মাটিতে শুয়ে আমি, আগরবাতির ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে পুরো ঘর।
উত্তরে মাথা দক্ষিণে পা আর পূব পশ্চিমে অনেকগুলো অশ্রুসিক্ত মুখ।
আমার বুকের উপর মায়ের মাথাটা পড়ে আছে,
মায়ের সুন্দর মুখটা এত ফ্যাকাশে কেন আজ?
চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে আছে।
অশ্রু থামছে না, বিলাপ থামছে না।


ওই যে, ঘরের ঠিক কোণাটায় আমার রূহটা, যমদূতের শক্ত হাতের আড়ালে বন্দি।
সেটাও কেমন ক্লান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে আছে।
খুব চেষ্টা করছে যমদূতের হাতের বাঁধন ছুটে আবার আমার ভিতরে ফিরে আসতে,
আমায় জাগিয়ে তুলে সে আবার মা'কে বলতে চায়, "কেঁদোনা মা, ফিরে এসেছি"।


আশেপাশে তো সবই পরিচিত মুখ আমার,
আশ্চর্য এ দিনে সকলেই একত্রে ক্রন্দন মেলায় শামিল হয়েছে।
আমার বাবা, কাছে আসতে পারছেন না, দূরেই দাঁড়িয়ে আছেন।
ছেলেকে কোলে করে কত ঘুম পাড়িয়েছেন ছোটবেলায়।
কিন্তু, আজকের ঘুম ভেঙ্গে ছেলে আর কখনোই উঠে বলবে না, "বাবা,গুড মর্ণিং"।


আমার রূহটা আবার নড়ে চড়ে বসে, বাবার দিকে তাকায়।
আবারও যমদূতকে মিনতি করে, "শুধু একটিবার, শুধু একটিবার ফিরে যেতে দাও,
শেষবারের মত বাবার পিঠে বসে ঘোড়া দৌড় খেলতে চাই।"
"শেষবারের মত উঠে দাড়িয়ে বলতে চাই, "দেখো বাবা, তোমার চেয়ে লম্বা হয়ে গেছি"।


কিছুক্ষণ পরেই আমার শরীরটাকে গোসল করনো হবে।
জানাযার পর সেই সাড়ে তিনহাত মাটির ঘরে চলে যাচ্ছি।
শুনেছি বাবা নিজ হাতে সেখানে মাটি ভরবেন।
জানিনা, সন্তানকে শেষ দেখার অনুভূতিটা কেমন।
বাবা পারবেন কিনা জানিনা।
যাই হোক, সবাইকে বিদায়।


**********
*********★