……“নিঃসঙ্গ-একাকী জীবন, অথর্ব অসহায়
স্বজনের চেয়ে গাছ-পালা বন-পাখি বড় বেশি আপন  
ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা গৃহকোণের ময়লা কাপড়  
দাম তার সংসারে এর বেশি নয়, অতঃপর; একদিন
চলে গেল, হাসিমুখো ছবিটি স্মৃতি হয়ে রবে।”  

            স্মৃতি কবিতার অংশবিশেষ


        অনন্য রচনাকার কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল।


    কবির উৎকৃষ্টতম রচনাগুলির মধ্যে এটি একটি অন্যতম  সৃষ্টি। আসরের জ্ঞানী-গুণী কবিরা ইতিমধ্যেই প্রশংসা করে কবিতাটির প্রতি তাঁদের মূল্যবান মন্তব্যদান করেছেন। প্রতিবেদকও নিজের মতো করে জানিয়েছে কবিতাটির প্রতি তার মনোভাব। তবু কিছু কথা বাকি রয়ে গেছে। প্রতিবেদনটি সেই উদ্দেশ্যে-  
   প্রথমেই, জানাই নিছক কবিতায় এমন বেদনাময় অনুভূতি আসতে পারে না।আসলে এর প্রতিটি শব্দের পরতে পরতে আছে নিঃসঙ্গতা আর অসহায়তার সূচবিদ্ধ যন্ত্রণা। আকস্মিক কোন যন্ত্রণায় মানুষ অনন্যোপায়।কিচ্ছু করার নেই। কিন্তু, যে  যন্ত্রণা আসে ধীরে ধীরে-প্রতি মুহূর্তে–তা বড়ো অসহনীয়। কারো অবহেলায়–উদাসীনতায়-নির্লিপ্ততায়  বুকের  মধ্যিখান থেকেই এমন অনুভূতির প্রকাশ পায়।এর প্রতিটি শব্দের উৎপত্তিস্থল এক একটি রোজনামচার পাতা।  নিছক কবিকল্পনা প্রসূত বলে ভাবলে  তাই ভুল হয়ে যায় বড়ো।
  মানুষ কেন? সব প্রাণীই জন্মাবে-বড়ো হবে–বুড়ো হবে বা জরাগ্রস্ত  এবং শেষ পরিণতিতে পৌঁছবে। সেটা তো  অবশ্যম্ভাবী। কিন্ত চূড়ান্ত প্রস্থানের পূর্বে প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয় বড়ো অমানবিক। সারা বিশ্বজুড়ে বার্ধক্যকালীন  একাকিত্ব একটা সামাজিক সমস্যা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ‘একাকিত্বের মহামারী’ শুরু হয়ে গেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোও একাকিত্বের মড়কের অপেক্ষায়। নিঃসঙ্গতার অনেকগুলো কারনের মধ্যে  ছোট্ট পরিবার,অতিব্যস্তময় জীবনযাত্রা, ভোগসর্বস্বতা অন্যতম।স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতা। আর একটা সমাজ কতটা স্বাস্থ্যবান তা বোঝা যায় সেখানকার  বৃদ্ধদের/বৃদ্ধাদের  অবস্থা দেখে।
  অবস্থা কোথায় পৌঁছুলে, কবি ভাবাতে বাধ্য করেন পাঠককে- “পড়ে থাকা গৃহকোণের ময়লা কাপড়” –এর মতো। বঞ্চনায়, তিলে তিলে শেষ হওয়ার পর  মানুষটি “হাসিমুখো ছবি” হয়ে যায়। ওই হাসিটা বিদ্রূপের- নিজের প্রতি-সংসারের প্রতি-সমাজের প্রতি। সমাজে-সংসারের এমন নির্দয় ছবিটাই এঁকেছেন শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল, ব্যথা ভরা হৃদয়ে- অনুপম শব্দবন্ধে তুলে ধরেছেন মহাপ্রস্থানের পূর্বের সেই শেষ অধ্যায়ের কথা। তাঁর লেখনী নিঃসৃত প্রতিটা শব্দই মোচড় দেয় পাঠককে। সঙ্গত কারণেই প্রতিবেদক চায় না এমন করেই চলুক সমাজটা।অবস্থাটার পরিবর্তন কামনা করেই এই প্রতিবেদন।
সমাজ বা অবস্থা পাল্টানোর কারিগর তরুণ প্রজন্ম।তাঁরাই ঠিক করুন কোন পথে কেমন করে চলবে ভবিষ্যতের পথ-
   বলা বাহুল্য, এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য-কোনো সহানুভূতি বা কোনো অনুকম্পা ভিক্ষার জন্য নয়।  
   শুধু, একটু সম-অনুভুতি নিয়ে ভাবতে অনুরোধ, আগামী প্রজন্মের কাছে-