বংশাই নদীটি চলে এঁকেবেঁকে,
দুধারে দিয়ে যায় ভালবাসা মেখে।
রাশি রাশি কাশফুল দুধারে দোলে,
দুকূল উপচে ওঠে বরষার জলে ।


ছোট ছোট ডিঙি দিয়ে মাছ ধরে জেলে,
কিশোরীরা গা ভাসায় নাহিবার ছলে।
দুধারে বসত বাড়ি ঘন বাঁশের ঝাঁড়,
নির্মল মানুষগুলো বেঁধেছে সংসার।


শ্রাবণ দিনে ছুটে চলে ধারা খরতর,
একবাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী হয় পার।
মাস্তুলে মাঝি গায় ভাটিয়ালি গান,
ডিঙি নৌকায় পারাপারে ভরে যায় প্রাণ।


জাল টেনে মাছ ধরে জেলেদের দল,
ভরা বরষায় উদাস নদী করে টলমল ।
চৈত্রমাসে এ নদীতে থাকে হাঁটুজল,
চরের বুকে কৃষক ফলায় সবুজ ফসল।


এখন আর যায় না দেখা আগের মতো রূপ,
নদীও পাল্টে গেছে হারিয়ে স্বরূপ।
নদীর প'রে ঘাটে ঘাটে হয়েছে ব্রীজ সেতু,
এখন আর মাঝি গায় না সেই আগেরই মতো।


রাখাল আর বাজায় না বাঁশি উদাস দুপুর বেলা,
ভরা শ্রাবণেও ভরে না নদী খেলে না আপন খেলা ।
এঁকেবেঁকে ওহে নদী গিয়েছো যতদূর,
যেখানেই মিশো না কেন নিয়ে যেই সুর,
মায়ের মতো মিশে আছো আমাদের এ প্রাণে,
চিরদিনই  রাখিও মনে তোমার কলতানে ।


-সংশোধিত
যৌথ কাব্যগ্রন্থ "অব্যক্ত কথা" -এ প্রকাশিত 2019।


রচনাকালঃ ১৫/১০/২০১৪ ইং
:
:
:
:
------------- বংশাই নদীর পরিচিতি ---------


বংশাই
নদীটি আমাদের
এখানে স্থানীয়ভাবে "কুড়ালিয়া নদী"নামে পরিচিত।
তবে সর্বসম্মত নয়। এ বংশাই নতীর ধারেই মধুপুর
উপজেলা অবস্থিত ।
উৎপত্তি: বংশাই নদীটি মূলত একটি শাখা নদী। এর উৎপত্তিস্থল
পুরাতন ব্রক্ষপুত্র হতে। যা জামালপুর সদর হয়ে ধনবাড়ি,
মধুপুর,ঘাটাইল,বাসাইল,সখীপুর,মির্জাপুর হয়ে ঢাকার
মিরপুরে বুড়িগঙ্গার সাথে মিশেছে।
মির্জাপুরে এসে,যমুনা নদীর উপনদী ধলেশ্বরী এর
শাখানদী এ্যালাংজানীর একটি শাখা লৌহজং বংশাইয়ের
সাথে মিশেছে।
বংশাই নদীটি কালীয়াকৈরে এসে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে।
যার প্রধান অংশ তুরাগ নাম নিয়ে মিরপুরে বুড়িগঙ্গার
সাথে মিশেছে। আরেকটি অংশ সাভারে এসে ধলেশ্বরীর
সাথে মিশেছে।
নামকরণ:১৯৬৭ সালে প্রকাশিত " ময়মনসিংহ ডিস্ট্রক গেজেটিয়ার
"হতে বলা হয়, "বংশি" নাম হতেই বংশাই নামকরণ হয়। অবশ্য মধুপুর
গড়ে, গারো, কোচদের পাশাপাশি বংশি নামে এক ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠী বাস করতো। অনেকের ধারণা, এ
বংশি নৃগোষ্ঠী র নামানুসারে, এ নদীর নাম বংশাই হয়েছে।
(সূত্র:টাংগাইল জেলা ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃঃ ৯৫।)
দৈর্ঘ : উৎপত্তি হতে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত এ নদীটির দৈর্ঘ্য ১০০
মাইল।
(সূত্র: কম্পানী আমলে ঢাকা, জেমস টেলর,পৃঃ ৭।)


ধন্যবাদান্তে
কবি রুহুল আমী রৌদ্র
হলুদিয়া,মধুপুর,
টাংগাইল।