কবিতাকে স্বচক্ষে দেখবো বলে আধ-বোজা চোখে
পদ্মাসনে বসেছি নিবিষ্ট ধ্যানে।আচমকা করাল চিৎকারে
থরহরি কেঁপে ওঠে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, লাভার দুঃসহ উৎস্রোত
কশেরুকায়,আকস্মিক হ্যাঁচকা টানে শূন্যে উঠে এল
নির্ভার কলেবর।
রাত-পোশাকে সজ্জিত এক আবছায়া মূর্তি ভেসে উঠলো
মহাশূন্যের বুক চিরে, এক অভূতপূর্ব শিহরণ বয়ে গেল
সারা শরীরে, রাত-পোশাকের দড়ি ধরে টান দিতেই
টোপ-গেলা হাঙরের মতো উল্টো টান দিল যেন কেউ,
এখনই হয় তো আছড়ে ফেলবে অজানা অতল সাগরের
বুকে।
হঠাৎ ভেসে এল কর্ণ-বিদারী দৈব-বাণী,'তোমার চোখে
অজস্র স্তরীভূত পর্দা, সেগুলো সরাও আগে।পক্ষপাতের
পর্দা,অহমিকার পর্দা,ভোগের পর্দা, অক্ষমতার পর্দা...।'
হতাশার অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে ধ্যান-বলে কি না
জানি না আজন্ম লালিত সেই কঠিন বাঁধনের পর্দাগুলো
সরাবার মন্ত্র উচ্চারিত হতে থাকলো অস্ফুট স্বরে যেন
স্বপ্ন-ঘোরে,'সব ভেদাভেদ মুছে দিলাম,নিজেকে নগণ্যতম
মেনে নিলাম,লালসার আগুন নিভিয়ে দিলাম,আপন
ক্ষমতার সীমায় নিজেকে আবদ্ধ করলাম।'
হাতের টানে রাত-পোশাকের দড়ি অকস্মাৎ খুলে যেতে
থাকলো,দমকা ঝড়ের প্রবল ধাক্কায় হঠাৎ নিক্ষিপ্ত হলাম
অন্তহীন গহ্বরে।
রাত-পোশাক খুলে যেতেই অদৃশ্যপূর্ব এক দ্যুতির অজস্র
জ্যোতিষ্ক ধাঁধিয়ে দিল চোখ, গোটা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড বুকের
উপরে আগুনের পসরা সাজিয়ে অনন্ত মহাশূন্যকে
পুরোটাই নিঃসীম আলোয় ভরিয়ে তুলেছে যেন!
ঠিক সেই মুহূর্তে আবার ভেসে এল দৈব-বাণী,'কবিতার
নগ্ন রূপ সইতে পারবে না তোমার মনুষ্য-চোখ,কবিতাকে
আর নগ্ন করার চেষ্টা কোরো না কখনো, যে ভাবে যতটুকু
দেখার ক্ষমতা অর্জন করেছো সেভাবেই দেখো তাকে ,
চর্ম-চোখে দেখা ঠিক নয় পূর্ণ গ্রহণ।'