অতি চেনা জানা কিছু প্রবল দুঃখে আজ আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে, চৈত্রের রোদে পোঁড়া মাঠের মতন।
বুকের ছাতি ফেঁটে হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসতে চাচ্ছে অসহিষ্ণু কষ্টে !
চোখ দুটো পুঁড়ে যাচ্ছে উত্তপ্ত জল প্রপাতের বাঁধাহীন স্রোতে।
খবরের প্রতিটি শব্দে কানের ভিতর যেন তালা লেগে আসছে ।
মনে হচ্ছে কান দুটোতে সিমেন্ট আর বালি মিশিয়ে স্তব্দ করে দেই কংক্রিটের নিচে।
যাতে করে আর কখনো আমাকে শুনতে না হয়, অকাল মৃত্যুর নৃশংস কোন খবর।
অপমৃত্য হওয়া কারো স্বজনের হৃদয় ফাঁটা চিৎকার যেন আর আমার কানে না আসে।
আমি যে আর মোটেও সইতে পারছি না, কেউ আমাকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে যাক।


চোখের কর্নিয়া আর নিতে পারছে না,
জ্বলন্ত লাশের বিভৎস করুণ দৃশ্য !
আজই নিভে যাক, আমার এই বিক্ষুব্ধ দুটি চোখের সমস্ত জ্যোতির ঝলকানি।
যাতে করে আমাকে আর দেখতে না হয়, বেপরোয়া গাড়ির চাকার নিচে লেপ্টে থাকা কোন তরুণের অসমাপ্ত গল্পের বিকৃত লাশ।
আমি আর দেখতে সাহস পাচ্ছি না,
হাজার হাজার স্বপ্ন নিয়ে ডুবে যাওয়া কোন নৌযানের অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ চিত্র।


আর কত কাল গেলে বন্ধ হবে,
রানা প্লাজার মত ভবন ধসে পরে মৃত্যুর মিছিল ?
আর কত কাল গেলে বন্ধ হবে,
বাতাসে অগ্নিদাহ লাশের পোঁড়া গন্ধ ?  
আর কত কাল গেলে বন্ধ হবে,
খুনি চালকের চাকার নিচে তরুণ প্রাণের করুণ নাশ ?


ইতিহাসের পরবর্তী পাতা গুলোতে কী
এভাবেই বার বার ফিরে আসবে,
রানা প্লাজার ধ্বংসাত্মক রুপ?
এভাবেই কী বার বার ফিরে আসবে,
চকবাজারের মত অগ্নিশিখার তলে উন্মাদ মৃত্যু ?
এফ,আর টাওয়ারের মত অজস্র হৃদয় পোঁড়া গন্ধ ?
প্রতিদিন কী পুনরাবৃত্তি দেখতে হবে,
রাস্তায় পড়ে থাকা মেধাবীদের ছেঁড়া ফাঁটা দেহের বিক্ষিপ্ত লাশ?


আমাদের কি সুন্দর একটি জীবনযাপনের কোনই অধিকার নাই ?
আমাদের কি সত্যিই অধিকার নাই সম্মানজনক একটি মৃত্যুর ?
সত্যিই কী আমাদের অধিকার নাই,
স্বজনের লাশের শেষ সৎকার করার ?


ত্রিশ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্তের দামে কেনা এই প্রিয় বাংলাদেশ।
যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বুক পেঁতে দিয়েছিলেন শত্রু বাহিনীর উন্মাদ বুলেটের সামনে।
কী চেয়েছিলেন তাঁরা ?
তাঁদের জীবনের বিনিময়ে দেখা স্বপ্ন কী আজও পূর্ণ হয়েছে ?
নাকি তাঁদের স্বপ্ন গুলো এখনো রয়েছে অপূর্ণ, বিবর্ণ, বিবস্ত্র ?
দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই সবুজ শ্যামল স্বাধীন প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশ।
দেশের মানুষ কী বর্তমানে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে ?
নাকি এখনো অনেক বাকি আছে প্রকৃত স্বাধীনতার ?


লেখাটি শেষ হওয়ার আগেই কি আমি কোন মস্তিষ্ক বিকৃত পাগলে পরিণত হবো ?
কিছুক্ষণ পরেই কি লোকজন আমাকে বলতে থাকবে অতৃপ্ত মানুষিক রোগী ?
আমি এখনো জানি না লেখাটি শেষ করতে পারবো কিনা ।
ভাবনার দোয়ার বার বার বন্ধ হয়ে আসছে।
মস্তিষ্কের সকল বাতি বারংবার নিভে যাচ্ছে ।


কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভবন তৈরী করা হয়।
কিন্তু স্বল্প খরচে সেই ভবনের ঝুকি মোকাবেলার পদ্ধতি রাখা হয় না !
কিন্তু  কেন ?
একটি প্রাণের অপমৃত্যর মূল্য কত ?
নাকি কোনই মূল্য নাই ?
মানুষ কবে সচেতন হবে ?
কবে বন্ধ হবে চোখ পোঁড়ানো অপমৃত্যুর লাশের মিছিল ?

দূর্ঘটনা কবলিত অঞ্চলে যখনি উদ্ধার কাজ চালাতে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ,
কেন শোনা যায় তাদের সরঞ্জামের অপ্রতুলতার ?
আর কেনই বা উৎসুক জনতার ভিড়ে উদ্ধার কাজে বাঁধাগ্রস্ততা আসে ?
উদ্ধার কাজে বাঁধা সৃষ্টিকারী উৎসুক জনতা কবে সচেতন হবে ?
ধ্বংস স্তুপের সামনে দাড়িয়ে সেল্ফি তোলার প্রতিযোগীতা কবে বন্ধ হবে ?
নাকি কখনোই বন্ধ হবে না ?


যে সমস্ত উৎসুক জনতার ভিড়ের কারনে উদ্ধার কাজ ব্যহত হয়, সেই সমস্ত জনতা কি মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী নয় ?
আমি বলবো অবশ্যই দায়ী ?
তাই আজ অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বলতে চাই, দূর্ঘটনা কবলিত অঞ্চলে উদ্ধার অভিযানে বাঁধা সৃষ্টিকারী অতি উৎসুক জনতার বিরুদ্ধে কঠোরতম আইন পাশ করা হোক।
যাতে কেউ কোন উদ্ধার কাজে বাঁধা সৃষ্টি  করতে না পারে।
তবুও যদি দূর্ঘটনায় পরা কিছু বেশি জান মাল বাঁচানো যায় ।
এবং বাংলাদেশের সকল আইনের সঠিকতর প্রয়োগ এখন সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবী।


এত অপমৃত্য, বিভৎস লাশের টুকরো টুকরো মাংস পিন্ড।
অথবা নদীর জলে ভেসে যাওয়া বেওয়ারিশ লাশের মিছিল।
চাকার নিচে পিষে যাওয়া অসংখ্য তরুণ তাজা প্রাণের অবসান !
এ দায়ভার কার ?  সরকারের ?
নাকি আমার, আপনার,  আমাদের  সকলের ?


মানুষ যদি  সচেতন হয়,
সরকার যদি সঠিক ব্যবস্থা নেয়,
দেশে যদি সঠিক আইন থাকে,
সেই আইনের যদি সঠিক প্রয়োগ থাকে,
তবেই পাওয়া সম্ভব রক্তের দামে কেনা প্রত্যাশিত বাংলাদেশ।


আসুন, সবাই মিলে সচেতন হই,
মানুষের মত মানুষ হই,
আর প্রিয় বাংলাদেশ কে একটি সুখী, সসমৃদ্ধি ও শান্তির দেশে পরিণত করি।
*******************************************
লেখার স্থানঃ ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।  ২৮-০৩-১৯ ইং, রাতঃ ১২.৫০ মিঃ


ই-মেইলঃ  salimraza242@gmail.com
শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ