ঘরের মেঝেতে দিয়া পেতেছে মাদুর
"একটু বোসো আসছি আমি" বলেই সে
হরিণের মতো ছুটে চলে গেল দূর;
"মিষ্টান্ন এনেছি কিছু" বলে ফিরে এসে,
"এত দেরি হলো কেন, বাবা-মা কোথায়?"
"বাবা গেছে কাজে, মা ভাইকে নিয়ে স্কুলে,
ফ্রিজতো নেই, দেরি তো হবেই মশাই,
দূরের দোকান থেকেই এনেছি কিনে।"
বলি আমি,"পয়সা কোথায় পেলে শুনি?"
"টিফিনের পয়সা কিছু বাঁচিয়ে রাখি,
বুঝলে মাস্টার মশাই? চুরি করি নি,
খেয়ে নাও সব, আমি চা বানাতে থাকি।"
খেতে খেতে ভাবি, কি ভাবে পাড়বো কথা!
চা এনে দিয়া বসেছে বই-খাতা নিয়ে,
সরাসরি যদি বলি, মনে পাবে ব্যথা,
জিজ্ঞেস করি,"কী নিয়ে পড়বি এম এ?"
"ইচ্ছে আছে সাইকোলজি নিয়ে পড়ার",
"তোর মেধা আছে,পড় তুই তাই নিয়ে,
কিছু কথা ছিল তোকে জিজ্ঞেস করার",
"সব কিছু দিতে পারি, তুমি যা চাইবে,
পারবো না কেন দিতে কথার জবাব?"
"কেন আমাকে ভালবাসিস, বল তবে?"
"কেউ কি জানে বলো নিজের স্বভাব?
ফুল কেন গন্ধ ছড়ায় জানে কি নিজে?
জ্যোৎস্না বিলায় কেন জানে কি তা চাঁদ?"
"জীবনটা গদ্য রে, কবিতা নয় সে যে,
ভুবনে পাতা আছে শত মোহের ফাঁদ।
আমি যে পড়াই তোকে বিনা পয়সায়,
সেই কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মেছে ভালবাসা,
তাই যদি হয়, তবে শোন মন দিয়ে,
পড়াই তোকে সব কাজ বজায় রেখে,
বলতে পারিস অবসরে জনসেবা,
আরো কিছু ছেলেমেয়েকে পড়াই আমি,
কর্তব্যবোধে যে কেউই পড়াতো তোকে,
এ পর্বটা তোর জীবনে ভীষণ দামি।"
"আমার জীবনে কোনটা দামি আর
কোন্ টা নয়,সেটা তো আমি জানি শুধু,
জেনে রাখো তুমি, কোনো কৃতজ্ঞতা নয়,
আমার প্রতিটি শিরা-উপশিরা জানে,
তুমি ছাড়া জীবনের নেই কোনো মানে,
আরাধ্য দেবতা হয়ে থাকো আজীবন,
আর কিছু চাওয়ার নেই তোমার কাছে,
তুমি চাইলে দিতে পারি আমার যা আছে।"
" শোন্ সোনা শোন্,হরিণ-শিশুটি তুই,
যেতে চাসনা এভাবে বাঘের ডেরায়,
আমারও কামনা আছে, আমিও পুরুষ,
এটা তোর অজানাকে জানার বাসনা,
প্রেম নয়, মোহ এটা, এ মহা কলুষ।"
                     (চলবে)