🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰


সারসের প্রতীক্ষায় সমব্যথী ছিলে জানি,
সমব্যথী ছিলে জানি বাসাহারা নীলকণ্ঠ পাখিদের;
তবু আজ এ নির্জলা অবগাহে সমতৃষ্ণ চেয়ে থাকা
অদূরের তরঙ্গিত বারিধির উদাসীন মুখপানে --
রিক্ত দ্বীপ, কত যুগ আগের সে সবুজাভা ভুলে যাও,
ভুলে যাও এক বুক বটবৃক্ষ আদর ...


🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰💄🔰


আমরা আজ আগের প্রজন্মের তুলনায় বেশ ভাগ্যবান। গুগলে সার্চ দিলেই নিমেষেই চোখের সামনে চলে আসে অনেক অজানা তথ্য। এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল আগের প্রজন্ম। কোন কিছু জানার জন্য তাদের অনেক বেশি সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হতো। কাগজে ছাপা বই আর পত্র-পত্রিকা ছাড়া অন্য কোন উৎস ছিল না জানা। যাই হোক, ছড়া, পদ্য ও কবিতা সম্পর্কে আগে থেকেই নিজস্ব একটা ধারণা ছিলই। তবে সে ধারণাগুলো ছিল একান্তই নিজের মনগড়া আর অস্বচ্ছতা
দোষে দুষ্ট। তখন ভাবতাম যা লিখছি সবই কবিতা। কিন্তু ধীরে ধীরে জানার পরিধি যখন বাড়তে থাকল তখন বুঝলাম ছড়া আর পদ্যকে ঠিকঠাক কবিতা বলা যায় না। তখন ভাবলাম যারা ছড়া আর পদ্য লেখে তারা কি কবি নয়? কেননা কবিতা থেকেই তো কবি কথাটির উৎপত্তি। তাহলে তো যারা কবিতা লেখে তারাই কেবল কবি। আর যারা ছড়া লেখে তারা ছড়াকার এবং যারা পদ্য লেখে তারা পদ্যকার। তাহলে কি এতদিন কি লিখছি সেটা না বুঝেই লিখে চলেছি? তিনটির মধ্যে পার্থক্যটাই যদি না জানি তাহলে কেমন করে বুঝব কি লিখছি! সুতরাং পন্ডিত ব্যক্তিরা ছড়া, পদ্য ও কবিতার মধ্যে কিভাবে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন সেগুলি জেনে নেওয়া যাক:-
আলোচনার কলেবর না বাড়িয়ে আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কেবল গ্রহণযোগ্য কয়েকটি মতামত তুলে ধরি। কেননা নানা মুনির নানা মত জানার পর আমার প্রিয় পাঠকদের মধ্যে একটা কনফিউশন তৈরি হতে পারে। ফলে আলোচনার উদ্দেশ্যটাই মাটি হয়ে যেতে পারে। আমার উদ্দেশ্য হলো, আমরা যা লিখছি সেটি আসলে কি সেটি জেনে নেওয়া। তাই অতি সংক্ষেপে এই তিনটির পার্থক্য তুলে ধরছি_
বুদ্ধদেব বসু বলেছেন– কবিতা সম্বন্ধে ‘বোঝা’ কথাটাই অপ্রাসঙ্গিক। কবিতা আমরা বুঝিনা, কবিতা আমরা অনুভব করি। কবিতা আমাদের ‘বোঝায়’ না; স্পর্শ করে, স্থাপন করে একটা সংযোগ। ভালো কবিতার প্রধান লক্ষণই এই যে তা ‘বোঝা’ যাবে না, ‘বোঝানো‘ যাবে না ।



কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মতে– যে লেখাটি সমকালের স্মৃতি বা স্বপ্নকে তুলে আনতে সক্ষম এবং একই সাথে সমকালকে অতিক্রমের যোগ্যতা রাখে তাকেই বোধহয় কবিতা বলা যেতে পারে।
আর আল মাহমুদ বলেছেন– পাখির নীড়ের সাথে নারীর চোখের সাদৃশ্য আনতে যে সাহসের দরকার সেটাই কবিত্ব।



বলা যায় কবিতা হচ্ছে শিল্পোপলব্ধির মাধ্যমে উপলব্ধ এমন এক শব্দশিল্প যা ভাব আচ্ছন্ন শব্দসমষ্টি।


পদ্য:


সহজ ভাবে বললে যা কবিতা নয় তাই পদ্য। পদ্যে ছন্দমিলের বিষয়টি প্রবল ভাবে অনুসরণীয়। ভাবের সহজ প্রকাশ থাকে পদ্যে। এক্ষেত্রে বিমূর্ত কিংবা রূপকের আশ্রয় পদ্যে অবলম্বন করা হয় না। যা বলতে চাইছি তা সহজেই পাঠকের পাঠ ভাবনার সাথে মিলে যাবে এবং পাঠক মানসে ভিন্ন অর্থদ্যোতনা তৈরি করবে না অর্থাৎ লেখকের বর্ণিত ব্যাখ্যাই একমাত্র আক্ষরিক ব্যাখা হবে


পদ্যে ছন্দের মিল এবং লেখকের ভাবের সহজ প্রকাশ থাকাটাই জরুরি। কবিতা আর পদ্যে একটি বড় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এবং এই পার্থক্যই ‘কবিতা’ এবং ‘পদ্য’ কে আলাদা করেছে।
পার্থক্যগুলি সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক-


১. পদ্যে বিমূর্ত কিংবা রূপকের আশ্রয় নেওয়াটা একদমই জরুরী নয় কিন্তু আধুনিক কবিতায় এই বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।


২. কবিতায় প্রতিটি শব্দ ব্যাপক এবং গভীর অর্থে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ একই কবিতায়, একই শব্দের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন ভাবের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু পদ্যের ভাষা অতি সহজ, সরল এবং বোধগম্য। কবি ঠিক যেমনটি বোঝাতে চেয়েছেন ঠিক ঠিক তেমনিভাবেই পাঠক বুঝে নিবে। অর্থাৎ নতুন করে অর্থভেদ করার প্রয়োজন পড়বে না। লেখকের আক্ষরিক ভাষা এবং মূল বক্তব্য একই হবে।


উদাহরণ:


‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে
পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি
দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি।’
[আমাদের ছোট নদী/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ একটি আদর্শ পদ্যের উদাহরণ। এই উদাহরণ থেকেই সহজে পদ্যকে কবিতা থেকে আলাদা করা যায়। উপরের লাইনগুলো একটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি সহজ সরল দৃশ্যকল্পের সৃষ্টি করেছে যা একটি গল্প বা উপন্যাসের মতোই ধারাবাহিক কাহিনী কিন্তু ছন্দে ছন্দে ঘটনার আবর্তণ।


কবিতার সাথে পদ্যের এ প্রচ্ছন্নতার পার্থক্যই মূল বিষয়।


উদাহরণ:
‘মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।’
[ অস্ত্র সমর্পণ/হেলাল হাফিজ ]


উপরের লাইনগুলো দিয়ে আক্ষরিক অর্থে কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু রূপক অর্থে কবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা বর্ণনা করে গেছেন ‘ভালোবাসা’ শব্দটি দিয়েই।


🚩ছড়া:
মিলনান্তিক ছন্দোবদ্ধ ভাবের প্রকাশ।


এতে হালকা বা চটুল চাল থাকবে।


চারপাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংঘটিত অসংগতিগুলোর ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কৌতুক বা কটাক্ষের মাধ্যমে উদ্ভট বা নাটকীয় উপস্থাপিত হবে।


ছড়ার বিষয় হতে পারে ব্যক্তিক বা সামাজিক বা বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে।


ক্ষোভ, কষ্ট বা অন্য কোন তীব্র অনুভূতির আভাস থাকবে।


স্বরবৃত্ত ছন্দকে বলা হয়ে থাকে ছড়ার ছন্দ।