কেউ কাছে থাকে না, সবাই দূরে চলে যায়।
সেই যে হাফ-প্যান্ট স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে
  বিশাল আধো অন্ধকার নির্জন ঘরটার
       এক কোণে লুকিয়ে থাকতাম
           লুকোচুরি খেলার ছলে
স্বপ্না ছাড়া আর কেঊ জানতো না সেকথা
ফ্রক-পরা স্বপ্না চুপিসাড়ে এসে তার দুহাত
  বাড়িয়ে ধরতো আমার হাত দুখানা
   কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলতো
    'রোজ তুই এইখানে লুকোবি
  আমি রোজ এসে তোর হাত ধরবো-
অথচ সেই স্বপ্নাও একদিন শাড়ি পরে
কার হাত ধরে কোথায় যেন চলে গেল!
  অবুঝ মনটাকে শান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম
কেউ কাছে থাকে না, সবাই দূরে চলে যায়।


আমডাঙার এক বিদ্যালয়ে পরিদর্শক আসবেন
পরিদর্শনে, তিনি সন্তুষ্ট হলে তবেই মিলবে
  সরকারী অনুমোদন,তবেই মিলবে বেতন
  দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা পড়াতেন বিনা বেতনে,
ছাত্র-সংখ্যা বাড়াতে আশপাশের স্কুলগুলোতেও
জানানো হল আবেদন, দশম শ্রেণীর নিরিখে
  আমি কমবয়সী কি না জানি না আমাকে
   বসানো হলো অষ্টম শ্রেণীর কক্ষে,
পরিদর্শকের সব প্রশ্নের উত্তর ফটাফট দিয়ে দিতেই
  ফার্স্ট গার্লের ইগোতে বুঝি বিঁধেছিল খুব,
   পরিদর্শক চলে যেতেই আদম-টিজিং
     শুরু করে দিল অনর্গল বাক্যবাণে,
তখন বুঝিনি, সেই রেখাই একদিন ধীরে ধীরে
  মনের আকাশ ভরে দিল প্রেমের আলোয়
   আমার হাতদুটি ধরে সেও তো বলেছিল,
     'কথা দিলাম চিরদিন থাকবো পাশে'
অথচ সেও চলে গেল প্রতিষ্ঠিত কোন ঘরে,
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অবুঝ মনকে শুধু বলেছিলাম
কেউ কাছে থাকে না, সবাই দূরে চলে যায়।


তারপর কলেজ-জীবনে দুর্বার গতিতে এলো নন্দিনী
ঝড়ের মতো সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়ে
  কোথায় যেন হারিয়ে গেল টর্নেডোর মতো,
   উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছিল জানি,
তারপর হঠাৎই একদিন এক বন্ধু বলেছিল,
   'জানিস নন্দিনী মারা গেছে দুর্ঘটনায়?'
বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিলাম,
কেউ কাছে থাকে না, সবাই দূরে চলে যায়।


তারপর দিয়া এসেছিল খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবে,
ধূমকেতুর মতো হঠাৎই যেন জ্বলে উঠেছিল সে
  আমাকে জড়িয়ে ধরে লতার মতো বাঁচার
   অবুঝ বাসনা নিয়ে এসেছিল এগিয়ে,
আমিও কি ধীরে ধীরে ডুবে যেতে চাই নি তার
  আকুল অতল স্বচ্ছ সলিলের প্রেম-সাগরে?
মহাকাল তাকেও সরিয়ে দিল দূরে আপন খেয়ালে;
   অভিমানাহত হৃদয় নিয়ে সন্ন্যাসিনী-বেশে
     হয়ে গেল অচেনা এক জগতের বাসিন্দা,
   স্বপ্না রেখা নন্দিনী দিয়া কেউ কাছে থাকে নি,
   কেউ কাছে থাকে না, সবাই দূরে চলে যায়।