উত্তাল বংশাইয়ের জলে,ভগ্ন এক ডিঙি নৌকা,
আর শতছিন্ন ,একটি কারেন্ট জাল পেতে,
দিনান্তে যে ক'টি মাছ জোটে,
পঞ্চাশ, একশ বা দু' শ টাকা বিক্রি করে,
অনটনে দিনকাটে  ফুরকান মাঝির।


আদুল গায়ে সারাদিন, বৈঠা নেড়ে চলে অন্তহীন,
প্রচন্ড রৌদ্রে,কুচঁকে গেছে গায়ের চর্ম,
তবুও উষাস্ত, বৈঠা বেয়ে যায় অবিরাম।


বড় ছেলেটি লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে,
বাপের বৈঠা ধরে।
তিন মেয়ে,এক ছেলে, স্ব স্ত্রী আর ফুরকান মাঝি,
বেশ বড় পরিবার।
দিনান্তে,হয়ত দু' মুটো পান্তা জোটে,
না হয় পেটে পাথর বাধঁতে হয়!


তবুও ফুরকান মাঝি, গান গেয়ে মাছ ধরে,
চলে অবিরাম।
অবসর পেলে,মহাজনের নৌকা বেয়ে,
দু' পয়সা কামায়।
তার মনে অন্তহীন কষ্ট,তবুও হাসি ফুরায়না।


অভাবের সংসারে,দু'খন্ড মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো,
চরের শোষক মহাজন,দখলে নিয়েছে তা।
দুগ্ধের দুটো গাভী ছিলো,
সে রাত্রে ভাঙ্গা গোঁয়াল হতে,চোরে নিয়ে লাপাত্তা।


নিঃসম্বল ফুরকান মাঝি,সন্তানদের বক্ষে লয়ে,
কিঞ্চিত  ঠাঁই  নিয়েছিলো, বংশাইয়ের কূলে।
সেদিন কাক ডাকা দুপুরে,
জোঁয়ারের জলে ডুবে মরলো,ফুটফুটে শিশুটি!


ছেলেটি কলেজের আন্দোলনে নিরপেক্ষ থেকেও,
ছাত্র নামের সন্ত্রাসীর গুলি খেয়ে,
লাশ হয়ে ঘরে ফিরলো।
চরের রাঘব বোয়াল,বখাটে ছেলেরা,
লুটে নিলো,নিষ্পাপ দুটি কিশোেরীর মধু।


অসহায় ফুরকান মাঝি,দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে,
বিচারের তরে,
মরা ঈশ্বর শোনেনি তার আহাজারী।


কলঙ্কের দায়ে,একঘরে করে,
নির্বাসন দিলো তাদের, কোন এক নির্জন চরে।


অসহায় ফুরকান মাঝি,
বারবার ডুবে মেতে চেয়েছে, বংশাইয়ের জলে,
বংশাইয়ের জলও বুঝি,তারে গ্রহণ করেনি।


অসহায় ফুরকান মাঝি,নির্বাক হয়ে বসে থাকে,
চরের তপ্তবালিতে,
কোন এক ভোরের প্রতিক্ষায়।
  
    """"""যবণিকা ""'''


রচনাকালঃ০৫/১১/২০১৪ ইং