সন্তানকে সব বাবা-মা-ই ভালবাসে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন সেই ভালবাসা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বেশিরভাগ বাবা-মা-ই নিজের সন্তানের কোন দোষ খুঁজে পান না, অন্যায় করলেও সন্তানকে শাসন করা দূরে থাক, সন্তানের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদ-বিসম্বাদে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় অনেক বাবা-মাকেই। এরকম সন্তান-প্রিয়তা কি আখেরে সন্তানের পক্ষে শুভ হয়?


       আমরা যেমন এই কবিতার আসরে সকলে সমবেত হয়েছি, যে যার কবিতা নিয়ে আসছি নিয়মিত, একে অপরের মতামত জানছি আর এসবের মধ্য দিয়ে একটা হৃদ্যতাও গড়ে উঠছে। আমার দৃঢ় বিশাস, এই আসরের সকলেই একে অপরের ভালই চান। প্রায় তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি সেটাই বুঝেছি।


         কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা অনেক সময় অন্যের ব্যাপারে ভুলে যাই, কোনটা তার পক্ষে ভাল আর কোনটা নয়। চোখ বুজিয়ে তার সব ত্রুটি-বিচ্যুতিকে নজর-আন্দাজ করে যদি প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে থাকি, আখেরে তার পক্ষে কি সত্যিই শুভ হয়? অহেতুক ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, কিন্তু সাধারণ বুদ্ধি অনুযায়ী যেটা সঙ্গত ত্রুটি সেটা এড়িয়ে গিয়ে মন-রাখা মন্তব্যও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বরং আমি মনে করি, সেক্ষেত্রে ভদ্রভাবে সুনির্দিষ্ট ত্রুটিটি উল্লেখ করে  প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া যেতেই পারে এবং সেটাই তার পক্ষে মঙ্গল। শুধুমাত্র নিজের পাতায় মন্তব্যের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সবার পাতায় গিয়ে গতানুগতিক প্রশংসাসূচক মন্তব্য করে আসা কি পরিণতমনস্ক কবিদের শোভা পায়? না কি খানিকটা ছেলেমানুষিতাই প্রকাশ পায়? তবে হ্যাঁ, আমার পাতায় যাঁরা আসেন আমি তাঁদের পাতাতেও অবশ্যই যাই, কারণ এটাকে আমি সৌজন্য মনে করি, আর সৌজন্যতাবোধ কবিযশঃপ্রার্থীদের অবশ্যই থাকা উচিত বলে মনে করি।সময় সহায়ক হলে অন্যদের কবিতাও পড়ার চেষ্টা করি।সেক্ষেত্রে নাম বা ব্যক্তিসম্পর্ক কোন বিচার্য নয়।
        আচ্ছা বলুন তো, একটা কবিতা অন্ততঃ দুবার না পড়লে সেই কবিতা সম্পর্কে কি কোন ধারণা আসে? সময়াভাবে হয়তো বেশি কবিতা পড়া সম্ভব নয়, কিন্তু যেটা পড়বো ভাল ভাবে পড়বো -- এটাই তো সঠিক মনোভাব? অথচ দেখা যায় কয়েকজন এক দিনে প্রচুর মন্তব্য করছেন, হতে পারে তাঁদের হাতে প্রচুর সময়, তবু সবার কবিতা খুব ভালভাবে পড়ে মন্তব্য করছেন কি?  তাছাড়া লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বেছে বেছে নির্দিষ্ট কয়েকজনের কবিতা পড়ার ঝোঁক আছে কয়েকজনের। সেই বলয়ের বাইরে তাঁরা আর ফিরেই তাকান না।এভাবে একটা লবি গড়ে উঠতে পারে হয়তো কিন্তু কবিতার মতো উচ্চাঙ্গ একটা আসরের সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হয়।কবিযশঃপ্রার্থীরা এমন সংকীর্ণমনা হবে কেন? আমার বিশ্বাস কবিরা আলাদা জগতের মানুষ, বাইরের স্বার্থসর্বস্বতা তাদের স্পর্শ করে না। তাছাড়া মন্তব্যের সংখ্যা থেকে কখনই কবিতার মান যাচাই হয় না।অন্ততঃ এই আসরে তো নয়ই।সেটা আপনি নিজেও যাচাই করে দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন পাতায় গিয়ে অতি সহজেই। তার মানে এই নয় যে, বেশি মন্তব্য পাওয়া কবিতাগুলি সবই নিম্ন মানের। আমি বলতে চাইছি, বেশি মন্তব্য মানেই সেগুলি সেদিনের সেরা কবিতা, এই ধারণা একেবারেই ভুল। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেদিনের পাতাতেই কম মন্তব্য পাওয়া  কিছু কিছু কবিতা আছে যেগুলি পড়ে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।


       এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন? নির্দ্বিধায় আপনার মতামত জানালে খুশি হবো। পারস্পরিক মত বিনিময়ের মধ্য দিয়েই তো সকলে সমৃদ্ধ হতে পারি।
      
                               * * *