চাঁদ ফুল আকাশ বাতাস কত কিছু নিয়েই তো হয়েছে লেখা
কত কাব্য উপন্যাস নাট্য-কাহিনী কালিদাসের সময় হতে
আজ অবধি। এবার একটু আমার কথা লেখো কবি।
শরৎবাবু তো আজ আর নেই,আমার কথা লিখবে কে
আর বলো? জানি আমি, অস্থি-মজ্জায় করি উপলব্ধি,
আমি এক কুৎসিত মেয়ে
তোমাদের চর্ম-চোখের মাপকাঠিতে।


অমা-রাত্রির মতো মিশমিশে গায়ের র্ং আমার,


জলহস্তিনীর মতো স্ফীত কলেবর, চোখদুটো মোটেই
পটল-চেরা নয়, নয় রাবিন্দ্রীক হরিণীর মতো সুন্দর,
মুখের গড়নটাতে আনাড়ি শিল্পীর আঁকা সদা দৃশ্যমান
উঁচু দাঁতে অসৌন্দর্য্যের মূর্তিমান বিভিষীকা যেন,
আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিজেরই কেমন যেন ভয়
করে মাঝে মাঝে।অথচ তুমিই বলো, আমি কি নিজেই
গড়েছি আমাকে? তাহলে কেন নিজেকে বয়ে বেড়ানোর দায়
আমাকেই নিতে হবে? জানি তোমরা সবাই সুন্দরের
পুজারী, তোমরাই প্রবাদ বানিয়েছো,'সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র'।
আমাকে কি তাহলে এই 'সুন্দর' পৃথিবীতে
পাঠানো হয়েছে কেবল পরাজিত হওয়ার জন্যেই?
তাই যদি হয়, কেন তবে দেওয়া হল অন্তরে আমার
জয়ী হওয়ার কামনা-বাসনা? জানো,একবার অ্যাকাউন্ট
খুলেছিলাম ফেসবুকে; প্রোফাইলে দিয়েছিলাম নিজের
ছবির বদলে কালো গোলাপের ছবি। কিন্তু নামটা যে
এক নারীর! তাই ছেলে-বন্ধু জুটেছিল প্রচুর,চ্যাট করতো, জানো?  
কত ভাল ভাল কথা! মনটা ভরে যেতো, কালো মুখে
হাসির আলো ছড়িয়ে পড়তো, পরক্ষণেই মিলিয়ে যেত সে হাসি।
ওরা আমার নারী-সত্ত্বাকে ভালবাসে, আমাকে নয়!
তাবলে ভেবো না আমার জীবনে কেউ আসে নি ;
এসেছিল, নকল ভালবাসার ফাঁদে ফেলে শরীরকে
ক্ষণিকের তৃপ্তি দেওয়ার শকুন-বাসনা নিয়ে।
মাঝে মাঝে স্রষ্টার খামখেয়ালিতে অবাক হই,
রূপ যখন দিলে না, যৌবন দেওয়ার কি দরকার ছিল?
মনে হয় আমার মতো এতটা হতভাগিনী নয় বৃহন্নলারা।


পরিশেষে তোমাকে আর একটা কথা জানিয়ে রাখি,
আমাকে নিয়ে জীবন-মুখী গান লিখেছিল একজন।
সে নিজেই সুর দিয়ে নিজেই গেয়েছিল গানটা ; হু হু করে
হট কেকের মতো বিকিয়েছিল সে অ্যালবাম।রাতারাতি
প্রচুর নাম-যশ-অর্থ কামিয়েছিল সে।
অনেক আশা বুকে নিয়ে হাতটা বাড়িয়েছিলাম তার দিকে।
সেও আমার বাড়ানো হাতটা আড়-চোখে দেখে নিয়ে
হাত গুটিয়ে চলে গেছে নতুন কোনো গানের সন্ধানে!
                 *