বাংলা সাহিত্যে কবিতার সমৃদ্ধ ধারা বহতা নদীর মতো । জোয়ার-ভাটা থাকলেও এখনও বেশ জনপ্রিয় ধারা এটি । কবি এবং কবিতার ব্যাপকতা, বিস্তৃতির জন্য নদীমাতৃক বাংলাদেশকে এটিও বলা যায়- কবিতামাতৃক বাংলাদেশ । বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বাংলা সাহিত্যে অনেক জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক আছেন যারা সংখ্যায় কম হলেও কবিতা লিখেছেন ।  নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও এর ব্যাতিক্রম নন । এ বিষয়টিই নিয়ে একটু আলোকপাত করার ইচ্ছে হলো - তাই ক্ষুদ্র পরিসরে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করার চেস্টা করছি মাত্র ।


আনেকের মুখেই শুনি কবিতার জনপ্রিয়তা কমেছে । বিষয়টি আপেক্ষিক । তবুও আমি তেমন মনে করিনা । বরং একটু উচ্চস্বরে আমি বলি - কবিতার জনপ্রিয়তা কমেছে এটি একটি অপপ্রচার! যাহোক, হুমায়ূন আহমেদ কবি হিসেবে পাঠকমহলে সাড়া ফেলতে পেরেছিলেন কিনা তা পর্যবেক্ষণে আমাদের আরও সময় নিতে হবে । এতোদিন বেশ অন্তরালে থাকলেও হুমায়ূন আহমেদের কবিতা ধীরে ধীরে পাঠকদের সামনে নতুনভাবে উন্মোচিত হচ্ছে, আরও হবে বলে আমার ধারনা । বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের কবিতা ভেসে উঠছে নিয়ত । আমি অবশ্য কবিতার হুমায়ূন আহমেদ কেমন ছিলেন সেটি তুলে ধরবো ।


প্রকৃতি বন্ধনা,  প্রকৃতি ও প্রেম অথবা প্রকৃতি ও বিরহ-  বাংলা কবিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ  । জীবনের বিভিন্ন অনুভুতি প্রকৃতির সাথে যেন একাকার হয়ে যায় কবিতার খাতায় । সংগত কারনেই কবিতার হুমায়ূন আহমেদ  ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক । প্রকৃতির রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন তার কবিতায় সহজ সরল পাঠে-  ভিন্নভাবে । সচরাচর কবিতায় যেমন প্রকৃতি বন্ধনা পাওয়া যায় তেমন নয়, বরং বিভিন্ন কারনে বন্দি মধ্যবিত্ত জীবনে আকুতি ভরা কথামালা প্রধাণ তার কবিতা- তার "গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না" কবিতাটি পড়লেই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় ।
“কবির জ্যোৎস্না নয়। যে জ্যোৎস্না দেখে কবি বলবেন-
কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ !
আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য বসে আছি।
যে জ্যোৎস্না দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে-
ঘরের ভেতরে ঢুকে পরবে বিস্তৃত প্রান্তর।  (গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না) "


আবার কবিতার হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন জীবনমূখী । জীবনবোধের কথা আছে তার কবিতায় এখানেও আছে সরলবাক্যে গভীর দিক । জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বদলে যাওয়া রঙ তার কবিতার মাঝে পাওয়া যায় ।
“প্রেমিকাও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর
রোগভুগের কথা পড়তে ভালবাসেন।
চিঠি পড়তে পড়তে দরদে গলিত হন –
আহা, বেচারা ইদানিং বড্ড কষ্ট পাচ্ছে তো ...”
উল্লেখিত পঙতিমালা তার লেখা "বাবার চিঠি" কবিতার কিছু অংশ । স্পষ্ট বোঝা যায় - তার কবিতায় আছে মানব জীবনের বিভিন্ন বাঁক ।


প্রেমের কথামালা সেই চর্যাপদ থেকে আজ অবদি সকল কবির কবিতায় পাওয়া যায় । এটিও আমাদের সাহিত্যের অন্যতম প্রধানরূপ অনুভুতি প্রকাশের । সে বিচারে , তাঁর কবিতা প্রেমের কথা সর্বজন বিদিত। অনেক বইয়ের ফাঁকেই মিলবে তাঁর স্বরচিত কবিতার দেখা । প্রেমের স্বরূপ ফুটে আছে তার কবিতায় বিরহ কিংবা মিলনের ভিন্নতা নিয়ে ।
“তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে ।
ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে ।
আমি তাকে বলতে গেলাম - আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না
এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ?
আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা ।
যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন
ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে ।
আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন । দয়া করে কিছু বলবেন না ।“ (বাসর )


হুমায়ূন আহমেদের কবিতা নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা তার "কবি" উপন্যাসটি পড়তে পারেন । এছাড়াও বিভিন্ন বইয়ে তার কবিত্বের ছোঁয়া পাবেন । নুহাশ পল্লীতে যারা বেড়াতে গিয়েছেন তারা দেখেছেন- ওখানে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরনে রয়েছে কাব্যিক স্পর্শ । হুমায়ূন আহমেদের কবিত্ব ছিলো তার চলনে বলনে - এটি তার ব্যক্তগত সহকারি মোশাররফের সাথে আলাপ করে আমি জেনেছি ।
পরিশেষে কামনা করছি, হুমায়ূন আহমেদের “কবিরূপ” আরো উন্মোচিত হোক । আমাদের কবিতার জগতে তার অবদান জেগে উঠুক । কবিতার সার্বজনীনতার জয় হোক ।