যখন দিগন্তজোড়া নীরবতা পাঁজরে পাঁজরে কাঁপে,
আলোর আচ্ছন্ন অভিসার শেষে নিশ্বাস ফেলে ধূপছায়া,
তখন কি তুমি এলে? না কি এল তোমার প্রতিবিম্ব শুধু—
স্মৃতির বাষ্পে ঝাপসা হয়ে রইল দর্পণে অভিপ্রেত শূন্যতা?
মম দেউড়ি ভেঙেছিল ঝড়ের উন্মুখ অভিমান,
কিন্তু সেই শব্দে ছিল এক অলক্ষ্য আরাধনার ধ্বনি,
তুমি এলে কি চুপিসারে, নিভৃত করুণ ধ্বনিতে,
না কি এসেছিল শুধু এক দীর্ঘশ্বাসের অনুবর্ত রাত্রি?
পৃথিবী থেমেছিল, শব্দ ছিল না—
শুধু অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ অন্ধকারে নিঃশব্দ চরণধ্বনি।
আমি জানিনি, আমি ভেবেছিলাম সে এক উপহাস,
যা রাতের অন্তরে জেগে থাকা মৃত আলো বয়ে আনে।
ঘরের সমস্ত প্রাচীর যেন কেঁদেছিল নীরবতা গেয়ে,
প্রতিটি জানালার কপাটে জড়িয়েছিল প্রলয়বায়ুর মমতা।
আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেয়েছিলাম আশ্বাস,
কিন্তু আঙুলে লেগেছিল নরম ধূলি—সম্ভবত তোমার ছোঁয়া।
অপরাহ্ণের প্রতিটি রক্তাভ ছায়া তখন জানত,
এই প্রহরে কেউ এসেছে, বুকে শূন্যতার মালা পরে,
যে ঘর একদিন ছিল একান্ত নিজস্ব,
আজ সেখানে জমেছে কিছু অনাহুত প্রতীক্ষার ধুলো।
তুমি বলোনি কিছু, মুখে ছিল না উচ্চারিত স্পষ্টতা,
তবুও নিঃশব্দ ভাষায় বলেছিলে—
"আমি ছিলাম, যখন সব হারিয়েছিলে,
আমি ছিলাম, যখন নিজেকে খুঁজছিলে।"
সকাল এসেছিল, কিন্তু আলো নয়,
উঠোনে পাখির কূজনের বদলে ছিল মৌন ধ্যান,
দরজার চৌকাঠে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি,
আমার সমস্ত শূন্যতার আত্মপিন্ডে নিবদ্ধ এক দৃঢ় কণ্ঠ।
সেই তো ছিল প্রাপ্তির বিপরীতে এক নিঃস্বতা—
যা মলয়ের ছাঁয়ে নত হয়েছিল,
তোমার অস্তিত্বের গভীরতা বুঝতে না পারা,
সে আমার ব্যর্থ আত্মাভিমান।
তবে কি প্রেম সবসময় দীপ্তিতে আসে না?
তবে কি মেঘমল্লারে বাঁশি বাজে না, কেবল বজ্রনিনাদে?
তবে কি ভালোবাসা এক উল্কাপিণ্ড—
যা জ্বলতে জ্বলতে ছায়া ফেলে যায় অতীতের পটে?
আজো মনে হয়, তুমি ছিলে বাস্তব নয়,
তুমি ছিলে সময়ের বিভ্রমে
প্রণয়ের ছায়ারূপে—
যে রাতের দরজা ভেঙে এসেছিল, আবার ফিরে গিয়েছিল
তোমার নামহীন, শব্দহীন পদচিহ্ন রেখে।