মেয়েটি ফুরফুরে বাতাসে উড়তে থাকা আঁচলখানি
বুকের উপর পুনঃস্থাপন করে নত মাথা ধীরে ধীরে
করে উত্তোলন।ছেলেটির মুখের দিকে তাকায় আয়ত
নয়ন মেলে, রহস্যময় দৃষ্টি হেনে নিষ্পলকে দেখতে
থাকে তার ওই ছেলেবেলার সাথীটাকে।তারপর বলে
"থামলে কেন বলে যাও তুমি,কেমন করে দেখবে
আমাকে?"


"একজন পুষ্পপ্রেমী যেমন করে দেখে নিষ্কাম চোখে
সদ্যফোটা গোলাপ-কলি,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে উদ্ভাসিত
সেই গোলাপ কেবল প্রাকৃতিক হাওয়াতেই খায় দোলা,
জানি না কার জন্য সে এত কাল ধরে একটু একটু করে
জমিয়েছে মধুভাণ্ডে তার, অনাস্বাদিতপূর্ব স্বর্গীয় স্বাদের
মধুরাশি!কোন পিয়াসী ভ্রমরের মতো শুষে নেব না তার
পরম যত্নে রক্ষিত সে মধু। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে
সুগন্ধ নেব কেবল প্রাণভরে।"


"এই নেট-সর্বস্ব পৃথিবীতে আজও দেখোনি তুমি কোন
নারী শরীর? বিশ্বাস করতে বলো তুমি আমায়?"


"সে দেখা মনের দেখা নয় সখী, সে তো এই চর্ম-চোখের
স্থূল দর্শন কেবল।আমরা তো কতই পাহাড়ের ছবি দেখি
পর্দায়, জীবন্ত মনে হয় যদিও, তবুও কি আমরা পাহাড়ে
যাই না বেড়াতে বিমুগ্ধ হতে সেখানকার তাজা বাতাসে
উদার করা সোন্দর্য্যে? তাতে কি কেবল শরীরটাই সুস্থ হয়
সখী? মনটাও কি যায় না ভরে অনাবিল অনির্বচনীয়
এক ভাল-লাগা অনুভূতিতে?পর্দায় প্রজ্জ্বলিত দীপে কি
আর ঘোচে অন্ধকার বিশ্ব-চরাচরে?পর্দার শিখায় কি তপ্ত হয়
ব্যথাহর নুন-ভরা সেঁকের পুঁটুলি?"


" পুরুষেরা বড়ই তরল-মতি হয় জানো তো? ঘৃতের
মতই গলনাঙ্ক বড়ই কম তোমাদের। পারবে নিজেকে
সামলাতে ভরা জোয়ারের নারী-শরীর দর্শনে? পর্দার
বাধায় নিরুপায় দর্শন আর বাধাহীন দর্শনের তফাৎ
বোঝো তো সখা?"


"বুঝি বুঝি বুঝি। এও জানি আজকের ছেলেমেয়েদের কাছে
রহস্য বলে কিছু নেই আর। যে রোমাঞ্চ থাকে
রহস্য উন্মোচনে রহস্য-গ্রন্থের মলাট উল্টানোর আগেই
জেনে যায় তারা।তাই গ্রন্থ পাঠের স্বর্গীয় রোমাঞ্চ থেকে
তারা বঞ্চিত।নারী-শরীরের মর্যাদাও গেছে কমে বহুগুণ,
পর্দায় আর পথে ঘাটে সহজলভ্য প্রদর্শনে।তবে আমি
নিজেকে যতটা চিনি তাতে তোর আশঙ্কার  নেই কিছু।
আমি জানি এক নারীদেহে বহু সত্ত্বা আছে লুকিয়ে।
কন্যা-ভগিনী-মাতৃ-ভার্যা রূপের ঘটেছে সমারোহ
অপরূপ রূপে!"


" তুমি তবে কোন্ রূপে দেখতে চাও আমাকে?'


"এগুলির কোন রূপেই আমি দেখতে চাই না তোকে।
পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা উচ্ছ্ল ঝর্ণারূপে
দেখবো তোকে, ষোল কলায় পরিপূর্ণ শশীর মতো
দেখবো তোকে, ফল্গু ধারায় বয়ে যাওয়া তটিনীর মতো
দেখবো তোকে, উন্মোচিত মোনালিসার মতো দেখবো
তোকে, খাজুরাহোর অনিন্দ্য মূর্তির মতো দেখবো তোকে,
হৃদয়ে প্রশান্তি আনা কবিতার মতো দেখবো তোকে।"