দূরন্ত কৈশর থেকেই আমার ইচ্ছের ডানাগুলো উড়তো এলোমেলো!
কবিতা পড়তাম, আবৃত্তিও করতাম;
শব্দের খোঁজ পাইনি বলে সাজাতে পারিনি কবিতার মত করে।
ব্যাকরণের অকারণ জ্বালাতন কাপড় টেনে ধরতো পিছন থেকে!
নগ্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর সাহস করিনি।


কিন্তু একাত্তরের হাতিয়ার বাহাত্তরে জমা দেবার পর মনে হলো,
কলমকেও তো হাতিয়ার বানানো যায়!
অজ্ঞাত বাসে তখন আমার ফেরারী জীবন!
অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মাশুল গুনছিলাম।
মন্ত্র শিখতাম জীবনকে সুষম আর সাম্যে নন্দিত করার।
তারই কোন এক ফাঁকে কলম তুলে নিলাম।
সেদিনই প্রথম একটা অকবিতা সাজালাম।

“লও অস্ত্র,
করো যুদ্ধ,
ভাঙ্গো শোষকের ইমারত,
গড়ো দুর্ভেদ্য গণদূর্গ!
জ্বালো আগুন,
মারো মহাজন,
লাঙ্গল তোমার জমিও তোমার,
কর উৎখাত গ্রাম্য জোৎদার!
লও শপথ,
এবারের মন্ত্র,
প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।‍‍‍‍"


কিন্তু পঁচাত্তরের পর ভোজবাজির মত
অমানিশার আঁধারে হারিয়ে গেল তারকার ঝাঁক!
মনের অজান্তে নক্ষত্র পতনের সাক্ষী হয়ে রইলাম!
কিন্তু কলমটা ছুঁড়ে ফেলে না দিয়ে
উঁইয়ে খাওয়া টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলাম।


তারপর কারাজীবন শেষে নতুন পাঠের নীরবতা!
নতুনের সন্ধানে উড়ে বেড়ানোর লম্বা ইতিহাস!
তবে নজরুল, সুকান্তের সাথে যোগ হলো
কবি ফররুখ, আল মাহমুদের অনুপ্রেরণা;
সবশেষে মাথার উপর ছায়া হয়ে এলো  
কোরআন হাদিসের শীতল ছামিয়ানা!

এখনও ইচ্ছে করে শব্দ সাজাতে,
কিন্তু পারি না ব্যাকরণের ভয়ে!
সাথে আছে ক্রশ ফায়ার, গুম আর বন্দুক যুদ্ধের ভয়!
তাই আমি এখন একটা বেকার জীবনের
ভার বয়ে বেড়াই লাশের দুর্গন্ধ ছড়ানো মজলুম চত্বরে।

হে আল্লাহ্!
আমাকে কেন পাঠালে অনুর্বর একটা বন্ধ্যা জমিনের মত করে!
কেন পাঠালে একটা কাপুরুষের মত জিন্দা লাশ বানিয়ে!
তার চেয়ে মুক্ত করে দাও অনন্ত পথের পান্থ করে।


বিঃদ্রঃ-কবি ফররুখ আহমদের শততম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকেই উৎসর্গ করলাম কবতিাটি।