পাতাল রেলের ঝকঝকে প্ল্যাটফর্মে
পবন-বেগে এলো হলুদ-রঙা ট্রেন,
আনমনা আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়েই
কোনরকমে উঠে পড়ি স্বয়ংক্রিয়
দরজা বন্ধ হওয়ার ক্ষণেক আগে,
একটু পরেই শুনি মেয়েলি গলায়
ঘোষণা,"আগলা স্টেশন এসপ্ল্যানেড"
দরজা নিজেই গেল খুলে, নামি ধীরে,
চলন্ত সিঁড়িতে পা রেখে উঠি কিছুটা
আরও কিছুটা উঠলাম সিঁড়ি ভেঙে,
যেন পাতাল থেকে ঊঠে এলাম মর্তে,
অদূরে তাকাতেই প্রিয়ার হাসি মুখ
চোখের মিষ্টি ইশারায় ডাকছে কাছে,
যেতে যেতে ভাবি, সপ্ত পাতালের মধ্যে
একটি নাকি রসাতল! দিয়ার ডাকে
সাড়া দিই যদি, কেন জানি মনে হয়
সেটা হবে রসাতলে যাওয়া মরণ!
তবে কি প্রিয়ার হাত ধরে চলাটাই
হবে মাথা উঁচু করে মর্তে বিচরণ?
ড্রেস সার্কেলের দুখানা টিকিট কেটে
হল-ঘরে ঢুকতেই চোখে অন্ধকার,
ধীরে ধীরে ফোটে আলো,স্বস্তি এলো বুকে।
মনে মনে ভাবি, ফুলের মতো দিয়ার
কাটবে কবে এই মোহের অন্ধকার?
স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি মনে মনে,
"নিষ্পাপ মেয়েটিকে দিয়ো না এত সাজা,
এমন চাওয়া দিয়ো না ওর অন্তরে
যে চাওয়া হবে না পূর্ণ ইহজীবনে।"
সিনেমার পর্দায় "ম্যায়নে প্যার কিয়া"
সালমান-ভাগ্যশ্রীর প্রেমের কাহিনী,
কেন যে সব আজ ঝাপসা লাগে চোখে!
মনের পর্দায় দিয়ার মুখটা ভাসে
আমার দু-চোখে আর কপালে এখনো
যেন লেগে আছে ওর ঠোঁটের পরশ!
কি অসাধারণ মেধা সুশ্রী মেয়েটির!
ভবিষ্যতে আই এ এস হতেই পারে দিয়া;
যে ভাবেই হোক বোঝাতেই হবে ওকে।
বাড়ি ফিরে আগের দিনের ছেড়ে রাখা
প্যান্টের পকেটে কি যেন খুঁজতে গিয়ে
দেখি এক টুকরো কাগজে কিছু লেখা,
চেনা সেই অপূর্ব মুক্তাক্ষরে লিখেছে
"তোমাকে নিজের করে পাবো কি পাবো না
মহাকাল জানে, আমি জানতে চাই না,
আমি শুধু জানি মীরার সেই কাহিনী,
কৃষ্ণ ছিল যার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান,
কাছে না পেয়েও আজীবন ছিল ভক্ত,
আমি না হয় হলাম এ যুগের মীরা,
তুমি আমার আরাধ্য দেবতা কানাই।"
                      (চলবে)