কবিতাটি ছিন্নমূল এক টোকাইকে নিয়ে,  
অনেকের মতো আমিও লিখেছি বলবো তাকে গিয়ে।
একদিন খুঁজে পেলাম তাকে অবশেষে,
রাস্তার পাশে ময়লা ডাস্টবিনের পাশে।

কবিতাটি হাতে নিয়ে বলি শোন ভাই টোকাই,
আমার কবিতাটি তোমাকে একটু শুনাতে চাই।
কেড়ে নিলো কবিতার পাতা, চাইলো না শুনতে,
সহ্সাই ভরে নিল তার পিঠে থাকা থলিটাতে।


আমাকে নিয়ে আর কত লিখবে কবিতা,
এবার ছাড়ো তোমাদের এসব ভনিতা!
এখনও আমার মতো হাজারো টোকাই,  
রাস্তার পাশে কাগজের পাতা খুঁজে বেড়াই।


এমনি হাজারো কাগজের গল্প, কার্টুন কিংবা কবিতা,
সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভরতে হবে হাতের থলিটা।
দুঃখভরা জীবন আমাদের একটুও বদলাবে না,
তোমার লিখা কবিতা যতই অনবদ্য হোক না।

অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা আর বাসস্থান চাই,
শ্লোগানে কাঁপে শুধু রাজপথ, আসলে সমাধান নাই।
আমাদের জীবন নিয়ে এ যেন তোমাদের রশিকতা,
কোন লাভ নেই কবি, যতই লেখো মানবতার কবিতা।


লিখেছো কত কবিতা, গল্প আর উপন্যাস,
আমাদের জীবন নিয়ে এ যেন নিষ্ঠুর পরিহাস!  
তাতে এতটুকুও কি কমেছে দুঃখ যাতনা,
যুগ যুগ ধরে এটাই আমাদের মর্মবেদনা।


তোমাদের মুখে ফুটে কেবলি কথার ফুলঝুরি,
সহসাই যেন পেয়ে যাবো অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা আর বাড়ি।
সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে কেবল গালভরা বুলি,
ইচ্ছে করে তখন তোমাদের সকলের মুখোশ খুলি।


আকাশ ভেঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি নামে যেদিন,
ঝুপড়ি ঘরে শুয়ে অভুক্ত থাকি সারাদিন।
ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট খাবার যা কিছু ছিলো,
ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো এসে খেয়ে নিলো!


তোমাদের জাত নাকি  যায় আমাদের পাশে দাঁড়ালে,
তাই রেখেছো ঢেকে বইয়ের মলাটের আড়ালে।
টোকাইদের নিয়ে ‘রনবী’রা হাজারো কার্টুন এঁকেছে এদেশে,
য়ামরা ছিলাম, এখনো আছি, থাকবো সেই ডাস্টবিনের পাশে!


তোমরা কবি, লেখকেরা যাবে শুধু শুধু লিখে,
বলো তো, ওসব পড়ে কতজন মানবতা শেখে?
জন্মই যে আমাদের আজন্ম পাপ,
তাই কখনোই গুছবে না কোন দুঃখতাপ।


আমরা ছিন্নমূল পথশিশু, আমরাই টোকাই,
শেষবারের মতো শুধু একটি কথা বলতে দ্বিধা নাই।
আমাদের তোমরা অনাদিকাল ধরে পাবে খুঁজে,
নোংরা ডাস্টবিনের পাশে কিংবা কাগজ কুড়ানোর কাজে।