ভয়ে কম্পিত একটি গোলাপ কাঁদছে অঝরে,
কতগুলো নরপিশাচ ছিঁড়বে তারে রাতের অন্ধকারে!  
গোলাপ কেবলই বলে যায়-‘‘ওগো, তোমরা ছিঁড় না আমায়,
আমার প্রতি এতো নির্দয় আচরণ তোমাদের নাহি মানায়।
আমি তো ফুটিনি এখনো, রয়েছি বৃতির আবর্তে,
আমার কি বাঁচার অধিকার নেই তোমাদের মর্তে ?
সুবাসহীন স্ফীত আমি, আমাকে ছিঁড়ে নিও না,
আমাকে দিয়ে কি করে মেটাবে, তোমাদের নষ্ট কামনা?
বড্ড কষ্ট হয় তোমাদের নাসিকার কাছে যেতে,
তোমরা ছিঁড়ো না আজ আমায়, দাও প্রস্ফুটিত হতে।
অসম্পূর্ণ আমাকে অন্ধ হাতে রাতের এ আঁধারে,
বলো, কেন বাঁধতে চাও কঠিন হাতের পিঞ্জরে?
ভোরের আলোতে গোলাপী শরীরটুকু, দেখতে কি কষ্ট হয়?
কুটিল কামনার দাবানলে, কেন জ্বলছে তোমাদের হৃদয়!
সুবাসহীন অক্ষত আমি, নীল হয়ে যাচ্ছি বেদনায়,
নির্দয় আঘাতে আঘাতে জীবনটুকু এই বুঝি যায়!
ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্টের কাছে ক্ষুধার্ত কুকুরের ন্যায়,
খাবলে খাচ্ছ যেন, তোমাদের নির্মমতায় জান আমার যায়!
নিষিদ্ধ এলাকার ব্যতিব্যস্ত একদল খদ্দরের মতো,
তোমাদের লালসার থাবায়, আমি কষ্ট পাচ্ছি কত?
আমার অসহায়ত্বের সুযোগে আমাকে নিয়ে আজ,  
করছো যে নির্দয় আচরণ, নেই তাতে তোমাদের একটুও লাজ?’’
.........................................................................
করুণ কান্না আর বাঁচার জন্য ব্যর্থ শত আকুতি,
হায়েনাদের মনে জাগলো না একটুও সহানুভূতি।
শরাহত পাখীর মতো ভূতলে পড়লো লুটিয়ে,
দু‘ফোটা অশ্রু যেন সাগরসম জল হয়ে পড়লো বেয়ে।
হৃদয়টা পুড়ে হলো অঙ্গার, প্রেতাত্মাদের তপ্ত নিঃশ্বাসে,
উন্মাদের বিকৃত নেশার ছোবলে, হেরে গেলো গোলাপ অবশেষে।
শত প্রতিরোধের পরও ঠেকানো গেল না সর্বনাশ,
কপট কামনার উল্লাসে মাতলো তারা, গোলাপ হলো লাশ!
সৌরভ ছড়াতে দিল না তাকে পৃথিবীর বুকে,
ফুটলো না সকাল অবধি, আঁধারে হেরে গেল কলঙ্ক এঁকে।
ভোরের আলোতে দেখা গেলো ছড়ানো পাপড়ি কটি,
পড়ে আছে গোলাপের রক্ত ভেজা নিষ্পাপ নিথর দেহটি!
নির্বাক, ফ্যাকাসে মুখে গোলাপের পানে চেয়ে আছি নির্বিকার,
অবজ্ঞার হাসিতে অনুচ্চ স্বরে গোলাপ যেন বলছে আমায় বারবার।
ফুটবার আগেই এমনি করে কত যে গোলাপ হারিয়ে যায় নীরবে,  
একটুও কি কলঙ্ক লাগে না বলো, তোমাদের মনুষ্যত্বের গৌরবে?