আমি বিদ্রোহী ।
কিছু নাদেখা স্বপ্ন হয়ে ফুটিয়ে তুলতে চাই ।
মুখপোড়া সব অন্ধ ভক্তের মধ্যে মুখখুলে
একবার একটা প্রশ্ন করতে চাই ।
তাদের বিশ্বাসের কালো বন্ধনের মধ্যে দিয়ে
দেখতে চাই কিছু যুক্তির শক্তি ।
আমি বিদ্রোহী সেজেছি তাই
এই ভক্তি ব্যাপী পৃথিবীতে যুক্তির শক্তি
একবার দেখিয়ে যাবো ভাই ।
বিনা কারণে যখন সংসারে , একটা পাতাও নড়ে না
বিনা ছন্দে যখন কবিতায় , মেঘেরা সব গরুর মতো চড়ে না
তখন
আমি বিদ্রোহ করি
আমাদের পাথরঠাসা সেই হৃদয়ের ভক্তি সাগরে
তোমাদের সংসার যখন ঘুষখোরে ঠেসে আছে
তখন ঈশ্বর কি একটা দানাও পক্ষপাত করবে না !
যখন তোমাদের হিসাবে দুয়ে দুয়ে ছয় হতে পারে
তখন তিনি কেন তেলে জলে প্রদীপ জ্বালাবেন না !
আমি দেখেছি প্রচুর ভিড়
ওই শালা মৃতদের ঘিরে --
আমি দেখেছি মানুষ বিকিয়ে দেয় নিজেকে
ওই শালা ভন্ডদের পায়ের তলে ---
আমি প্রেমিক হয়ে ব্যর্থ হয়েছি
তাই প্রেমের পথ গড়তে পথে নেমেছিলাম
এই ভক্তি রুপি পাথর এখন সামনে আমার
তাই বিদ্রোহী হয়েছি
শুধু ভক্তিটুকু যুক্তিতে পরিবর্তন করবো বলে ।
বিদ্রোহ মানে , তিনটে অক্ষর নয়
বিদ্রোহ মানে , শুধু প্রতিবাদ নয়
বিদ্রোহ মানে , একটা ভাবনা মানুষের জন্য
বিদ্রোহ মানে , ভালোবেসে পাশে দাঁড়ানো
একটু ভালোবাসার জন্য ।
আমি বিদ্রোহী
মানুষের কথা বলে যাই গানে গানে তাই
আমি বিদ্রোহী
মানুষের কথা লিখে যাই কলমের ভাষায়
কোথাও দেখি মানুষের শরীর জুড়ে
অন্যায়ের কালসিটে
কোথাও দেখি মানুষের মনের গভীরে
ভাঙ্গনের রক্ত ছিটে
আমি নীরব হয়ে দেখেছিলাম ধর্মের ছলনা
নারী হয়ে ওঠে কেমন করে পুরুষের খেলনা
আমি বিদ্রোহী তাই কলমের হাত ধরে
সচেতন করে যাই চিরকাল ভালোবাসার অক্ষরে ।
চলুন আজ মানুষের বিরুদ্ধে পথে নামা যাক ।
মানুষ মানে আমরা সবাই , মান আর হুসে ভরা
প্রত্যেকেই ।
আমাদের আচরণ আজ উন্নতির কেনা গোলাম
বিজ্ঞানের দাস হয়ে আজ আমরা সুখী
স্বার্থপর হয়ে উঠেছি আমরা প্রত্যেকে -- এ যুগের জনগন ।
মোবাইলের রেডিয়েশন হোক আর পারমানবিক বিস্ফোরণ
আজ আমরা সময়কে মুঠোয় বাঁধতে চেয়েছি
বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা সবাই হিতের বিপরীতে হেঁটে
হানির মন্ত্র মেনে চলেছি ।
আজ বিদ্রোহী এই মানুষটিও লজ্জিত
কারন সে নিজেও এই পথেরই পথিক
পৃথিবীকে নিজের বাপের মনে করে
আমিও তো সবার মতোই স্বার্থের রঙে রঙিন ।
আমি বিদ্রোহী নই আজ
একজন কলঙ্ক , হত্যাকারী পাষন্ড নিচ
সবারই মত
ধিক্কার তাই আমাকেও , কলম আমার জানাতে এসেছে
চিরকালের মত ।
যেখানে অপরাধই শত অংশে ভরা
সেখানে শাস্তি দেবে কে ?
হে প্রভু , এই সামন্তের অনুরোধ শুনুন
আমাদের অতীত ফিরিয়ে দিন
আগেকার মতন ।
সাবধান !!
পদে পদে অচলায়তন । ডিগ্রিহীনরা আজ মসনদে আর
ডিগ্রিধারী সব জুতোর তলায় ভুপিষ্ট ।
এ গল্প তোমার গল্প , আমার গল্প ; এই দেশের প্রত্যেকের গল্প
এ গল্প সাম্রাজ্যের পর সাম্রাজ্যের গল্প
কবরের তলায় ঘুমিয়ে থাকা শোষিতদের গল্প
এ গল্প যুগ যুগান্তরের বার্তা বয়ে আনে মিষ্টতার মধ্যে ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখো ; পরাধীন মন্দিরে
পরাধীন হিন্দু থেকে মুসলমান ---
আমাদের ঔকাদ ছিল কতটুকু জনাব সেদিন
জুতোর তলায় চামড়ার মাঝে আটকে পড়া পেরেকের মতো ।
তারপর পাল্টে গেল পাতাটা ; স্বাধীনতার মুখোস পড়লাম
সেদিন ব্রিটিশ এর রাজদণ্ড মিশেছিল ধুলায়
কিন্তু স্বাধীন আমরা কোথায় হলাম ।
জয় জয় মহারাজ , তুমি ঈশ্বর হয়ে বসলে এসে মসনদে
গণতন্ত্রের নাম ধরে আসন লুটে গেছো সত্তর বছর ধরে
আমরা সহ্য করেছিলাম সব ---
তবে আর নয় । তাই সাবধান !!
খুঁজে আনো নতুন ভারতের জন্য সুভাষ , নজরুল
অথবা বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম ।
পরিবর্তন আসুক নব্য এক স্বাধীনতার হাত ধরে
পরিবর্তন আসুক ঐক্য , চিন্তা আর মানুষের মননে ।


আমি বিদ্রোহী
বিদ্রোহ শিখেছি তোমার থেকে
তোমায় দেখে প্রতিবাদ জেনেছি
শিখিয়েছ তুমি ' না ' বলতে এই সমাজে
তোমাকে তাই, প্রেম , এই বিদ্রোহীর রক্ত সেলাম ।
ভালোবাসার যে মন্ত্র বীজ
পুতেছিলাম একদিন
হৃদয়ের মাটিতে ,
আজ তা সম্পূর্ণ ।
সম্পূর্ণ , কারন তোমার পদ চিহ্ন
আজ বুকের ওপর দাঁড়িয়ে
রণ নেত্য করে কালি হয়ে , দুর্গা হয়ে
বিদ্ধ করে প্রত্যেক অসুচিময় স্বভাব ।
আমি প্রেম বিলিয়ে দিতে পারতাম না
তোমার আদর না পেলে
অন্যায় কে অন্যায় বলে ঘোষণা করতাম না
জীবনে তুমি না এলে ।
আমি প্রেমিক হতে এসেছিলাম একদিন
বিদ্রোহী হয়েছি ক্রমে ক্রমে
কিন্তু খেয়াল করে দেখো কখনো
সে বিদ্রোহে প্রেম ছিল সম্পূর্ণ
সে বিদ্রোহে তুমিই ছিল আমার জগৎ জুড়ে ।
আমি আজ ক্লান্ত ,
বিদ্রোহের এ পথ এখনো অনেক বাকি
আমার হাত শক্ত করো প্রিয়ে
তোমাকেই তো দিশারী হতে হবে আমার ।
দিশারী , একজন পুরুষের ----
নারীদের জন্য , মানুষের জন্য বিদ্রোহী
একজন সৈনিক পুরুষের ।
বিপ্লব আসে না প্রেমহীনা
ভালোবাসা বিদ্রোহ জাগায়
নিজের বলে কাছে ডাকে নি যাকে
তার জন্য কি জীবন দেওয়া যায় !!
আমি বিদ্রোহী হয়েছি
তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে
নারী যন্ত্রনা , দারিদ্র , মানবিকতা চিনিয়েছে ।
আমি ভালোবেসেছি তোমায়
খাঁটি ভালোবাসা
আর তাই বিপ্লবী পাগল মন বারবার
বেঁচে উঠেছে বিদ্রোহী হয়ে প্রেমে -- মানুষের ।
আমি বিদ্রোহের আগুন দেখেছিলাম
একটা সুপ্ত ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির জীবন্ত রূপ দেখেছিলাম
জীব খাদকের মুখে ।
অবলা , নিরীহ ওরা
মুখে কথা নেই কোন
তাদের রক্তে ধৌত হাসপাতালে
আমি ভুলে ভরা চিকিৎসা দেখেছি প্রতিদিন ।
কসাই আজ ডাক্তারের সমনাম
গানে গানে নচিকথায় শুনেছিলাম
আজ দেখলাম , প্রাণদায়ি ভগবান
দুধের পশু খুন করে , ইমেজ করছে ক্লিন ।
ওদেরও পরিবার আছে , বাড়িতে অপেক্ষা করে কেউ
এমন ভাবনায় প্রয়োজন নেই ঘেউ ঘেউ
তার চেয়ে মানুষ হয়েছি , পৃথিবী আমার
এই রবে চলতে দাও শোরগোল ।
বিদ্রোহ মানে তো শুধুই মানুষের কথা বলা
প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের জন্য পথে নামা
দুই দলের তর্কাতর্কি , রাজনীতি ।
পশুদের জন্য ফাঁকা থাকুক রাজপথ
পশু নিধন হোক শপথ
যতই নিষ্পাপ হোক তার শৈশব ।
আমি বিদ্রোহী সেই মেকি মানুষদের জন্য
যাদের কাছে ষোল শাবকের দাম শূন্য
খুন হয়ে পড়ে থাকে চিকিৎসার মন্দিরে
তারপর নিরুপায় দায় ছুড়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের নামে ।
বলছি কি মশাই ,
প্রশাসন , করপোরেশন এসব তো মানুষের সৃষ্টি
মানবিকতা হারিয়েছি যখন আমরাই
তখন অন্যের গু ঘেঁটে কি লাভ বলুন !!
অস্থির তরঙ্গের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মানুষ । কে যে ভালো আর কে যে কালো আমি জানি না ।
শুধু বুঝেছি যা ছিল অপরাধ , আজ সেটুকুও গ্রহনযোগ্য ।
হতেই পারে সবকিছু এই অপরাধের গোলকে । হতেই পারে কেউ আপন মিথ্যা বলেও
তাদের ওই সামরাজ্যকতায় ।
গল্পের মধ্যে নায়ক কোনদিন ভিলেন হতেই পারে । হতেই পারে
আছোলা বাঁশ গোপনে এসে ঢুকবে তোমার সর্বনেসে ।
হতেই পারে বন্ধু বেসে শত্রুর জয় জয়কার । হতেই পারো তুমি সিঁড়ি অসাধুর
স্বর্গে যাওয়ার ।
এত কিছু হতে পারের মধ্যেও জিততে হবে , বলতে হবে বারবার । নামেতেই যার চৌর্য্য বৃত্তি শোভা পায় ,
রঙের তুলি তাদের কালো নির্লজ্জ মুখেও বাস্তব আর সত্যের ছাপ খুঁজে পেল - হতেও পারে
নদীর বিপুল তরঙ্গে মরা কাঠ আর আবর্জনা ভেসে আসে আগে । সত্যের প্রদীপগুলো সমাধি নেয়
তরঙ্গের গভীরে । তারপর একদিন দিন বদলায় ,,, আকাশের নক্ষত্ররা নির্বাক চোখে দেখে একটা কবিতা
কবিতা
অপরাজিত হয়ে স্রোতের উজান তরঙ্গের বিরূদ্ধে নৌকা বইছে -- কাগজে , কলমে
এক কবি নয় , বিদ্রোহী হয়ে ।
( প্লেটো লিখেছিলেন , "আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের প্রবেশ নিষেধ।" )
আমি বিদ্রোহী হয়েছি তাই যুগ যুগ ধরে
এ রাষ্ট্রের নীতির বিপক্ষে ।
এ রাষ্ট্র বিভীষিকাময় । এ রাষ্ট্র ভন্ড ।
ঢেউয়ের মত এখানে আছড়ে পড়ছে নিরীহ হাহাকার ।
এ রাষ্ট্রে দুটি মুখ - শোষক আর শোষিত
এ রাষ্ট্রে মানুষের অধিকার আন্দোলনেই কেবল সীমাবদ্ধ ।
এ রাষ্ট্র হাতে বিশাল হানটার , গায়ে লোহার বর্ম
চাবুক চলে এখানে নিশিদিন আর হাততালি পড়ে ঢাকতে
ওদের আর্তনাদের শব্দ ।
লেলিন এখানে সুবিধালোভী , মার্ক্স ঘুমায়
ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে
সেফটি ভালভ লাগিয়ে দেশপ্রেমীরা ,
লুটছে এই সোনার দেশ ।
ফেডারেল কাস্ত্রো রাশিয়ায় , চে এখানে তামাশার পাত্র ।
মনে পড়ে এখন শুধু কলম তোমায়
কান্না ঢাকতে বিনয়ের পায়ে গড় করে বলি ,
ফিরিয়ে আনো চাকাটা শেষবার ,
চালিয়ে দাও গলায় শেষবার
তবে স্মৃতিমন্থন শুধু নয় এবার , চাকা ফিরে আসুক সুকান্তের কলমে শেষবারের মতো ।
কিন্তু , কোথায় সে চাকা । সে যে এখন রাজার রথের তলায় ।
হায় রে কবি ! কলম টুকু বাদ গেলোনা
ওখানেও আজ তেল মারামারি আর রাষ্ট্রের বন্দনা
আর কাগজে কাগজে মিথ্যে ভাষা
দি পেন ইস মাইটার দ্যান দি সোর্ড ।
কবিদের মুখ আজ মুখোশময় , রাষ্ট্রের প্রচার যন্ত্র তারা
মোটা টাকা , শরীর , মদ আর মেয়েছেলের সুখ
নেশায় নেশায় বিকিয়ে গেছে ওদের মানবিক রূপ ।
ওরাও আজ রঙ চেনে , দল বোঝে
ওদের হাতেও ঝান্ডার নিশান ।
কিছু যারা সৎ ছিল , তারা পুরষ্কৃত হল একদিন
জেল অথবা মৃত্যুর আলিঙ্গন ।
কৈশোরে আদর্শ রাষ্ট্র পড়েছিলাম অনেক
বইয়ের ই পাতায় পাতায় , মার্ক্স অথবা লেনিনের কলমে
আজ জীবনের যৌবনে দাঁড়িয়ে দেখি
সব ঝুট হ্যায় , শুধু তাবেদারী জিন্দাবাদ লাজহীন শ্রমে ।
মনে পড়ছে সব , ফিরে আসছে চাকাটা
গলার থেকে কিছুটা দূরে আর --
কলমটা পাশে রেখে মাটি দিলাম কবরে
গলাটা কাটা পড়বার কয়েক সেকেন্ড আগে ।
আমি বিদ্রোহী । আমার রক্তের প্রতি কনায় লেখা এই ভাষা ।
একটা গোটা কবিতা । আমি বিদ্রোহী কবিতা ।
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ গেরুয়া ?
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সাদা ?
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সবুজ ?
কে বলে মধ্যের চক্রটা নীল ?
জলের মাছটাকে আঁশ বটির ছোঁয়ায় লাল দেখাচ্ছে
সিঁদুরের রঙ লাল , আমার মায়ের মাথার সিঁদুর
বাবাকে আলাদা করা হয়েছিল বিয়ের রাতেই
তখন থেকেই মায়ের রক্ত ঝরে পড়ে
আঁচলের কোনায় ...
তবু মা আমাদের ভালোবেসে ভাত খেতে দেয়
পায়েস দেয় , সিমুই দেয় , গল্প বলে
নিজের ছেলে পৃথ্বীরাজের , নিজের ছেলে আকবরের , শাহজাহানের , ক্ষুদিরামের
আঁশ বটিটা ধরতে গেলেই মানা করে -- রক্তের ভয় পায়
দাঙ্গার রক্ত , ভাইয়ের রক্তের ।
জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে বুঝেছি
জাতীয় পতাকার রঙ তিন নয় , চার নয় , পাঁচ নয়
পুরো ছয় ----
পঞ্চমটা যদি দাঙ্গার হয় , শহীদের হয়
ষষ্ঠটা ভালোবাসার , ভাতৃত্বের , মানবিকতার ।
আমি বিদ্রোহী । ঠিকই শুনেছেন আমি বিদ্রোহী ।
কিন্তু এই ছ ছ'টি রঙের বাইরে নয় ।
আমার বিদ্রোহী চোখ দেখছে
দেশের মধ্যে জ্বলে ওঠে
স্ফুলিঙ্গ ----
আমি দেখেছি
সরকার গঠনের নামে গজিয়ে ওঠা
লেনদেনি শৃঙ্গ ---
আমি দেখেছি মূর্খ জনতা
ফিরে আসে অসহায়
ব্যালটের যুদ্ধ হেরে ---
আমি দেখেছি চাঁদ এখানে
কবিতা লেখে
নিজের কলঙ্কের অমাবস্যার রাত্তিরে ।
বিপদের ঘন্টা বেজেছে
ঢাক থেকে মাদলের কম্পনে
মানুষ মরেছে মেকি আদর্শে পকেট ভরেনি ,
পেট এর রক্ত মুখ দিয়ে বয়ে গেছে শুধু ।
এখানে প্রতিদিন মিসেছে গঙ্গার স্রোত যমুনার জলে
এখানে প্রতিদিন মরেছে হি-মু , দাঙ্গার কোলাহলে ।
মানুষের আয়ু ক্ষণস্থায়ী , নেতৃত্ব দীর্ঘজীবী
কৃষকের দড়ি ঝুলছে গলায় , শ্রমিকের বৃত্তি ভিখারি প্রভু ।
আমার বিদ্রোহী বন্ধুগণ ,
আর সময় নেই ফ্যাসিবাদ , সাম্যবাদ , মার্কসবাদ বোঝাবার
এখন বিদ্রোহী মন , গর্জে ওঠো ;
নিজেকে করো আদর্শের চেয়ে বলিয়ান ।
পথে পথে ঘুমিয়ে পড়ে সামন্ত্রদের লাশ
আগুনের পরশমনির ছোঁয়ায় জেগে থাকে
স্বপ্নভর্তি আকাশ ।
যৌনতা মারে না আর , বাঁচতে শেখায় অন্ধকার
কলমের ঘোমটার আড়ালে , অধিকাংশেই
ব্যবসায়ের সম্প্রচার ।
একদিকে নিজের সৃষ্টি তুলে দিতে পাঠকের হাতে
লেখক খোঁজে প্রকৃতকে , গ্রহণের কালো প্রভাতে ।
অন্যদিকে ভয়াল বিষ , ফনায় তুলে নেয় যারা
লেখক নামে ব্যবসা ছড়ায় ;
সম্মান ব্যাচে তাদের শিষে সাহিত্যের বসুন্ধরা ।
কেন তাদের মিথ্যা সম্মান প্রদান ?
কেন তাদের এওয়ার্ডে বস্তা ভরা নাম ?
কেন পারে বলতে , কলঙ্ক তোমরা
তোমাদের দুমুখো সৃষ্টি , ছুঁয়ে দেখাও পাপ ।
আমরা ধন্য , গর্বিত তার চেয়ে অনেক অনেক
আজও বেনামি , ছোট লেখক - আমাদের সাথে জড়িয়ে ,
আজও পাঠকদের বন্ধু ভেবে নিই আপন করে
আজও কথা আর কালি থাকে , আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ।
আজও অপেক্ষা করি একটা সেলফি সবার সাথে
আজও অপেক্ষা করি স্বাক্ষর নয়
পরিচয় হবে আড্ডায় আড্ডায় ।
আর ওই বক তপস্বীর হোক সমনাম
কোন সমরেশ অথবা দুঃখের কবিতা বা গান ।
আমি বিদ্রোহী । বিদ্রোহ করি কবিতায় ।
বিদ্রোহ করি সৃষ্টির অস্ত্র হাতে নিয়ে ।
কিন্তু আজ বিদ্রোহ নয় , বরং অনুশোচনা হোক
আজ কবিতার মৃত্যু হয়েছে বইমেলার মাঠজুড়ে ।
বন্ধু , আমি বিদ্রোহী শুধু ।
আমি জানি । আমি সকলের হলেও আমি কারুর নই ।
আমি তোমাদের তবু তোমরা কি পেরেছো আমার হতে
কোনদিন ?
আসলে ,
আমরা সমব্যাথি নই । আমাদের তো ব্যাথা লাগে নি কোথাও ।
যন্ত্রনা হয় নি আমাদের একফোঁটাও
কোন রকম আঘাতে ।
আমরা যন্ত্রনা বলতে এখনো চিনি ,
কাঁটা তারে বল কুড়োতে গিয়ে কেটে যাওয়া
আর ওরা কাঁটা তারের পাশে রাত জেগে থাকে
বোমা কুড়াবে বলে ।
আমরা চাকরি করলে সুখ খুঁজি
আর ওরা দুঃখ জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিদিন
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে ।
একদিকে ভালোবাসার দিবসে আমাদের মধ্যে চলে
প্রেম নিবেদন ।
অন্যদিকে ওরা ভালোবেসে জীবন দিয়ে চলে যায় ।
আমরা তাদের নখের আঘাতটুকু অনুভব করি কখনো
সমব্যাথি হবো আমরা কি করে ?
কিন্তু আমার বন্ধুরা
আমরা মৃত্যু দেখেছি । রক্ত দেখেছি । সহ্যসীমা পার হয়ে গেছে ।
এবার তাই পথে নেমেছি । তান্ডব দেখবো বলে ।
আজ কতটুকু সুরক্ষিত আমরা ? কতটুকু সুরক্ষায় আমাদের সন্তান ? ভোট আসে , ভোট যায়
প্রতিশ্রুতি হাজার বন্যা হয়ে ভাসিয়ে দিয়ে যায়
রাজনৈতিক দল ।
কিন্তু বন্ধু ,
প্রতিশ্রুতি রাখতে দেখলাম না তো কাউকে । উল্টে আমাদের ভোজ্য টুকুও
ওরা খেয়ে এলো জন্মদিনের আড়ালে ।
তাই বন্ধু ,
চলো আজ থেকে নিজেরা বদলে ফেলি নিজেকে
ধর্ম , বর্ণ , জাত ভুলে
চলো আহবান করি একটা সাম্রাজ্যের ।
রক্তবীজ হয়ে ওরা পথে নেমেছে
আমরাও রক্তবীজ নিধন যজ্ঞে নিজেদের
ছিন্নমস্তা গড়ে তুলি ।
বন্ধু , আর কথা নয়
এবার অশুভ সব রক্তপানের সময় হল
আমি বিদ্রোহী , তবে অন্যায়ের সাথে এ যুদ্ধে
আমি হিংস্র , রক্তভোজী একটা জিভ ।
আমি ধর্মের প্রাচীরে অধর্মের গন্ধ পাই
মানুষের মাঝখানে আর ঈশ্বর তাই খুঁজি নাই
আমি পাই ঈশ্বর পাথরের সমাধি স্তূপে
পাই না প্রকৃত মানুষ দাঁড়িয়ে ঈশ্বর রূপে ।
কে হিন্দু ? কে মুসলমান ? কে ইহুদি ? কে ক্রিস্টান
জৈন , বৌদ্ধ , মহান
আমি পাই না দেখতে ভিন্ন মাটির রং
চাপিয়ে বুকে তার কাঁটাতার ।
আমি দেখতে ছুটি সিনেমা , ব্যবসায় মাখা
দেখতে গিয়েও পাই শুধুই দেখা , মুখোশের আড়ালে মানুষের
মুখ ঢেকে থাকা ।
আমি ভেদে নয়, একতার ধৃষ্টতা করি বারবার
দেশ দ্রোহের তকমা মাথায় , করি পৃথিবী প্রতিদিন পারাপার
আমি দেখেছি মানুষ , ঘুমিয়ে আনন্দে কাকের গান শুনে
আমি দেখেছি মানুষ , ফেলে দেয় শিল্পীর আসল শিল্প
নাক ব্যাকানো কেতাবি ঢঙে ।
আমি দেখেছি শ্রমিকের রক্তে রঙিন হয়
সমাজের রেলগাড়ি
মালিকের কালো হাত আমি দেখি করে
গরিবের ঘাম চুরি
তবু নীরব থাকি , চুপচাপ সয়ে যাই ভয়ে
হয়তো হিন্দু বলবে , তুমি কাশভ সন্তান
মুসলিম বলবে , তুমি আল্লাহর সন্তান নয় ।
গঙ্গা জানেন আজও বন্দি
শিবের ওই বুড়ো এলকেশে
লক্ষ্মী জানেন আজও বসে
নারায়নের বৃদ্ধ চরণেতে ।
আর কতদিন স্বাধীন দেশে মানুষের
স্বাধীনতা থাকবে হয়ে এক প্রহসন
আর কতদিন ধরমের আড়ালে মানুষ
সইবে জিহাদি অপমান ।
আর কতবার অবতার আসবে নেমে
মৃত্যুর এই দেশে
আর কতবার গাঁজা টেনে ঘুমাবে যৌবন
বুড়ো শিবের নামের আবেশে ।
অনেক তো হল
অনেক দিন তো পেরিয়ে গেল
একবার তো পরিবর্তন হয়ে যাক ।
আর কতকাল সেই আল্লাহ , সেই ভগবান , সেই যীশু
ভাগ্য বিধাতার পাবে প্রশ্রয় ।
এবার তরুণ রক্তে হোক কোন তরুণ অবতার
না হয় আবার শুনবে তিন বিশ্ব
যুদ্ধের হুংকার ।
লন্ড ভন্ড হয়ে যাক সৃষ্টি
ক্ষোভের আগুনে
সৃষ্টি হোক মঙ্গল , বর্তমান অমঙ্গল ভবনে ।
আগুন জ্বালাও ।
জ্বলে ছারখার হোক বারবার
আসুক নেমে যত ধর্মের যাযাবর আজ
ভীত , সন্ত্রস্ত রূপে
ওই পাথরের মন্দির , মসজিদ , গির্জা ছেড়ে ।
এখানে ক্ষুদিত পাষান শৈশব
পথে পথে খেলা করে
ধুলো বালিময় গোটা শরীর তার ।
কোথায় আজ রাম , কোথায় কৃষ্ণ
কোথায় নবী , মোহাম্মদ অথবা যীশু মহান !!
কে বলবি আয় , আজ বল দেখি
মরছে কে ? কি তাদের পরিচয় ?
ওরা হতে পারে কোন অবতার , শিশুর বেসে
হতে পারে ওদের আড়ালে নারায়ন
এসেছে আবার বামনের ছদ্মবেশে ।
মাঠে যারা খেটে মরছে দিন রাত
হতে পারে ওরা মানুষ নয়
প্রত্যেকে এক একজন জীবন্ত পরশুরামের হাত
হতে পারে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে মরে গেছে অসহায় ভাবে
দেখে আয় কোন বানর এর সেনাদল
ওখানে নেই তো পড়ে !!
ধর্মের পুঁথি শেখায়নি বিভেদ , ধর্ম কোনদিন দেখায়নি ভেদাভেদ
বলেনি তারা হত্যার কথা নিরীহ প্রানের ভক্ষনে
বলেনি তারা এমন সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
পূজতে ওই পাষান মুর্তিটাকে ।
কিছু আঁতেল পোতেলের দল আজ সাধু বেসে
হরণ করেছে মানুষ ধর্মের আবেশে
আমরাও তাদের কথায় হাততালি মেরেছি
ভগবান ছেড়ে তাদের বাণী শ্রেষ্ঠ বলে পুজেছি ।
আগুন জ্বালাও ।
জ্বলে ছারখার হোক বারবার
সেই ব্রাহ্মণ মোল্লা অথবা পাদ্রীর দল
দাবি হোক বারবার মানুষের মুখে ফিরুক আবার
চাই না মনুষ্যত্ব আজ
চাই শুধু একটু দেবত্বের অধিকার ।
বিদ্রোহী হয়ে বন্ধু কোনদিন
শুনেছ তার কথা , পড়েছ তার বাণী
কলি যুগের কলকি তুমি
তোমার কিসের হয়রানি ?
তুমি জেনেছো , কে তুমি ? কি জন্য
মৃত্যুলোকে তোমার আবাহন ?
তুমি কি জেনেছো কখনো
ঈশ্বর সম তেজ লুকিয়ে বসে তোমার ভেতর !
তুমি কি খুঁজেছো কখনো
সকল কেতাবি জ্ঞান বসে একমনে গোপনে
তোমার অন্তরে !
কে এই রাম , কে এই কৃষ্ণ , কে বলরাম
বল দেখি , কে এই ঈসা , কে নানক
কে কবির
আসলে এরাও তোমার মতোই সাধারণ ।
মানুষকে ভালোবেসে
এরাও পৌঁছে নিয়ে গেছে নিজেকে
দেবত্বের মনিকোটরে ।
বন্ধু , মানুষের মধ্যেই বিরাজে যখন
প্রেমের ঠাকুর নারায়ণ
তখন কেন এই হিংসা ? কেন বৃথা রক্তপাত ঝরে ?
হে পাষন্ড , কেন এই দলাদলি ? কিসের ভেদাভেদ
রচনা করিস ?
কে শ্রমিক ? কে মালিক ? কে তবে উন্নত পরিচয়ের ?
সবার শরীরে বইছে একই রক্ত , একই ধমনী জুড়ে
মিলন সকলের একই হৃদয় স্থল ।
জেগে ওঠো ; বজ্র হাতে যুদ্ধের আগে
এই পৃথিবী আজ সাহায্য চায়
নেমে এসো মাঠে , হাতে থাকুক শিক্ষার হাতিয়ার
চলো সবাই শিক্ষিত হই ,
রাজনীতির বেড়া চল দিই ভেঙে চুর চুর
এসো একসাথে গাইবো আজ
মানবতার জয়গান
এক তেজে গড়ব আমরা কৃষ্ণ , শক্তি , হজরত মহান ।
কুরুক্ষেত্রে গীতার পবিত্র শব্দে জেগে উঠেছে চতুর্দিক
কৃষ্ণের সামনে মাথা নামিয়ে বসে পার্থ ; সময়ের গতি আজ স্তব্ধ
গান্ডীব তার মাথা নুইয়েছে দীনদয়ালের শ্রী চরণে ,
রথের সামনে স্বমহিমায় আবির্ভূত স্বয়ং কৃষ্ণ -- শান্ত রূপ ,
মুখে এক অদ্ভুত তেজ ; বললেন এবার ,
" হে পার্থ , ক্রোধের ভার বয়ে চলা এ পৃথিবীর ধর্ম
কিন্তু সেই প্রকৃত স্বাধীন এখানে , যে শত্রুকেও ক্ষমা করতে পারে ;
সেই তো প্রকৃত জ্ঞানী এই মৃত্যুলোকে ||
সময়ের চাকা এগিয়ে চলে যায় ; দিন কেটে রাত নেমে আসে
অন্ধকার সেই ভয়ংকর সময়েও একটা ছোট্ট প্রদীপ বড়ো বড়ো
মানুষকেও পথ দেখিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় || সময় কিন্তু সব দেখেও ফিরে আসে না আর কোনদিন ; এগিয়ে চলে নিজের খেয়ালেই ||
এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মুখের পরিচয় হয় হাজার মুখের ভিড়ে ;
শুধু চিনে নেওয়াটুকুই মূল - কে এখানে আসল আর কে পর ?
ভালোবেসে নিজের করে নিতে পারে কেউ আবার কেউ মুখোশের আড়ালে অভিনয়ের মেডেল পড়তে চায় ||
মোহো নয় পার্থ ; চিনে যাওয়াটুকুই জীবনের লক্ষ্য || মনে রেখো ;
সঙ্গ দোষে কিন্তু লঙ্কা নাশ || "
মাথা নত করা অর্জুনের ; ভগবানের কাছে এবার বিনীত নিবেদন ,
" হে প্রভু , কাম ; ক্রোধ ; লোভ তো ছাড়া যায় ;
কিন্তু এতো দিনের সম্পর্ক , ভালোবাসার বন্ধন -- কি করে ভুলবো এসব ; এবার বলুন , এমন মানুষের কি মুক্তি পাওয়া হয় ? "
ছোট্ট হাসি কৃষ্ণের ঠোটে ভেসে উঠলো একবার ; ভক্তের সংশয় দূর করাই তো ভগবানের কাজ !! বললো নিচু কন্ঠে আবার ,
" মায়ার এই জগতে আমরা সবাই নিদ্রামগ্ন দিনভর ;
জাগলাম যখন , তখন রাত হয়েছে অনেক --
যে সূর্যকে আপন ভেবে খুঁজতে গেলাম ; সে তো ডুবেই গেছে
সেই কবে : তাকে আর খুঁজে কি লাভ ?
সময়ের চাকা এগিয়ে চলে ; দিন কেটে রাত নেমে আসে
সব দেখেও সময় নীরব থাকে ; ফিরে আসে না আর কোনদিন ;
এগিয়ে চলে নিজের খেয়ালেই ||
আমি বিদ্রোহী হয়ে সেই কুরুক্ষেত্র চাই না দেখতে
আমি বিদ্রোহী হয়ে ভিক্ষা করেছি মানুষের দুয়ারে
একজন মানুষ খুঁজে পেতে ।
বিদ্রোহী মানে শুধু রক্তপাত নয় , বিদ্রোহের অপর নাম প্রেম
আমি বিদ্রোহী , আমি চির প্রেমিক হয়ে থাকতে চাই
চাই স্বাধীনতা , চাই মুক্তি , চাই হৃদয়টার গভিরে
তোমার ভালোবাসার রাজদণ্ডে , লিখে রাখা বিপ্লব
মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ।
বন্ধুগন , ভালোবাসি মানুষের কথা বলতে
ভালোবাসি মানুষকে নিয়ে চলতে
বাকি বিদায়ের আগে
বিদ্রোহী এই আমি র অনুরোধ সকলের মধ্যে
ভালো থাকুক নক্ষত্রপুঞ্জ , ভালো থাকুক নতুন গ্যালাক্সি
শুধু দয়া করো পৃথিবী ,আমার নিঃশব্দ সৃষ্টিগুলো
নীরব রেখো , আমি নীরব হয়ে যাবার পরে ।