বাইরে থেমেছে কিছুটা ঝড়ের তেজ,
নেমেছে শঙ্কার পাহাড় বুকের থেকে
ধীরে ধীরে যেভাবে উষ্ণতার পরশে
গলে গলে যায় জমাট-বাঁধা বরফ
সেভাবেই হয়েছি মুক্ত দুশ্চিন্তা থেকে।
জ্বরগ্রস্ত ভাল্লুকের মতো কাঁপে ফোন,
তুলে নিই হাতে,কাঙ্খিত স্বর-তরঙ্গে
কর্ণ-কুহরে কম্পিত ভয়ার্ত কথন,
'কিছু হয় নি তো তোমার ? কখন থেকে
ডায়াল-রিডায়ালে সাড়া না পেয়ে জানো?
কত অশুভ চিন্তা করেছে তোলপাড়!'
যুধিষ্ঠিরের মতো জীবনে কত বার
মিথ্যা-কথনে হতে হয় বাধ্য কে জানে!
শান্তস্বরে বলি,'তন্দ্রা এসেছিল চোখে';
প্রিয়ার কণ্ঠে এবার  অভিমান ঝরে,
'জানো না বুঝি? এই আলাপন আমার
ঘুমের ওষুধ সাতটি বছর ধরে?
তুমিও তো বলেছো কতবার,বারোটা
যখনই বাজে চাঁদ পেয়ে যাও হাতে?
ভুলে গেলে সব? ভোলালো মোরে তন্দ্রা!?'
'দুঃখিত প্রিয়া, ক্ষমা করো লক্ষ্মী আমার,
এমনটি হবে না আর দিলাম কথা।'
'কাল তবে দেখবো প্রথম শো মেট্রোয়,
অফিস কামাই, বসের ধমক, শাস্তি
তোমার এটাই দিলাম অপরাধের।'
'তোমার এ রায় শিরোধার্য মাই লর্ড,
কাল তবে হবে দেখা মেট্রোর প্রাঙ্গণে।'
ফোন ছেড়ে দীর্ঘশ্বাসে ফুসফুস ভরি,
ঘুম আসে না চোখে;ঝড়ের বেগে তুই
বুকের ভিতরে এসে জুড়ি নিলি সব।
কে যে কেন তোর নাম রেখেছিল 'দিয়া'?
আলেয়ার পিছনে ছুটে পাবি না আলো,
এত কেন মায়া তোর আমার উপর?
আজ যেন মনে হয় এ যে মোহ নয়,
ধীরে ধীরে কখন রাহুরই মতন
বুঝি গ্রাস করেছে তোকে অবুঝ প্রেম!
কি করে বোঝাবো তোকে? সূর্য নই আমি,
ভিন্ন এক কক্ষপথে ঘুরে চলা গ্রহ;
'হে জীবন-নাট্যের নিষ্ঠুর রচয়িতা,
তুমি কি মজা পাও,জ্বেলে প্রেমের চিতা?
কলমে একটু করুণার কালি ভরো,
দিয়ার কোমল হিয়া মোহ-মুক্ত করো।'
কখন থেকে যে একটু একটু করে
ব্যথার মেঘ জমছে বুকের ভিতরে
বুঝতে পারিনি, হঠাৎ অঝোর ধারা
ভাসায় বক্ষ, নেমে এসে দু চোখ বেয়ে।
                      (চলবে)






'