম্লান।</p>
<br /><p>যুগ যুগ ধরি হাসি-গান-কথা,পেম-ব্যাকুলতা,<br />সোহাগ-বিরাগ,বিজ্ঞা্ন,কলা,কৌশল রাশি রাশি;<br />সুখ-দুঃখ,আশা-নিরাশা,ত্যাগ-তিতিক্ষা পাশাপাশি,<br />সঞ্চিত তোমার ভাণ্ডারে,তবু রয়েছে অপূর্ণতা।</p>
<br /><p>যে হৃদয়ের ভাষা, রেখেছে ভাণ্ডার অপূর্ণ করি,<br />সে অসংখ্য অক্ষৌহিণী দলে আমি ক্ষুদ্র এক কণা;<br />সাধ আছে, সাধ্য নেই, প্রচেষ্টা, বাজাব মনোবীণা<br />অন্ততঃ একদিন, হে গ্রন্থাগার, সাধ্যমত বরি।</p>
<br /><p>তব অনির্বেদ সান্নিধ্যে দ্যূতিময় অসংখ্য গুণী,<br />নিশিদিন ক্লান্তিহীন এক আন্তরিক প্রচেষ্টায়;<br />অধিগত, স্বকৃত, আত্মস্ত ক’রে মৌন আকাঙ্খায়<br />যা কিছু নিজের বলেন, তাঁরাও তব কাছে ঋণী।</p>
<br /><p>তাঁদের গর্বের যা কিছু সম্পদ সে তোমার দান,<br />দাক্ষিণ্য লভে হ্লাদিনী শক্তিকে, বিনিদ্র সাধনায়;<br />যে শক্তির অনাদ্য ধারায় গড়ে নতুন অধ্যায়,<br />কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তা একদিন দেয় প্রতিদান।</p>
<br /><p>সভ্যতার বিজয়যাএা তুমিতো স্বচক্ষে দেখেছো,<br />রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও জাতির উথ্থান-পতন, <br />মানবতার মৃত্যু, দাসত্ব, শ্রেষ্ঠত্বের আস্ফালণ-<br />সবই তুমি বর্ধমান কায়ায় সযত্নে রেখেছো।</p>
<br /><p>অদ্যাবধি তবু তুমি আমাপেক্ষা রয়েছো অপূর্ণ,<br />এখনও আছো তুমি সভ্যতার কৈশোর জীবনে,<br />এখনও অগম্য পথ সদূর সম্মুখ-বিজনে।<br />কে জানে কোন্ অনির্দ্দিষ্ট ভবিষ্যে হবে তা সম্মূর্ণ?</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150505114743/তব গন্ধে সব ভরপুর2015-05-05T11:49:21-04:002023-06-27T08:47:02-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>শুনেছি বল্মীকবদ্ধ তপস্বী রত্নাকরে,<br />মুক্ত করেন প্রজাপতি বাল্মীকি ঋষিরে।<br />গৌতমও ধ্যানে থাকি বোধিবৃক্ষমূলে<br />বুদ্ধ রূপে আবির্ভূত হন শাক্যকূলে।<br />তপস্যার প্রভায় পরম সত্যের সন্ধানে<br />অসংখ্য সাধক বসেছেন কত তপবনে।</p>
<br /><p>তু্মিও নব সাধনার পথ দেখিয়েছ কবি<br />কবিগুরু রূপে স্বীকৃ্ত তাই পৃথিবীর রবি।<br />তোমার সাধন ফলের অমৃত বর্ষণে<br />সর্বাঙ্গ জুড়িয়ে যায় মন-প্রাণ সিঞ্চণে।<br />তোমার বিচরণ জীবনের সমস্ত ভাবনায়<br />তোমার রথচক্র রেখা দেখি সমস্ত কল্পনায়৷<br />মনের প্রতিটি কোণে রয়েছে তোমার বাসা,<br />মস্তিষ্কের ধূসর খাঁজে বাঙ্ময় তোমার ভাষা।<br />চেতনে অচেতনে কত সুগন্ধ ছড়ায়ে,<br />রচেছ অপূর্ব মালিকা মুকুতা জড়ায়ে।<br />মৌলিক চিন্তার খোঁজ করতে কখনও বা দেখি,<br />হাসনুহানার গন্ধে ভরপুর,মোর চিন্তা মেকি।<br />তোমার চৈতন্য দেখি, আমি অচেতন হই,<br />বাহ্যজ্ঞানশূণ্য আমি শুধু মূক হয়ে রই।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150428114153/বেদজ্ঞ বৈশাখ2015-04-28T11:42:39-04:002023-06-27T16:17:47-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>ঋতুদের রঙ্গমঞ্চে প্রথম প্রবেশ<br />বেদবিৎ ঋষি রূপে,<br />রাখে অগ্নিমন্ত্রে পরিশুদ্ধ প্রত্যাদেশ।</p>
<br /><p>আগত বৎসরের সম্ভাব্য রূপায়ণে<br />তার প্রণীত নির্দেশ<br />প্রতিষ্ঠিত হয় কুশাগ্র-বারি সিঞ্চণে। </p>
<br /><p>পর পঞ্চ ঋতু্র ক্রমিক আগমন<br />পূর্ণ সিদ্ধির পর্যায়ে<br />নিষ্ঠাভরে প্রত্যাদেশ করে সম্পাদন।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150427111803/সেই রবি2015-04-27T11:19:24-04:002023-06-27T16:17:20-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>বড় মিল দেখি দুই ঠাকুরের<br />একজন পৃথিবীর অন্য আকাশের।<br />আপাত পার্থক্য শুধু এইটুকু;<br />বাকী মিল- থাকে যতটুকু।</p>
<br /><p>রবির প্রভায় উদ্ভাসিত সাহিত্য-আকাশ,<br />ইছা সত্ত্বেও এড়াবার নাই অবকাশ।<br />খনিগর্ভে অথবা অতলস্পর্শী ঘন অন্ধকারে,<br />তোমারও ফোটন কণা অবাধে সঞ্চারে।<br />সুউচ্চ পর্বত হতে মহীরুহ দল<br />অথবা বারিধি তলের পুরাতন জল-<br />সকলই তোমার প্রসাদলব্ধ, হে রবি,<br />তুমিইতো ভূমে অবতীর্ণ, হে মহাকবি!</p>
<br /><p>যুগান্তরে সাহিত্য-বাসরে এসেছো বারবার,<br />বাল্মীকি, কালিদাস কিংবা রবি অবতার।<br />সূর্য্যের মতো ব্রাহ্মণ চন্ডালে ভেদও জানোনা,<br />প্রাপ্তিতে অযোগ্য কেউ একথা মানোনা।<br />মস্, ফার্ণ কিংবা শৈবালের দান,<br />গ্রহণে-বর্জনে সকলেই নেয় কিছু স্থান।</p>
<br /><p>তবুও হে যুগন্ধর, হে মহাকবি,<br />কুয়াশায় ঢাকা তোমার অঙ্কিত ছবি।<br />সৌরতেজ হ্রাস সম ম্লান আজ তোমার চেতন,<br />ক্ষমতা লোভীর দল তোমার অঙ্গনেও ওড়াল কেতন।<br />তোমার ললিতবাণী আজ হাটুরের পণ্য<br />নির্লজ্জ হয়েও তারা শ্রেষ্ঠরূপে গণ্য।<br />তবুও নিশ্চিন্তে আছি আলোর আশায়,<br />আর্বিভূত হবে পুনঃ এই ভরসায়।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/post20150426055926/আবির্ভাব2015-04-26T06:02:34-04:002023-06-26T02:41:54-04:00সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়https://www.bangla-kobita.com/sabitaranjanganguli/<p>নববর্ষে নবোদিত নব দিবাকরের বিভায়<br />দশদিশ উজলিয়ে স্বর্ণাভ গোলাপি আভায়<br />আবির্ভাব তব। ঋষি ঋতুর দুরন্ত পবন<br />সম্বৎসরের কলুষ মুক্ত করেছে ভূবন।<br />পবিত্র ধরণীর সংস্কৃত, আলোকিত অঙ্গনে,<br />এলে মাতৃক্রোড়ে পঞ্চবিংশতি বৈশাখী অহনে।</p>
<br /><p>বদ্ধ নিয়মের গন্ডী ভেঙে গেলো করস্পর্শে তব,<br />আলোকদিশার ঝর্ণাধারা সৃজিলে নব নব।<br />মার্কন্ডের রূপ ধরি দশদিক তুমি উদ্ভাসিলে,<br />রূদ্ধগৃহদ্বারগুলি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিলে।<br />দখিনা সুস্নিগ্ধ পবন বহিল বাতায়ন পথে,<br />ফুলের সুগন্ধ এসে মিশে গেলো সমীরণ সাথে,<br />বিরচিলে অপরূপ কাব্যমালা ধরণীর তরে,<br />যে মালার ফুলগুলি এখনও সৌরভ বিতরে।</p>
<br /><p>বামনদেবের মতো বিস্তারিয়া তিন পদপাতে,<br />ত্রিভূবন জয় করে নিলে তুমি শুধু মস্যাঘাতে।<br />তব অমৃতবানী সংস্পৃক্ত হয়ে দেহ-মন-প্রাণে<br />ছুটে চলে রক্তের গতিতে অনির্দিষ্টের টানে।</p>@ 2024 - সবিতা রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়