শসা আর লাউফুলে ভরপুর মাচা,
খোকার খুব পছন্দ, গাছের কঁচি শসা।
কালোজিরা ধানে পায়েশ, আর ইলিশ মাছে লাউ,
খোকার যে খুব পছন্দ,নেইতো এতে লেশ।


মা কালোজিরা ভানে,আর উঠানের মাচায় দেয় উঁকি,
শসা এলো নাকি!আনমনে মা।
থমথমে নিস্তব্ধ রাত,
মাঝে মাঝে এল এম জি'র শব্দ।


মাঝ রাতে ভাঙ্গা রাস্তায় জীপের শব্দ,
মা হঠাৎ জেঁগে, খোকা এলি রে........?
আপন মনে বলে ওঠে মা।
পাখি ডাকে, ভোর হয়,খোকা ফিরে আসেনা।


আজ একাত্তুরের ১৪ই ডিসেম্বর।
বদ্ধভূমিতে আরও অনেকে এসেছে,খোকাও তাঁদের সাথে!
না না এমনিতেই নয়,হানাদার ওকেও ধরে এনেছে,
হস্তপদ বেঁধে।


মাকে একনজরে দেখতে পাওয়া,
ছিল খোকার অন্তিম চাওয়া,আর বুঝি হল না তা।
তেলহীন প্রদীপেরর ন্যায়,তিল তিল করে নিভে গেল,
খোকার সকল অন্তিম চাওয়া।


খোকার রক্তে সাদা শার্টটি,টুকটুকে লাল হল,
বদ্ধভূমির সবুজ মাঠে,পরে রইল লাল সূর্যটি।
বদ্ধভূমির কাকগুলি যেন, কা কা রবে বলে গেল,
ওগো মা দেখে যা,তোর খোকা আজি বদ্ধভূমিতে ঘুমায়।


ভোর হল,শহরের ম্যাচে কিংবা ভার্সিটির আড্ডায়,
কোথাও খোকা নেই!
গ্রামের বাড়িতে মা,অধির প্রতিক্ষায় প্রহর গুণে,
কবে আসবে তার খোকা।


ক্ষণপরে বন্ধুরা খোকার ফেলে যাওয়া ডায়রীতে,
শেষ লেখা পেল, 'মাগো, আর বুঝি দেখা হল না'।
তারপর বিজয় এলো, স্বাধীনতা এলো,
খোকার ডায়রীটাও এলো, মায়ের হাতে!


তবে কি খোকা ফিরবে না?তবে কি সব আয়োজন মিছে?
খোকা,'তুই আমায় ফেলে কোথায় গেলি বাচা'!
মায়ের কান্নায়, যেন আকাশ কাঁদে।
তবুও মা আশায় বুক বাঁধে।


বিজয় হল দেশ,উল্লাসে মেতে ফিরে এল গাজী,
মায়ের চোখে  অপলক দৃষ্টি,
তার খোকা যদি বাড়ি ফেরে?
তাই চেয়ে থাকে পথের পানে।


খোকা যে মিশে গেছে রক্তের বন্যায়..........;
খোকার আত্মদানে,এল এ মহান স্বাধীনতা।
তবে কি বাড়ি ফেরা এ স্বাধীনতাই মায়ের খোকা?


ক্ষণপরে মা,
লাল সবুজের পতাকাটি বুকে জড়িয়ে, উল্লাসে কেঁদে ওঠে,
'এই তো আমার খোকা, ফিরে এসেছ মোর বুকে,
মোর  ভগ্ন এ কুটিরে'।
এ স্বাধীনতা,
এ পতাকা,
সেই তো আমার খোকা।।
   
                      ''''''''''''''''যবণিকা ''''''''''''''


রচনাকালঃ১২/১২/২০১৪ ইং
হলুদিয়া,
মধুপুর,টাংগাইল।।