প্রথমে নাম ছিল পল্লীমা প্রকাশনী ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। পল্লীমা প্রকাশনী থেকে আমার চমৎকার সাহস কাব্যগ্রন্থ ১৯৮৫ প্রকাশ হয়। ১ বছর পরে ১৯৮৫ সালে ‘লেখক’ নামে একটা লিটন ম্যাগাজিন প্রকাশক করলাম। সম্পাদক আমি নিজে (শেখ সামসুল হক)। এ ম্যাগাজিনে গ্রন্থালোচনা, গল্প ও কবিতা ছাপা হতো। অনিয়মিত ভাবে ২-৩টি সংখ্যা ছাপার পর আর ছাপতে পারিনি। তারপর আমার ফরিদপুর লোক সাহিত্য প্রবন্ধ গ্রন্থটি আমি নিজেই লেখক প্রকাশনী নাম দিয়ে প্রকাশক করলাম ১৯৮৪ সালে। সেই ছিলো শুরু। তখন আমার কাছে বন্ধুরা বললো আমরা কিছুটা সাহার্য্য করি তুমি আমাদের বইগুলোও বের করো। তখন আমি চিন্তা করলাম আমি কবিতা লিখি কবি হবো। বই প্রকাশ করে প্রকাশক হবো না। আর আমি যেহেতু সরকারী চাকুরী করি আমার নামে ট্রেড লাইন্সেস করা যাবে না। তারপর আমার বউয়ের নামে ‘শেখ বাবলী হক’ নামে ১৯২ ফকিরাপুল, ঢাকা ঠিকানায় ট্রেড লাইন্সেস করলাম। প্রকাশনীর প্রকাশকও শেখ বাবলী হক। সরকারী সব ঝামেলাও হলো না। প্রথম বছর প্রকাশ করা হলো আমার চমৎকার সাহস, কবি রবিউল হুসাইনের- সুন্দরীফণা, কবি বেলাল চৌধুরীর- সেলাই করা ছায়া, কবি খোশনূরের বর্ণের বন্ধন, কবি সামসুন্নাহার ফারুকের সূর্বণ সময়, কবি শামীম আজাদের স্পর্শের অপেক্ষা, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর শিশুতোষ গ্রন্থ নাইপাই, কবি সাইয়িদ আতিকুল্লাহ’র এই যে তুমুল বৃষ্টি, কবি জাহাঙ্গীর হাবীবুল্লাহ’র কাব্যগ্রন্থ, কবি নাসরীন নঈমের কাব্যগ্রন্থ-যার খুশী যাও, জেবা রশীদের বাংলা অনুবাদ ঈশপের গল্প, জামসেদ ফয়েজের উপন্যাস মহুয়ার দেশে, ইসমাৎ চৌধুরীর ২টি গল্পের বই সহ আরো অনেকের গ্রন্থ। এর উদ্দেশ্য ছিলো তরুণ লিখিয়েদের সহযোগীতা করা। যেহেতু এত টাকা দিয়ে তরুণরা বই প্রকাশ করতে পারে না। আমি প্রকাশনীর প্যাডে বিসিআইসি’র বরাবরে আবেদন করে বইয়ের ছাপা সংখ্যার হিসাব দিয়ে ডাবল ডিমাই কর্ণফূলি কাগজ তুলে বই গুলো ছাপানোর কাজ করতাম। তাতে তরুণ ও নতুন লিখিয়েরা কিছুটা উপকৃত হতো। লেখকরা সামান্য ছাপার খরচ দিতো। ৩৪ নং বাংলা বাজারে প্রকাশনীর একটা শো-রুম নিলাম। বাইন্ডিং কারখানা করলাম ফকিরাপুল অফিসে একটা এবং শিরীষদাস লেনে একটা। শিরীষদাস লেনে কাগজের গোডাউন এবং বাইন্ডিং কারখানা একসাথে ছিল। ৬ মাসের মাথায় গোডাউন লুট হলো। সোহরাওয়ার্দী কলেজের জাতীয় ছাত্র সংহতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১ লক্ষ টাকা চাঁদা চাইলো। কিন্তু চাঁদা দিলাম না। কারণ এখানে লাভ নেই কেবল নামমাত্র খরচে নিজস্ব বন্ধু বান্ধবদের বই প্রকাশ করা হচ্ছে। ম্যানেজারকে বললাম মামলা করো সূত্রাপুর থানায় গিয়ে। সূত্রাপুর থানায় মামলা নিচ্ছে না। তখন আমি যেহেতু সরকারী চাকুরী করি ঝামেলা এড়াবার জন্য দৈনিক নব অভিযানে অবৈতনিক সাহিত্য সম্পাদক ছিলাম। পরে দৈনিক নব অভিযান’র নির্বাহী সম্পাদক খোন্দকার আতাউল হক (বর্তমানে আলোর মিছিল পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক) সূত্রাপুর থানার ওসিকে ফোন করলে মামলা নিলো। পরের দিন প্রকাশনীর ম্যানেজার দিনাজপুর জেলার লোক আবদুল খালেককে ধরে নিয়ে সরোওয়ার্দী কলেজের ভেতর মারধর করলো। গোডাউনে ভাংচুর করলো। খবর পেয়ে আমি এবং কবি নাসরীন নঈমের স্বামী নঈম উদ্দিন আহমেদ আমার সাথে গেলেন।  কবি নাসরীন নঈমের স্বামী নঈম উদ্দিন আহমেদ আমাকে বললেন আপনি একা যাওয়া ঠিক হবে না৤ আমি অাপনার সাথে যাবো চলেন৤ গেলাম দুজনে৤ পরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বললো মামলা উইড্রো করতে হবে। এবং মামলা করে এখানে ব্যবসা করতে পারবেন না। সূত্রাপুর থানা আমাদের কিছুই করবে না। অগত্যা মামলা উইড্রো করলাম। পরে শিরীষদাস লেনের গোডাউন ও বাইন্ডিং কারখানা বন্ধ করে দিলাম। এই কারণ এবং আরো একটি কারণ ছিলো। একদিন বিটিবিতে কবিতা পড়তে গেলাম আমি (শেখ সামসুল হক) আতাহার খান, আবিদ আজাদ, হাসান হাফিজ, জাহাঙ্গীরুল ইসলাম, রবীন্দ্র গোপ, সুফী আবদুল্লাহ আল মামুন আরো অনেকেই। তখন কবিতা পড়ে আসার সময় খুরশিদা হকের রুমে ঢুকলাম। দেখা করে আসার জন্য। তিনি তখন বিটিবি’র পরিচালক-বার্তা। রুমে ঢুকে সোফায় বসার পর তার এক কলিগকে আমাকে পরিচয় করে দিল আমার বইয়ের প্রকাশক। তখনই আমার চেতনায় লাগলো বিষয়টা। ভাবলাম সারা জীবন কবিতা লিখলাম। কবিতা লেখার জন্য এত হাঙ্গামায় পড়লাম। আর এখন যদি প্রকাশক হতে হয় তাহলে সব চেষ্টাই বৃথা। এক মুহূর্তেই লেখালেখি জীবনের সব অর্জন ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবার অবস্থা। তখনই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম আর প্রকাশনী রাখবো না। সেই থেকেই বন্ধ করে দিলাম লেখক প্রকাশনী। লেখক প্রকাশনীর মনোগ্রামটা এঁকে দিয়েছিলো বাংলাদেশ স্কাউটসের স্টাফ আর্টিস্ট লক্ষণ সূত্রধর। লেখক প্রকাশনীর বই গুলো প্রকাশের সময় পিছনে বইর পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে সংশ্লিষ্ট কবি/ সাহিত্যিকের ছবি দেয়ার প্রচলন শুরু করলাম ১৮৮৬ সালের দিকে। বেশীর ভাগ ছবি তুলেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের আলোক চিত্রশিল্পী সৈয়দ মাসুদ হোসেন।