শ্রদ্ধেয় কবি প্রবীর চ্যাটার্জী।
   আসরের বর্ষীয়ান কবিদের মধ্যে অন্যতম। না প্রথমেই একটু ভুল হল-কবিকে বর্ষীয়ান বলে। তাঁর বয়সটা তো জানা নেই আমাদের। কবিতার মাঝে যে চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়ে চলেছেন তিনি- প্রতিদিন, অন্তত তার নিরিখে তাঁকে বর্ষীয়ান বলা যায় না। তিনি আমার মতে চিরযুবা-চিরসবুজ।  যাই হোক,  কাজের কথায় আসি- আসি কবির কথায়।
  কবি কথা বলেন কখনো বা আত্মকথা কখনো বা অন্যের। কবি যখন নিজের কথা বলেন তখন যেমন চিনতে পারি না তাঁকে আবার চিনতে পারিনা তাঁর সৃষ্ট অন্য চরিত্রের। বর্ণময় কবিকে তাই কোন বাঁধাধরা ছকে ফেলা যায় না। তাই কখনো বা  প্রেমী বা  নারী প্রেমী-
( স্বপ্নের লাভ স্টোরি)
“অন্ধকারে চুপিচুপি দুজনে ছিলাম লুকিয়ে, / হৃদয় হলো উদ্বেলিত, কণ্ঠ হলো ক্ষীণ, / স্তব্ধ সায়াহ্নে ঝুমকা- দোলানো কানের নিকটে / বলতে অভিলাষ হলো কিছু কথা। /
যার না আছে কোনো অর্থ, না আছে সঙ্গতি।”
‘চার টুকরো কবিতায়’-
“চাঁদ আমাকে চিঠি পাঠিয়েছে /জ্যোৎস্নায় মুড়ে / তারাগুলো যে অপেক্ষায় বসে আছে  / উত্তর আশা করে”


আবার কখনো বা তিনি নারী বিদ্বেষী- (সতীপনা)
কলিজাতে বুকের মাঝে জ্বলে যৌবন / বিলাস হিল্লোলে করি জীবন যাপন। /
দেখি নীল ছবি দেখি নগ্ন নৃত্য ক্লাবে / তবু সতীপনা দেখাই আমরা সমাজে”।


‘মিলনের তৃষ্ণা’ কবিতায়  পরকীয়ার-নিষিদ্ধ প্রেমের ছোঁয়া মেলে। শুধু প্রেম নিবেদন নয় দেহজ কামনা- বাসনার প্রকাশ পেয়ে এক অনির্বচনীয় সুন্দরতায় উত্তরণ ঘটেছে কবিতাখানির।    
“তুমি বরং ফিরে যাও তোমার / বিবাহিত প্রেমিকের কাছে। / কামনার কম্পিত শিখা /
তোমার কমনীয় দেহে। / কেতকীর গন্ধে দুরন্ত / এই অন্ধকার আমাকে কী ক’রে ছোঁবে?”  
নারী শরীর এসেছে অত্যন্ত সাহসে ভর করে বারবার।নারীর প্রতি পূর্ণ সহ অনুভূতি জানিয়েছেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। সুযোগ সন্ধানী পুরুষকে তিরস্কার করেছেন সোজাসুজি, সপাটে।  
  তাই তিনিই একমাত্র বলতে পারেন-(এক নারীর জবানী)  
“আমার বক্ষে ঠিক কতজন পুরুষ স্পর্শ করেছে গুণে বলা কঠিন।/
ভিড় বাসে ট্রামে ফুটপাথে বাজারে / অচেনা কিছু হাত ছুঁয়ে গেছে আমায়।”    


এতকিছুর পরও কবি মন অপূর্ণ রয়ে গেলো- “অপূর্ণ রয়ে গেলো কবিতা।”
“অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে ভিজলো কবিতার পাতা, / দেখে ভালোবাসাহীন পৃথিবীর এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা।”
‘পরিচ্ছন্ন’ শব্দটি কবি খুব পছন্দ করেন- কারণ মন্তব্যদানে অনেকবার দেখেছি, ব্যবহার করেছেন তিনি।  তাঁর কথাটি তাকেই ফিরিয়ে দিয়ে বলি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, বর্ণময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি। তাঁর লেখনী   সোজাসাপটা। সাহসে ভর করে যেটা মনে আসে – যেটাকে ঠিক মনে হয়, সেটাই প্রকাশ করেন তিনি।   কোন আড়ষ্টতা স্পর্শ করে না তাঁকে।
আগাম অভিনন্দন জানাই তাঁকে পাতায় দুশো কবিতার জন্যে। তাঁর লেখনী  আরও অনেক অসাধারণ  কবিতা ( আজ অবধি একশত নিরানব্বই) আর আলোচনা ( আজ অবধি একচল্লিশটি) উপহার দিক  কবিতার পাতায়- এই কামনা করি।  
তিনি ভালো থাকুন এই প্রার্থনা করে আজকের মতো আলোচনায় দাঁড়ি টানলাম।
ধন্যবাদ।