যেদিন থেকে আমি তোমারই ঠোঁটের হাসিতে গ্রেফতার হয়েছি,
সেদিন থেকে নিজেকে চিনছি নতুন ভাবে শিশির ধোয়া নবীন ভোরের
ঘাসের মতন, জীবনকে জানছি বালি থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে লাফিয়ে
পড়া সদ্য জন্মানো সামুদ্রিক কচ্ছপের মতো নানান সৌন্দর্যের রূপে।      
তাই নিজেকে এ বন্দী থেকে মুক্ত করবার ইচ্ছে জাগেনি আজও।  
বুকের দুঃখের নদীতে তোমার সুখের পলি জমতে জমতে আজ ধীরে
ধীরে পিঠ উঁচু করে উঠছে ভালোবাসার দ্বীপ, তাতে ফুটছে স্বপ্নের
কিছু কিছু সবুজ চারা গাছ।  মনের সমতল জুড়ে ক্লান্তির গর্ত গুলো  
ভরাট হচ্ছে তোমারই প্রেমের বৃষ্টি ধারায়। মচমচে নোনতে আবেশে
জীবন রাঙছে আজ তোমারই শরীর সাগরের সুখের সফেন মেখে                    
চাঁদের নরম বালিশের উপর মাথা ঢেলে রেখে নিশ্চিন্তে নিত্যদিন।  
তাই আমি আর নিজেকে মুক্ত করে কোথাও যেতে চাইনা;
চাই তোমারই প্রেমের কারাগারে বন্দী হয়ে সারা জীবন থাকতে।  


যেদিন থেকে আমি তোমারই হাতের শিকড়ে শিকড় জড়িয়েছি,  
সেদিন থেকে ভুলে গেছি কান্নার বন্যা স্রোতে সমূলে উপড়ে ভেসে
যাওয়া স্বপ্ন আশার ক্ষয় বিপর্যয়, ভুলে গেছি মরুভূমিতে বাঁচা গাছের
মতো হাঁ করে চেয়ে থাকা এক ফোঁটা জলের তৃষ্ণার অভাব বোধ।      
তাই নিজেকে এ শিকড় থেকে আলাদা করার ইচ্ছে জাগেনি আজও।  
হৃদয়ে আটকে থাকা যত ব্যথা যন্ত্রণার পাতা বাকল ফেলে দিয়েছি  
পর্ণমোচী বৃক্ষের মতন আজ। নতুন কামনার কিশলয়ে, চাওয়া পাওয়ার  
মুকুলে, খুশির মৌতাতে পাতলা হাওয়ায় আঁকা হচ্ছে শরীরে তোমার      
আমার প্রণয়াকাঙ্ক্ষার ইস্তাহার। দুটি চোখে তোমায় আজ আকাশ করে  
কখনো ভুবন চিলের মতন উড়ছি; কখনো তোমার হৃদয়ের সৈকতে  
যৌবন ভরা দামাল ঢেউ-এর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছি নিজের খেয়াল ভুলে।      
তাই আমি আর তোমার শিকড় আলগা করে কোথাও যেতে চাইনা;  
চাই তোমারই হাতের শিকড়ে আটকে সুখের মাটিতে বেঁচে থাকতে।


যেদিন থেকে আমি তোমারই প্রেমের কবিতার পঙক্তি পাঠ করেছি,  
সেদিন থেকে মুখস্থ করতে চেয়েছি একাগ্র চিত্তে তোমার সব কবিতার      
পঙক্তি আদ্যোপান্ত। আর হেঁটে গিয়েছি সে কবিতার ভাবনার হাত ধরে
নানান উপমার উৎস সন্ধানে, তোমার সব প্রেরণা রহস্যের অনুসন্ধিৎসায়।    
তাই নিজেকে তোমার পাঠ থেকে সরিয়ে আনার ইচ্ছে জাগেনি আজও।
নদী, পাহাড়, সাগর, সমভূমি, আকাশ, বাতাস প্রকৃতির সব উপাদানের  
পিঠ চাপড়ে অকৈতব ভালোবাসায় জানতে চেয়েছি তাদের থেকে তোমার  
সৃজনশীলতার জন্ম কথা, কিন্তু কেউ জানালো না তোমার সম্পর্কে কিছুই,  
শুধু বলেছে-'' যাও গিয়ে তোমার সবুজ মেয়েকেই জিজ্ঞেস করে নাও।''  
নব বধূর ললিত চাঁদপানা মুখের বিম্বৌষ্ঠে আটকে থাকা উষ্ণ সুখের মতো,  
সবুজ মেয়ে, আমি যে তোমারই কবিতার প্রেরণার রহস্য ভেদে তৃপ্তি পাই।    
তাই আমি আর তোমার কবিতার পঙক্তি ছেড়ে কোথাও যেতে চাইনা;  
চাই তোমারই কবিতার ভেতর ডুবে প্রেরণার রহস্যভেদী হয়ে থাকতে।

                            
                        ******