বিজয়ের আনন্দে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যখন উদ্বেলিত; কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মাকে দেখার জন্য ব্যাকুল, ঘরে ফেরার কাতরতা।
তখনই খবর এলো হানাদার বাহিনী পরাজয়ের পূর্বে এঁকেছে ভয়ংকর নীল নকশা।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশ যেন হয় নেতৃত্বশূন্য, হাঁরিয়ে যায় অন্ধকার গহবরে, ইতিহাসের মাৎস্যন্যায় যেন আবার ফিরে আসে।
তাই ওরা বেছে বেছে হত্যা করেছে বাংলার প্রথিতযশা দিকপাল।
যারা পরতো বিক্ষুদ্ধ দরিয়ায় জাতিকে দিকনির্দেশ করতে, তারা হারিয়ে গেছে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ
আলবদর বাহিনীর কাদামাক্ত সাদা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর তালিকা অনিযায়ী খুঁজে বের করেছে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান।
অগ্রহায়ণের সেই কুয়াশাচ্ছন্ন রাত্রে হারিয়ে গিয়েছিল কারো সন্তান, পিতা, ভাই কিংবা বোন।
দরজার ঠক ঠক আওয়াজে কেঁপে উঠেছিল হাজারো পরিবার।
নৃসংশ পাশবিক নির্যাতন শেষে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয় মিরপুর মোহাম্মদপুরের পরিত্যাক্ত ইটের ভাটায়।  
বিজয় দিবসের অবিশ্রান্ত বৃষ্টি আর শহীদের রক্ত মিলেমিশে তৈরি করেছিল বাংলাদেশের মানচিত্র।
এ ইটের ভাটার এ বধ্যভূমি থেকে আজো ভেসে আসে শৃঙ্খলিত হাত পা, উৎপাটিত চোখ, বেয়োনেটবিদ্ধ শহীদের আর্তনাদ।
শোনা যায় স্বাধিকার প্রত্যাশী প্রতিবাদী কন্ঠের গোঙ্গানি আর মানুষরূপী রক্তলোলুপ হায়েনার মরণ উল্লাস।
এখানে আকাশ থমকে আছে, বাতাশ ভারী, পত্রপল্লব অনড়, শোক ভাষাহীন।
এ নির্বাক শোক, আর বেদনারই বিমূর্ত প্রতীক এ স্মৃতিসৌধ।


পুনশ্চঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে শেষ চার লাইন সংকলিত।