নিশুতি রাতের শুনসান নিরবতা
ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে,
যথা সম্ভব আস্তে আস্তে
দরজায় কড়া নাড়ে মিনা।
কাঙ্খিত শব্দের অপেক্ষায় থাকা
প্রৌঢ় বয়সের একজন মহিলা
আঁচলে মুখ ঢেকে, আনত নয়নে
দরজা খুলে দ্রুত ফেরে
পাশের ঘরে।


শরীরের অসহ্য ঘিনঘিনে ভাবটা
দুর করতে সোজা
লম্বা একটা শাওয়ার শেষে
ভেজা চুলে বসে
কত কী যে ভাবছে মিনা
একা মনে মনে ।
পাশের ঘরে মায়ের সাথে
ছোট ভাই ঘুমে।
লেখা পড়া বাদ দিয়ে
পথে পথে ঘোরে।
মায়ের বয়স চল্লিশ বছরে
শোকে দুঃখে এখন,
ষাট সত্তর মনে হয়
চোখেও কম দেখে।
বাবা মারা গেলো যখন
দুই বছর আগে,
বাপের ভিটায় তখন
দুই খান ঘর ছিল খাড়া
জমি জিরাত যা ছিল তা
বাপে বেইচা গেছে,
পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে
ভিটা বেচল মায়ে।


আমি তখন কেবল ডাংগর
লেখা পড়া থু‌য়ে,
ভাগ্য বদলে ঢাকায় এলাম
মা' ভাই কে নিয়ে,
এদিক সেদিক বেবাক জাগায়
কামের খোঁজে ঘুরে ফিরে
বুঝে গেলাম শেষে,
সবার নজর আমার দেহের দিকে
কাম দেবে কে?
পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে
এলাম শেষে এই পেশাতে,
পাড়া পড়শী বেবাক জানে
কোম্পানীতে চাকরি করি
নাইট ডিউটি পড়ে।


বিনা পূজির ব্যবসা আমার
দেহ পূঁজি করে,
রাতের শেষে পাঁচশ-হাজার
টাকা আসে ঘরে।


এর মাঝেও বিপদ আছে
মাঝে মাঝে পুলিশ এসে
শালা নিয়ে যায় ধরে,
টাকা দিয়ে ছুটে আসি
যখন যেমন দিয়ে।
সেই দিনের কামাই যত
সব ই যায়
পুলিশ কাকুর ঘরে।


এই ভাবে জীবন আমার
দিনে দিনে যায়,
আর কতকাল চলবে এমন
জানে বিধাতায়।
মাঝে মাঝে মনে হয়
আত্মহত্যা করে,
বেবাক পাপ ভাসাই দেব
গঙ্গার জলে।
পারি না তা করতে শুধু
মা-য়ের মুখে চেয়ে।


সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তুমি
সবার রিজিক দাতা
আমার রিজিক রাখছো যেথা
করছি আমি তা।
মাফ এর মালিক তুমি প্রভু
মাফ যে আমি চাই,
পরিস্থিতি ভালো করো
তাওবা করবো তাই।


১৭ জানুয়ারি ২০২৩
হাজারীবাগ, ঢাকা