আমি স্বাধীন বাংলার বিরহী কবি,
আমি অনাদরে পড়ে থাকা বেদনাবিঁধূর শিল্পীর ছবি।
আমি পথহারা উদাস পথিক একা চলিতেছি পথে পথে,
আমি কি সে পথ খুঁজে পাব বন্ধু এ জনম থাকিতে?  


         জীবন আমার অতি দুর্বিষহ,
         সঞ্চিত ব্যথা বুকে অহরহ,


'বন্ধু' কোথাও আমি পাইনা'ক' কোনো ঠাঁই,
আমি অবহেলিত ধরণীর কেহ নাহি ফিরে চায়!
আমি গভীর নিশীথে বাজাই বন্ধু বিরহের বাঁশি,
অধরের কোণে ফুটে যে হাসিরেখা সেতো দুখ-হাসি।


আমি লাঞ্চিত, আমি বঞ্চিত,আমি গৃহহারা চির পথচারী,
আমি প্রিয়হারা বিধবার গভীর কান্না, আমি সন্ন্যাসী বনহারী।
আমি পল্লীবঁধুর সরল চিত্ত তার হিয়ার কাতরতা,
আমি পল্লীর কিশোরী মেয়ের প্রথম প্রেমের সুনিবিড় ব্যথা!


আমি মরূভূমে পথহারা পথিকের পিয়াসা,
আমি পুত্রহারা ব্যথিত মায়ের চির কাতর ভাষা!
আমি দশরথ-কষ্ট সুকরুণ আমি জানকীর ব্যথা সুনিবিড়!
আমি চির ভাগ্যহত প্রতিবন্ধীর বেদনাবারি, বঞ্চনা ব্যথা প্রেয়সীর!


আমি দাতা কর্ণের মরম বেদনা, রণভূমে ছেলেহারা মায়ের হাহাকার!  
আমি শরবাণে চির ঘুমন্ত শিশু, পিতার বুক ফাটা উহ্ চিৎকার!
আমি যাতনা, আমি বন্ধন,
আমি বিবি সকীনার ব্যথা হৃদি, আমি ক্রন্দন।


আমি ব্যথাতুর কারবালা!
আমি অনাহারী এতিম শিশু -ক্ষুধিতের ক্ষুধাজ্বালা!
আমি কালবোশেখীর ঝড়ে ভেঙে পড়া কূড়েঁঘর,
আমি জলহীন গুপ্ত ব্যথার বারিধী, আমি রৌদ্রতপ্ত মরুকর।
আমি বাঁধনহারা কুমারীর আঁখি ছলছল,
আমি মহাসিন্ধু শান্ত ঊর্মি, আমি অনুজ্জ্বল!


আমি কান্না, আমি দুঃখ,
আমি পরাজিত মানুষের ব্যথিত বক্ষ!
আমি হাবশি বেলাল,অত্যাচারী উমাইয়া ক্রীতদাস,
আমি অত্যাচারীতের বুকফাটা ক্রন্দন শ্বাস!


আমি আকাশের অকাল ঘনকালো মেঘ খেটে খাওয়া মানুষের বিরহ কান্না!
আমি জলোচ্ছ্বাসে ভাসি, মম বুকে বহে বিপুলা ধ্বংস বন্যা!
আমি দারিদ্র্য,মুখে জুটে না'ক' দুটো ভাত, একটু নুন,
উদর ভরিয়া খানা খায় বাবু-সাব, আমাদের পেটে জ্বলে আগুন।


আমি নিরানন্দ, আমি নিরাশা,
আমি আশাহতের কষ্ট নিদারুণ,আমি ব্যর্থ আশা!
আমি নির্যাতিত,আমি ক্রন্দনরতা,
আমি অপমানিত পথ ভিখারী তার লাঞ্চিত হিয়া ব্যথা!


আমি নিপীড়িত, উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল ,
আমারি উদার বক্ষে বহে দুঃখের মহাকল্লোল!
আমি জাহানারা ইমামের "একাত্তরের দিনগুলি" তাঁর বেদনা কাতর হিয়া,
আমি সমুদ্রে ডুবন্ত ভরাতরী, আমি ক্রন্দনিয়া!


আমি শান্ত,আমি প্রশান্ত,
আমি ধরণীর বুকে দূর্ভাগা, আমি ভাগ্যহত।
আমি অন্যায় কারা- বন্দী,নির্যাতিতের বেদনা,
আমি ধৈর্য,সহে যাই যত যন্ত্রণা।
আমি অন্যায় শাসন ত্রাসনে শাসিত,আমি বিশ্বের শোষিত জনতা,
বিরহী কবির আমি বিরহ কাব্য, রচে যাই যত সুকরুণ গাঁথা!


আমি নির্বল,আমি শূন্য,
আমি ধরণীর অবহেলিত, আমি ঘৃণ্য।
আমি নিন্দিত,
আমি অত্যাচারী নরপতি অগ্নিকুন্ডে ভস্মীভূত।
আমি ভুখারী উলঙ্গ পথ-শিশু,
আমি ব্যথিতের ব্যথা চিত্ত , আমি ধরণী মেরির যীশু!


আমি বিরহী, আমি বিরহী,মম ক্রন্দনরোল উঠে আকাশে বাতাসে ধ্বনিয়া,
আমি সৃষ্টিতে অবহেলা-নিখিল ব্যথার সিন্ধু মম চিত্তে যাই বহিয়া।