দেখিনু একদিন কলেজ চত্বরে,
সত্তুরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ পিছলে গেল পড়ে।
দেহ তার কঙ্কালসাড়,ছিঁন্ন  বস্ত্র পরনে,
বয়সের রোষে মলিন বদন,বল নেই চরণে।
গ্রামান্তর ঘুরে ভিক্ষে করে,লয়ে মুষ্টি কয়েক চাল
ঝড়ো বৃষ্টিতে ভিজে,দশা হয়েছে কিযে,
ছেড়েছে বুঝি জীবনের হাল।
কাদাজলে পরে গেল,কষ্টের চালগুলি,
আহা বাঁচাধন,করিয়া ক্রন্দন,
কাদাসহ চালগুলি নিচ্ছে তুলি।


বহুকষ্টে কাঁদিতে কাঁদিতে, আগুসার কয়েক হাত,
অমনি ফের পিছলে গিয়ে,
হলো চিৎপাত।
সীমাহীন কষ্ট হৃদয় মাঝে,করিলো অন্তহীন আঘাত,
দু' আঁখিতে মানিলোনা'ক,
অশ্রুর গড়া বাঁধ।


কলেজ মাঠে হাঁটুজল,বৃষ্টিও থামেনি,
ছিলেম আমি ক্লাসে,
ছুটে গেলুম অমনি।
শত বন্ধুরা হেথা হাসিয়া ব্যকুল,
ধরিয়া তুলিতে তারে,
যাবে বুঝি জাতিকূল।


চর্মের জুতো জোড়া, যদি ভিজে যায়,
এই ভয়ে শিক্ষকও,
গেলেন না সেথায়।
চর্মের জুতো কি,জীবনের চেয়েও মূল্যবান?
বুঝি ছিলোনা'ক তাহাদের,
এ হিতাহিত জ্ঞান।


মায়ার প্রবল স্রোতে, যেন থমকে গেল ধমনী,
ভিজে গিয়ে জড়িয়ে নিলুম,
জীর্ণ দেহখানি।
বৈরান নদীর জলে,উপচে পরেছে কলেজ মাঠখানি,
বহু কষ্টে পাড় করিলাম,
সিক্ত তনুখানি।


কম্পনরত মৃতপ্রায় দেহখানি,অশ্রুসিক্ত নয়ন ভরে,
সুধাইলো সে মোরে,
"খুদা যেন ভেস্ত দেন,বাঁচা তোর তরে"।
জিজ্ঞেসিনু তারে,"কোথায় নিবাস"?
অশ্রুর ফোয়ারা ঝরে,কহিলো সে মোরে,
পাশের জীর্ণ কুটিরে করি বসবাস।


চার পুত্র বিধাতা দিয়েছেন মোর ঘরে,
প্রচুর ধনে ধনী তারা,
বড় চাকুরী করে।
বড় কষ্টে বাঁচাধন বক্ষ ফাটিয়া যায়,
মোদের খবর লয়না তারা,
কেমনে দিন কাটাই।


যদি মিলে দু' মুঠো ভিক্ষ,সারা দিবস ঘুরে,
তাহাই খাই বুড়ো বুড়ি,
নয়লে অনাহারে।
নিঠুর নদী কাইড়্যা নিলো,ভাঙ্গা কুটির খানি,
আহা বাঁচাধন, আর বলিতে,
নাহি পারি।


ঝর্ণার মত অঝর ধারায়,ঝরছে আঁখি খানি,
ওহে ধনী, দেখে যা,
গরীবের কষ্টের গভীরতা কতখানি।
আজি এ বৃদ্ধের যদি থাকিতো,রাশিরাশি ধন,
তাহলে করিতে হতোনা,
এ বৃথা আস্ফোলণ।


মাটিতে পরার আগেই,তুলে লইতো মাথায়,
হায় হায়, ভাবি তাই,
জীবনের মূল্য আজি কোথায়?
ধন কি পারে জান দিতে?নাকি পারে মান দিতে?
জান,মান বিধাতার দান,
ধন শুধুই দিতে পারে ক্ষণিক সম্মান।


ধনীর ধনে কোন সুখ নাই,
প্রকৃত জ্ঞানে,
তাহাই ভেবে পাই।
গরীবের তিক্ততার মাঝেই,রহিয়াছে পরম সুখ,
ধনীর রাশিরাশি ধনেও কভু,
ভরে না'ক বুক।


হোক না সে হিন্দু,মুসলিম, বৌদ্ধ,খ্রিস্টান,
প্রাণের বিনিময়ে, যে দেয় প্রাণ,
বিধাতার কিছে তার,অগাধ সম্মান।


তাই চলো ভাই,
ভেদাভেদ ভুলিয়া , মৈত্রীর গান গাই।
মানব সেবাই মানবের কর্ম,
মানব সেবাই পরম ধর্ম।


         -----------০----------


রচনাকালঃ০৫ /০৭/২০০৮ ইং