আমি কাব্য লিখি,তাঁদের স্মরণে,
যারা সত্য ন্যায়ে অটল থেকেছে,ভয় করে নি'ক মরণে।
যারা পরাজয়ের গ্লানি পিছু হটিয়ে,
বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে,
বক্ষের তপ্ত লহুর লহর বয়ে,
এনে দিল এ মহান স্বাধীনতা,
আমি শ্রদ্ধায় ভরে লিখি তাঁদেরই, বিজয় গীতিকা।


আমি কাব্যের তানে,গেয়ে যাই তাঁদেরই গান,
যারা ত্রাসের রাজ্যে বিচরণ করে,
সীমাহীন নিমর্ম নির্যাতন সহে,
রেখে গেছেন,বাংলাদেশের সম্মান।
যাদের শবদেহখানি,শৃগাল কুকুরে খেলেছে টানাটানি,
যথার্থ মর্যাদায়, সমাধিস্থও হয়নি বঙ্গমৃত্তিকায়।
আদরের দুলাল গলেছে স্থলে,
নয়ত বা বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত তনুখানি,
ভেসেছে ডোবার জলে!
আমি লিখি, তাঁদেরই আত্মকথা,
ওদের প্রাণের বিনিময়েই,এলো এ মহান স্বাধীনতা।


আমি কাব্যের লহরে,গেয়ে যাই তাঁদেরই গান,
যারা বুভূক্ষুবস্থায়,ছিন্ন বস্ত্র পরে,নিরস্ত্র হয়েও ঝাঁপিয়ে পরে,
বিশ্বের মানচিত্রে এনে দিল,বাংলার স্থান।
অক্ষির সম্মুখে,মা বোনের সম্ভ্রমহানি,
বেয়নেটের খোঁচায়,ক্ষত-বিক্ষত যাদের দেহখানি,
তাঁদের বিজয় উল্লাস গীতিকা,
মম এ কবিতা।


তাঁরা ছিলেন দুর্মর দুরন্ত, দুর্দমনীয়  অশান্ত,
তাঁদের তপ্ত লহুকণিকায় ছিল,
অন্যায়গ্রাসী অজস্র শাণিত বিষাক্ত বাণ,
ওরা চির অম্লান,চির মহীয়ান।


আমি কাব্যের ছন্দে লিখি,সেই আবালবৃদ্ধবণিতার কথা,
যারা ত্রাসের রাজ্যে,অদম্য দুঃসাহসীকতায়,
সহেছে অবর্ণনীয় ব্যথা।
একসিন্ধু তপ্ত  লহুর নহর বয়ে,
যারা এনেদিল চিরস্বাধীনতা,
তাঁদের তরে,শ্রদ্ধায় ভরে,
মম এ কবিতা।


কিযে দুঃসহ্য যাতনা,কষ্টের অদ্রি গিরি,
শোষনের ষ্টীম রুলার, নির্মম নিপীড়ন,
মাতৃক্রোড় হতে সন্তান কেঁড়ে, মস্তক থেঁতলানো,
আর,নির্দ্বিধায় অবলার সম্ভ্রম হনন।
কালের ইতিহাস কথা কয়,
তাঁদের দুঃসাহসীকতা,কভু ভুলার নয়।
বাংলার গগণ বিধারি,ক্রন্দনরোল হেরি,
যাঁরা ছুটেছিল লয়ে রণতরী,
সেই দুর্মর দুঃসাহসীক,শহীদ গাজীদের আত্মকথা,
মম এ কবিতা।


আমি কাব্যের ভাষ্যে বলে যাই,তাঁদেরই কথা,
যাঁরা অন্ধেরযষ্টি হয়েও,ছুটেছিল রনাঙ্গনে,
ঘরে ফেলে বৃদ্ধামাতা ।
আদরের সন্তান সহধর্মিনীর ছল,রাখতে পারেনি যাঁদের ধরে,
উড়ে গেছে মতিউর, আসেনি'ক আর ফিরে।
হিমাদ্রীসম যাতনা ভেদি,এনেদিল যাঁরা এ স্বাধীনতা,
তাঁদের তরে, নতশিরে,
আমার এ কবিতা।


কৃষক শ্রমিক তাঁতি জেলে,কামার কুমোর ছাত্র জনতা,
কিযে অদম্য সংগ্রামে,এনে দিল এ স্বাধীনতা,
আমি নির্বিঘ্নে লিখে যাই,
তাঁদের ঐক্য সাম্য আর বীরত্বের কথা।
কত নাম না জানা,শহীদের বীরত্বের তরে,এলো এ স্বাধীনতা,
ইতিহাসে লিখা নেই যাদের কথা,
একবারও কি সুগভীর অনুভবে, ভাবি তাঁদের কথা?
কত গাজী, কত কালের চিহ্ন অঙ্গে ধরে,
পঙ্গু বা অন্ধ হয়ে, আজও যাচ্ছে লড়ে।
কোথায় তাদের সম্মান? কোথায় তাঁদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা?
যাঁদের অক্লান্ত শ্রমে ঘামে,এলো এ স্বাধীনতা,
এলো এ লাল সবুজের রক্তিম পতাকা,
সেই শহীদ গাজীদের তরে,
প্রতিবাদের সুতীব্র ঝাঁঝালো স্লোগান গীতিকা,
মম এ কবিতা।


কত মা বোন আজও,
পাগলিনীর বেশে,অধীর প্রতিক্ষায় প্রহরগুনে, স্টেশনে,
কিংবা রেল লাইনের ধারে,
তাঁদের ভাই কিংবা খোকা,কখন আসবে ফিরে।
কি সান্ত্বনা দিয়েছি তাঁদের?কি দিয়েছে তাঁদের, এ স্বাধীনতা?
তাঁদের তরে,খোকার চিঠি,
মম এ কবিতা।
বীর শ্রেষ্ঠ,বীর উত্তম,বীর বিক্রম,এটাই কি তাঁদের প্রতিদান?
এটাই কি তাঁদের ন্যায্যপ্রাপ্য,এতেই কি তাঁদের সম্মান?
আজও শত সহস্র গাজী,দুমোঠো অন্নের তরে,
রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে!
কিন্তু কেন এ হীনতা?
এটাই কি তাঁদের'কষ্টার্জিত স্বাধীনতা'?
হয়ত কত গাজী,এ স্বাধীন বঙ্গে আজি,
করে মানবেতর জীবনযাপন,
বিনে চিকিৎসায় করে ইহলীলাসংবরণ।
কেন তাঁরা আজও পেল না স্বাধীনতার স্বাদ?
পদে পদে সহে যাচ্ছে,শুধুই অপঘাত, অপবাদ?
তাঁদের তরে, প্রতিবাদে ভরে,
মম এ কবিতা।


সেই রাজাকারের বংশধর, আজো বঙ্গ মৃত্তিকায় বিদ্যমান,
ওহে বীর শহীদেরা, ফের জাগ্রত হও,
কেমনে সহে থাকো,তোমাদের এ অপমান?
এ ভঙ্গুর স্বাধীনতা,প্রতিহিংসার রাজনীতিতে পরিপূর্ণ,
স্বার্থের তরে দিয়েছে,মনুষ্যত্বকে কবর,
কে রাখে তোমাদের খবর?
তোমরা জেঁগে ওঠো,নব রণসাজে,
স্বাধীনতার রক্ষাকবজ,নবীনদের মাঝে।
তোমাদের তরে, শ্রদ্ধায় ভরে,
স্বাগত গীতিকা,
মম এ কবিতা।


তোমরা অনির্বাণ, চির অবিনাশী তান,
অন্যায়গ্রাসী তেজদীপ্ত  তেজস্ক্রিয় স্লোগান।
এ বঙ্গমৃত্তিকায় আজো মিশে আছে,
তোমাদের তেজস্ক্রিয় রক্তের বীরত্বগাঁথা,
বিশ্বের মানচিত্রে যতদিন অঙ্কিত রবে,এ লাল সবুজ পতাকা,
ততদিন কভু ভুলবো না'ক, তোমাদের কথা,
ভুলবোনা'ক,তোমাদের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া,
এ মহান,'কষ্টার্জিত স্বাধীনতা"।
                            
                    '''''''''''''''যবণিকা '''''''''


                                
উৎসর্গঃমহান স্বাধীনতার সকল শহীদের।