সে আমার গ্রাম্যবেলা
আমি তখন সহজপাঠ,
ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা
খানিক পড়া খানিক খেলা,
তারপরেতে মেঠো পথে
স্কুলের পথে চলা।
সব কটা বই স্কুল বক্সে,
প্রতিটি পাতাই দুলে দুলে পড়া
সকাল অথবা সন্ধ্যে বেলা,
সে আমার গ্রাম্যবেলা।  
মাটির বাড়ির উঠোনেতে
ছোট্ট ফুলের বাগান গড়া,
কাঞ্চন জবা শিউলি বেলা
আমার সাথে করত খেলা।
সে আমার বালতি খানা জলে ভরে
গাছের পাতায় জল দেওয়া,
জামাটা হত জলে ধূলায়
প্রতিটি বিকেল বেলা
সে আমার গ্রাম্যবেলা।
সে ছিল আমার অনেক কষ্টে ফড়িং ধরে,
একটু খানি আদর করে
আবার আকাশে উড়িয়ে দেওয়া।
বারান্দায় চেয়ার থেকে হাত বাড়িয়ে
কড়ি কাঠে বাসা বাঁধা পাখীর ছানায়
আলতো আলতো ছোঁয়া।
স্কুল থেকে ফিরে কোনো মতে খেয়ে
কাদার দলা সাথে নিয়ে
থালা বাটি গ্লাস গড়া।
সে আমার ছোট্ট বেলার
ধুলো দিয়ে ভাত রাঁধার খেলা,
সে আমার গ্রাম্যবেলা।
ঠাকুমার কোলে দুপুর বেলা
গানের দু-কলি শুনতে শুনতে
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়া।
সে ছিল আমার উঁচু নিচু পথ চলতে গিয়ে
বার বার স্লেট ভাঙা
কাদা মাটির পাত্র গুলি
রোদ্দুরে তা শুকতে দিয়ে
ক্ষণিকে ক্ষণিকে উল্টে দেখা।
পূজোর মেলায় দাদুর কড়ে আঙ্গুল ধরে,
পুতুল কেনার বায়না করে,
উচ্চৈ স্বরে কান্না জুড়ে দেওয়া,
সে ছিল মজার মেলা
সে আমার গ্রাম্যবেলা।
একটু খানি বকত যদি মা
এক ছুটেতে দাদুর কোলে
করেছি মায়ের নামে
কতনা মিথ্যে অভিযোগ আমায় নিয়ে।
সে ছিল দাদু ঠাকুমার কাছে
এমনি এমনি মায়ের বকা খাওয়া।
আজও মনে পড়ে
ঠাকুমার পুরনো শাড়ি পরে
মাথায় বড় ঘোমটা টেনে
আমি তখন পুতুলের মা,  
দিয়েছি তার বিয়ে।
বুঝেছি আজ সে ছিল শুধুই খেলা
সে আমার গ্রাম্যবেলা।
আজও আছে দাদু ঠাকুমার কোল,
আজও আছি আমি
এখনো রয়েছে সেই সে বাগান খানা,
আর আছে পুকুরের পাড়ে
রাশ রাশ কাদা মাটি,
আজ শুধু নেই সেই
গ্রাম্যবেলার একফালি শিশুমন।