[আমার মাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনা উত্তর ২৪ পরগণার  এক গ্রামের বিদ্যালয়ে।বিদ্যালয়টি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে পড়ে।গত বছর দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের বিদায়-সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি হিসাবে আমন্ত্রিত  হয়ে এই স্বরচিত কবিতাটি পাঠ করেছিলাম।]


যে মাটিতে আমি আজ দাঁড়িয়ে
সেই মাটি তখন রক্তাক্ত, বিদেশী শাসনাস্ত্রের
                আঘাতে আঘাতে;
আমারই মায়ের দামাল সন্তানেরা
চরম ত্যাগে ব্রতী শৃংখলিত মায়ের শৃংখল মোচনে।
সেই উত্তাল সন্ধিক্ষণে কিছু মানুষের সদিচ্ছায়
            অক্লান্ত প্রয়াসে জন্ম আমার।
তারপর ধীরে ধীরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে
আজ আমি মহীরূহ,মানুষের ভালবাসায়,
             মানুষেরই শুভ কামনায়।


তোমরাই একদিন আমার প্রথম শাখায়
             কুঁড়ি হয়ে উঠেছিলে ফুটে;
আট বছর তোমাদের মাতৃস্নেহে করেছি লালন
                       পরম মমতায়,
ধীরে ধীরে হয়েছো প্রস্ফুটিত,গড়েছো নিজেকে
যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠার বাসনায়,আমারই শিক্ষায়।


আজ এই বিদায়ক্ষণে মম প্রার্থনা--
ঘৃণা অপ্রেম আর অবিশ্বাসে গোটা পৃথিবী
যখন বিনাশের পথে ধাবমান,ভোগবাদের
করাল ছায়ায় অন্ধকার,অপকৃষ্টির হাতছানিতে
মূল্যবোধের অবক্ষ্য়,সমাজ যখন ভাঙনের মুখে
                  আত্মকেন্দ্রিকতায়,
             হে ভবিষ্যত কান্ডারী--
মুদ্রাদেবীর আরাধনায় কেবল নিজেকে কোরোনা বরবাদ
আপন কর্ম-সাধনায় বয়ে আনো শুভ স্ংবাদ
ত্যাগ-তিতিক্ষা-সততায় বিশ্বের করো মঙ্গল
দূর করো যত মনের কালিমা অনাকাঙ্ক্ষিত  জঙ্গল
পরহিত ব্রতই হৃদয়ে আনে অনাবিল অপার শান্তি
স্বার্থপরতা ক্ষ্ণিকের সুখ --দূর করো সেই ভ্রান্তি।
তোমার কর্মে গর্বে যেন ভরে ওঠে মোর বুক
কীর্তির টানে বৃত্তি ছিনিয়ে ভাগ করে নিও সুখ।
তোমার শুভ সাধনায় আবার বাসযোগ্য হোক বিশ্ব
জগতের য্ত দুশমন হয়ে যাক সব নিঃস্ব।


ভুলোনা আমায় চলার পথে,দিও যেন হাত বাড়িয়ে
যাবেই পৌঁছে উচ্চ শিখরে,সমস্ত বাধা ছাড়িয়ে।
এই কামনাই রইলো বিদায়ক্ষ্ণে হে আমার
                  প্রিয় ছাত্রছাত্রী
   উজ্জ্বল করো আমার মুখ,হও সফল
                  পথের যাত্রী।
         * * *