ও বলেছিল মেঘ ধরে দেবে।
বলেছিল ওর ঝোলায় নাকি মেঘ ধরার ফাঁদ আছে।
গেল বার আশ্বিন মাসে ঠিক দূর্গা পূজার আগের দিন মামনিরা চলে গেল আমেরিকায়।
বলল কোলকাতার পূজো তো প্রতিবার দেখি।
আমি খুব কেঁদেছিলাম।
তখন ও বলেছিল ও আমেরিকান মেঘ ধরে দেবে।
আমি কি বোকা না?
মেঘ আবার ইন্ডিয়ান, আমেরিকান হয় নাকি?
তবু ওর কথায় চুপ করে গেছিলাম।
ও বলেছিল মেঘেরা বেজায় চালাক,
বেগতিক বুঝলে অমনি ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়।
-আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম 'তোমার বৃষ্টি ধরার ফাঁদ নেই'?
-ও বলেছিল 'তা আছে, তবে ধরলেই হবে বৃষ্টি রাখার জায়গা কই'?
-আমি বললাম 'কেন? মামনির আলমারিতে? তা'ও না হলে দিদিভাইয়ের পড়ার তাকে?'
-ও বলল 'ধুর পাগল, বৃষ্টি আলমারিতেও থাকে না আর বইয়ের তাকেও না।
বৃষ্টি থাকে তোমর পায়ের নূপুরে।
তুমি যখন গোটা বাড়ি দৌড়ে বেড়াও, তখন সেই তালে তালে বৃষ্টিরা নাচ করে।
-আমি বললাম 'আমার নূপুরটাতো হারিয়ে গেছে'
ও কিছু বলল না।
-আমি আবার জিজ্ঞাস করলাম 'তাহলে মেঘ রাখব কোথায়?'
ও তা'ও কিছু বলল না।


তারপর অনেক দিন ও এল না।
আমি আবার কাঁদলাম,
এবার কাঁদলাম ওর জন্য।
তবু ও এল না।


তারপর একদিন শীতের শেষ বিকালে ওকে দেখতে পেলাম খেলার মাঠে।
-চিৎকার করে ডাকলাম 'ঐ মেঘধরা! ঐ মেঘধরা!'
ও কাছে এল।
-আমি বললাম 'তুমি যে ভারী বলেছিলে আমেরিকান মেঘ ধরে দেবে'
হালকা হাসল খালি, জবাব দিল না।
-আমি আবার বললাম 'তুমি বললে না'তো মেঘেদের কোথায় রাখব। তুমি মেঘও ধরে দিলে না। তুমি খুব বাজে'
এবারও হাসল খালি।
আমি খুব কাঁদালাম।
ও আমার পায়ের কাছে বসল,
ঝোলা থেকে বার করে একটা নূপুর পরিয়ে দিল পায়ে।
-বললে 'তোমার হারিয়ে যাওয়া নূপুরটা খূঁজে পেতে বড্ড দেরি হয়ে গেল।'
-আমি বললাম 'কোথায় পেলে?'
-'ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী ভাগ্যে রাস্তাটা বলে দিল। কিন্তু ঘ্যাঘাসুরের ঘরে ঘটল বিপদ'
-'কী?'
-'ঘ্যাঘার মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে বলে জেদ ধরল'
-'তার মানে তুমি বিয়ে করে নিলে?'
-'লগ্ন শুভ, সেই লগ্নেই এসেছি পালিয়ে'
-'মিথ্যেবাদী, মোটেও বিশ্বাস করি না তোমায়, তুমি মিথ্যা করে বলেছিলে আমায় মেঘ ধরে দেবে।'
-'মেঘ তো ধরেছিলাম, কিন্তু তারপর বুঝলাম মেঘের স্তব্ধতা তোমাকে মানায় না।
আমি আমার রক্তে রক্তে তোমার নূপুরের ঝংকার শুনি।
আমার প্রত্যেক নিঃশ্বাসে শুনি বৃষ্টির কলরব।
এই দুই আওয়াজ আমায় ঘুম কেড়ে নিয়েছে যুগে যুগে।
আমি কি তাদের এক না করে পারি?'
-'তাহলে ঘ্যাঘার মেয়ে? ওর কি হবে'
-'ওকে আমেরিকান মেঘ ধরে দিয়েছি। তোমার জন্য চেরাপুঞ্জীর বৃষ্টি।
এই বৃষ্টি বেঁধে দিলাম তোমার পায়ে।
আমার বুকের সাহারা জুড়ে অনেক বার মেঘ করছে।
কিন্তু আমি শত শত বছর ধরে শুধুই বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।'


ও বলেছিল মেঘ ধরে দেবে।
বলেছিল ওর ঝোলায় নাকি মেঘ ধরার ফাঁদ আছে।


সকাল বেলা আমার নূপুরের আওয়াজে ওর ঘুম ভেঙে গেল।
বাইরে অঝোরে বাইশে শ্রাবণের বৃষ্টি।
আকাশবাণীর সকালের অনুষ্ঠানের শেষ গান
"এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়..."।